কক্সবাজার জেলা ডিবি অফিসে একটানা তিন বছর ধরে কর্মরত সহকারী পরিদর্শক (এস,আই) ইমন চৌধুরী রয়েছেন বহাল তবিয়তে। অব্যাহত ইয়াবা পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিবি ওসি) সহ যে ১১ জন পুলিশের কর্মকর্তাকে একযোগে বদলী করা হয়েছে তাদের কেউই এস,আই ইমন চৌধুরীর মত এত দীর্ঘকালীন সময় ধরে একই স্থানে চাকুরি করেননি। অথচ তাকে বদলি করা হয়নি। এ কারনে গতকাল সারাদিনই লোকেমুখে প্রশ্ন ছিল-এস,আই ইমন চৌধুরীর খুঁটির জোর কোথায় ? তদুপরি ডিবি অফিসে সরকারি পদায়নের বাইরে এত বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তার পোষ্টিং নিয়েও নানা কথা উঠেছে। কক্সবাজারের ডিবি অফিস মানেই এখন সবাই বলে-মধুর ঘরা (মধুর কলসী)। এই ডিবি অফিসের পোষ্টিং নেয়ার জন্য দৌঁড়ঝাপ চলছেই।
ফেণীর লালপুরে গত শনিবার রাতে র্যাবের হাতে ৬ লাখ ৮০ হাজার পিচ ইয়াবা সহ উপ সহকারি পুলিশ পরিদর্শক (এ,এস,আই) মাহফুজকে আটকের পর পরই কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি দেওয়ান আবুল হোসেন সহ পুলিশের ১১ জন দারোগাকে বদলি করা হয়েছে। সেই সাথে ফেণীর ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কক্সবাজার ডিবি অফিসের বহুল আলোচিত উপ পরিদর্শক (এস,আই) বিল্লাল হোসেন প্রকাশ বেলাল দারোগা (সাময়িক বরখাস্ত) ফেণীতে বদলী করা হয়েছে। টেকনাফের হ্নীলার নুরুল কবির নামের একজন ইয়াবা পাচারকারীকে ধরে ক্রস ফায়ার দেয়ার হুমকি দিয়ে ৬ লাখ টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগে টেকনাফ থানার এ.এস.আই সেলিম উদ্দিনকেও বদলি করা হয়েছে। উক্ত সেলিম উদ্দিনকে ইতোমধ্যে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।
এদিকে কক্সবাজার ডিবি অফিসের ৬ জন সাব ইন্সপেক্টরের মধ্যে ইতিমধ্যে ৫ জনকে অন্যত্র বদলি করা হলেও ইমন চৌধুরী নামের দীর্ঘদিনের দারোগাকে কেন বদলি করা হলনা তা নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাস্য সৃষ্টি হয়েছে। ইমন চৌধুরী নামের এই দারোগা কক্সবাজার সদর থানায় ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ‘মধুর ঘরা’ নামে পরিচিত কক্সবাজার ডিবি অফিসে সেকেন্ড অফিসার হিসাবে পেষ্টিং বাগিয়ে নিয়ে থেকে যান। অথচ ডিবি অফিসে মাত্র ৭ মাসের মাথায় ডিবি ওসি দেওয়ান আবুল হোসেন, এস,আই আমিরুল ইসলাম কে ২ বছরের মাথায়, এস,আই মনিরুল ইসলামকে এক বছরের মাথায়, একরামুলকে ১০ মাসের মাথায়, কামাল আব্বাসকে ৯ মাসের মাথায় ও বিল্লালকে ৪ মাসের মাথায় বদলি করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ডিবি অফিসের সেকেন্ড অফিসার ইমন চৌধুরীর ক্ষমতার দাপট ব্যাপক। অফিসের কর্মকর্তা ও কনষ্টেবলদের যাবতীয় দৈনিক হিসাবে তার নিকট পেশ করতে হয়। তারপরই ভাগাভাগি হয়। বেশ কয়েক মাস আগে ইমন চৌধুরীর বদলির অর্ডার হয় রাংগামাটিতে। কিন্তু তিনি সেখানে যোগদান করা থেকে বিরত থাকেন। পরবর্তীতে মহেশখালীতে বদলির অর্ডার হলেও সেখানেও তিনি যোগদান করেননি। গতকাল তার সাথে যোগাযোগ করা হলে ইমন চৌধুরী বলেন-‘ভাই আমাকে একটু সুযোগ দেন। আমি মহেশখালীতে যোগদান করব। সকল কর্মকর্তার বদলি জেলার বাইরে হলেও তার বদলি মহেশখালীতে হবার রহস্য জানতে চাইলে তিনি বলেন-তাহলে আমাকে এক সপ্তাহ সময় দেন আমিও তদবির করে জেলার বাইরে চলে যাব।’
অভিযোগ উঠেছে. চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা ইমন চৌধুরী কক্সবাজার ডিবি অফিসে ইয়াবার বদৌলতে এখন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। তার নিজস্ব রয়েছে দামি মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান ও অরো অন্যান্য ব্যবসা। সেই সাথে তিনি কক্সবাজারের কলাতলির বিতর্কিত ভুমিদস্যু হিসাবে পরিচিত ইলিয়াস সওদাগরের নিকট থেকে বিরোধপূর্ণ জমিও কিনে নিয়েছেন। তবে গতরাতে এ বিষয়ে তিনি বলেন-‘কই ভাই ব্যবসা-ট্যাবসা তেমন নেই জমিও নেয়া হয়নি।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।