কক্সবাজার সময় ডেস্কঃ মিয়ানমারের বলিবাজার থেকে আসা লায়লা বেগম (৫০) আশ্রয় পেয়েছেন উখিয়ার কুতুপালং এলাকায়। বাঁশের মাচার ওপর ত্রিপল খাটিয়ে বানিয়েছেন ঘর। সেই ঘরের দরজায় বসেছিলেন এই রোহিঙ্গা নারী। কোলে তিন বছরের নাতনি সনজিদা।
শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা। অসহ্য যন্ত্রণা। কষ্ট সইতে না পেরে কাঁদছিল চর্মরোগে আক্রান্ত শিশুটি।
লায়লা বেগম বলেন, ‘গোসল গরাইত ন পারি। বেডাঅল দূরে যায় যায় পত্যুদিন গরে। আঁরা পুয়াঅলরে লই তিনদিন পর এব্বার গরি।’ (গোসল করাতে পারি না। পুরুষরা দূরে গিয়ে প্রতিদিন গোসল করে। আমরা নারী এবং শিশুরা তিনদিনে একবার গোসল করি। )
এভাবেই তিনদিন পর একবার গোসল করে দিন কাটছে কুতুপালং এলাকায় অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নারী ও শিশুদের। তবে এই চিত্র শুধু কুতুপালংয়ের নয়। নতুন আসা রোহিঙ্গারা যেসব জায়গায় বসতি গড়েছেন, কমবেশি সবখানের চিত্র এটিই।
দুই মাস আগে বিয়ে হওয়া জয়নাব বেগমের (১৯) হাতের মেহেদির রঙ এখনো শুকায়নি। ৭ দিন হেঁটে মিয়ানমারের মংডু জেলার হোয়াইক্যং থেকে বাংলাদেশে আসে জয়নাব ও তার স্বামী খালেদ হোসেন। ৫ দিন আগে তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে ঢোকার পর তারা এখন আছে বালুখালীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে।
জয়নাব বলেন, ৫ দিন হলো এসেছি। এখনো একবারও গোসল করতে পারিনি।
অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আশপাশে ব্র্যাক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন কিছু টিউবওয়েল বসিয়েছে। তবে এর অধিকাংশই সড়কের ধারে হওয়ায় পাহাড়ের ওপর কিংবা দূর থেকে নারীরা সেখানে গোসলের জন্য আসতে আগ্রহী নন।
মিয়ানমারের মংডু জেলার ধুমবাই থেকে এসে বালুখালী এলাকায় আশ্রয় নেওয়া আরাফা বেগম বলেন, প্রতিদিন গোসল করতে পারি না। অনেক দূরে যেতে হয়। আর টিউবওয়েলগুলো সবসময় পুরুষরা ভিড় করে রাখে। সেজন্য গোসল করতে পারি না।
মিয়ানমারের পোয়াখালী থেকে এসে কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেওয়া তাসমিনা বলেন, ৫ ফিতার একটি ঘরে ৬ জন গাদাগাদি করে থাকি। জামাই গোসল করে আসার সময় কিছু পানি নিয়ে আসে। সেগুলো থেকে বাচ্চাদের মাথায় পানি দিই। তা-ও তিন-চারদিন পরপর।
‘এখানে কাছে তো কোন পুকুর নাই। খালও দূরে। আর খালের পানি ময়লা। আমরা কোথায় গোসল করব ?’ বলেন তাসমিনা
তাসমিনার স্বামী খায়ের মোহাম্মদ বলেন, আমার ছেলেগুলোর আঙ্গুলের গোড়ায় গোড়ায় ঘা হয়ে গেছে। প্রত্যেক ঘরে এখানে চর্মরোগ হচ্ছে।
রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে চর্মরোগ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা.শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ঠিকমতো গোসল করতে পারছে না, আবার একটা তাঁবুর নিচে ১০-১২ জন গাদাগাদি করে থাকছে। চর্মরোগ যেহেতু সংক্রামক, সেটা অনেক শিশুর মধ্যে হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখাটাও একটা বড় সমস্যা।
রোহিঙ্গাদের সেবায় কক্সবাজারে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা আদ্-দ্বীন হাসপাতালের পরিচালক ডা.নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, চর্মরোগের এই ঝুঁকি যে শুধু শিশুদের মধ্যে আছে তা নয়, ঠিকমতো গোসল করতে না পারলে, শরীর পরিচ্ছন্ন রাখতে না পারলে নারীদের মধ্যেও এটার সংক্রমণ হবে। এবং প্রথমে নিজের ঘরের সব সদস্য, আস্তে আস্তে সবখানে ছড়িয়ে পড়বে।
সূত্র- বাংলানিউজ
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।