গোল করার পর দু’হাত বাড়িয়ে উল্লাস। চিৎকার করে যেন জানাতে চান, ‘আমি এসেছি। ঢাকার মাঠ কাঁপাতেই আমার প্রত্যাবর্তন।’ প্রিমিয়ার লীগে হরহামেশাই এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে চট্টগ্রাম আবাহনীর ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে। তবে এ বছর কক্সবাজারের এই তরুণের নতুন ঠিকানা সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। শুধু ইব্রাহিমই নন, ঢাকার মাঠে এবার খেলছেন কক্সবাজারের প্রায় অর্ধশত ফুটবলার।
একটা সময় ছিল, যখন কক্সবাজারের পাড়া, মহল্লা ও শহরে ফুটবল টুর্নামেন্টের জমজমাট আসর বসত। টইটম্বুর গ্যালারির দর্শকের স্লোগানে প্রকম্পিত হতো স্টেডিয়াম। জনপ্রিয়তা থাকলেও বর্তমানে এ জেলায় ফুটবলের সেই জৌলুস এখন নেই বললেই চলে। তাই ফুটবল নিয়ে এখানকার কারও আর মাতামাতি নেই। তারপরও থেমে নেই ফুটবলে প্রতিভা বিকাশের পথ। কক্সবাজারের অর্ধশত ফুটবলার ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে সবুজ, দিদার, আবছার, ইব্রাহিম, জিকু, কৌশিক, মাসুদ বাংলাদেশ জাতীয় দল ও অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলে বর্তমানে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এছাড়া মনির, সাঈফ, আরাফাত, রবিরা খেলছেন দেশের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে। আর এ ফুটবল খেলেই কোটি টাকা আয় করছেন কক্সবাজারের ছেলেরা। কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার লীগের অন্যতম সেরা দলের হয়ে খেলবেন কক্সবাজারের ১১ ফুটবলার। পারিশ্রমিক হিসেবে পাচ্ছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা।
দেশীয় ফুটবলে এ মৌসুমে দলবদলে আলোচিত নাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম। দেশীয় ফুটবলের নতুন সেনসেশন এবারের মৌসুমে ৩৫ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন নবাগত সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে, যা স্বাধীনতা পরবর্তী কক্সবাজারের ফুটবলের ইতিহাস এবং একজন ফুটবলারের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের চুক্তিও বটে। হাল আমলের আরেক তারকা ফুটবলার অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলের গোলকিপার কক্সবাজারের আনিসুর রহমান জিকুকে ১৫ লাখ টাকায় দলে ভিড়িয়েছে সাইফ পাওয়ার টেক।
জাতীয় দলের তারকা স্ট্রাইকার মহেশখালীর সবুজ ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ছেড়ে ৩০ লাখ টাকায় এবার যোগ দিয়েছেন বি’লীগের গেলবারের রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহনীতে। তার সঙ্গে একই দলে গড়ে ১০ লাখ টাকাসহ আরও সুযোগ-সুবিধার চুক্তিতে জায়গা করে নিয়েছেন কক্সবাজারের অন্য তিন ফুটবলার সুশান্ত ত্রিপুরা, চৌমিন রাখাইন ও কৌশিক বড়–য়া। বর্তমান লীগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীতে যোগ দিয়েছেন জাতীয় ফুটবলার রামুর দিদার। ক্ষিপ্রগতির এ ফুটবলার ১৫ লাখ টাকা পাচ্ছেন। পেশাদার লীগের অন্যতম শিরোপাপ্রত্যাশী দল শেখ জামালের তাঁবুতে গেছেন দুই মিডফিল্ডার আবছার ও মাসহুদ। দু’জনের দলবদলে বাজারদর উঠেছিল ১৫ লাখ টাকা। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে ঠিকানা গেড়েছেন পর্যটন শহরের দুই ফুটবলার ডিফেন্ডার মনির ও মিডফিল্ডার মতিউর। প্রতিশ্রুতিশীল এ দুই ফুটবলার পাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা করে। গত মৌসুমে মাঠ মাতানো কক্সবাজারের তিন ফুটবলার জাহেদ, মনসুর ও দিদার চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলবেন। এছাড়াও প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে বিভিন্ন দলের হয়ে এবার ঢাকার মাঠ মাতাবেন সাইফুল, জয়, রুবেল, সাকের উল্লাহ, সাইফ, মিনহাজ, শামীম, বাদশা, ভুট্টো, সালাউদ্দিন, রফিক, সোহেল, রবির মতো কক্সবাজারের একঝাঁক প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার।
প্রিমিয়ার লীগের গত মৌসুমে ছয়টি দলে কক্সবাজারের ১৪ তারকা ফুটবলার অংশ নেন। তারা হলেন- বিগ বাজেটের দল চট্টগ্রাম আবাহনীতে চকরিয়ার মালুমঘাটের তরুণ তুর্কি ইব্রাহিম, রামুর কৌশিক বড়–য়া, ডুলাহাজারার জিকু ও কক্সবাজারের মনসুর। ঢাকার মাঠের অন্যতম জায়ান্ট কিলার রহমতগঞ্জে খেলেন ডুলাহাজারার আবছার, রামুর দুই সহোদর দিদার, জাহাঙ্গীর ও চকরিয়ার কাকারার মাসুদ। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানের সাদা-কালো জার্সিতে অধিনায়কত্ব করেন মহেশখালীর সবুজ। বিপিএলের আরেক দল ফেনী সকারে খেলেন সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডীর চৌমিন রাখাইন, মালুমঘাটের সুশান্ত ত্রিপুরা। আরামবাগে খেলেন কক্সবাজার শহরের জাহেদ। এছাড়া বারিধারায় ডিফেন্স লাইনে ছিলেন মহেশখালীর মনির আলম মনির।
অন্যদিকে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে কক্সবাজারের ১৩ ফুটবলার খেলেছিলেন। তারা হলেন- মতিউর (অগ্রণী ব্যাংক), সাগর ও আরিফ (সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব), জমির, শেফায়েত, রিদুয়ান (চট্টগ্রাম মোহামেডান), রুবেল (ফকিরাপুল) সাঈফ (ভিক্টোরিয়া), মহি উদ্দিন, বাপ্পি (কারওয়ান বাজার), রবি (বাংলাদেশ পুলিশ)। তাছাড়া ঢাকার প্রথম বিভাগে নিয়মিত খেলছেন কক্সবাজারের মুকুট, সোহেল বড়–য়া, জয়, সাইফুল, আরিফ, মিনহাজ ও ভুট্টো। ঢাকার দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে খেলছেন বাদশা, ফয়সাল, মেসি, জুসেল, বাংলা সোহেল ও সাকের।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।