ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের তোপের মুখে পড়লেন সংগঠনের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। সংগঠনের নেতাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য, সংগঠন পরিচালনায় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনসহ একগাদা অভিযোগও করা হয় সভায়। জানতে চাওয়া হয়েছে, বিবাহিতদের কেন পদে রাখা হয়েছে? বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রাপ্য সম্মান না দেয়া নিয়েও প্রশ্ন রাখা হয়।
সোমবার রাতে বুয়েট মিলনায়তনে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় মধ্যম সারির নেতারা যখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন হাততালি দিয়ে অন্যরা সমর্থন জানাচ্ছিলেন। সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সূত্র বলছে, তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের বক্তব্যে অনেক প্রশ্নের উত্তরই এড়িয়ে গেছেন। অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে দিয়ে গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়েছেন। জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান রনি বলেন, আমরা বলা চেষ্টা করেছি- সংগঠন পরিচালনায় গঠনতন্ত্র মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মাসিক সাধারণ সভা হওয়ার কথা, সেটি হয় না। দেশের বিভিন্ন ইউনিটে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি হয় না। যেসব জায়গায় কমিটি হয়েছে- তা পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, বৈঠকে আরও বলেছি- ছাত্রদের অধিকারের রাজনীতি করতে হবে। সবাইকে প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। বলেছি, আপনাদের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য রয়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য মেনে নেয়া গেলেও রাজনৈতিক বৈষম্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
সভায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খানের বক্তব্য ছিল- ছাত্রলীগকে একটি পরিবার বলা হয়। কিন্তু আপনাদের আচার-আচরণে আমরা তা বুঝতে পারি না। যদি এক পরিবার হয়ে থাকি তাহলে আপনাদের সঙ্গে আমাদের বৈষম্য কেন? সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনা করা মানে সংগঠনের সমালোচনা করা নয়। সভায় চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের ইরান নামের এক নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, কেবল সেই ইউনিট থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রে ৪০ সদস্য করা হয়েছে। এভাবে হলে চলবে কীভাবে?
সহসভাপতি আদিত্য নন্দী বলেন, কেন্দ্রের যে নেতার বাড়ি যে জেলায়, তাকে সেই এলাকায় রাজনীতি করতে ফ্লোর দেয়া হয় না। এছাড়া বিবাহিতদের কেন সংগঠনের পদে রাখা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ঠিক কতটি বিয়ে করলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পদধারী হওয়া যাবে না?’ তিনি জানান, বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত যেসব কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন তাদের পরামর্শ নেয়া হয় না।
এ বিষয়ে সহসভাপতি মাকসুদ রানা মিঠু বলেন, সভাপতিকে উদ্দেশ করে বলেছি- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিতে কেবল বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর থাকে। অথচ আগে হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরও স্বাক্ষর থাকত। এমন হচ্ছে কেন? এছাড়া সংগঠনের বিশেষ তিনটি ইউনিটকে কেন আলাদা গুরুত্ব দেয়া হয় সেই বিষয়েও জানতে চেয়েছি। এছাড়া এছাড়া অতীতে সংগঠনের কোনো পর্যায়ে পদ ছিল না, পরে সরাসরি কেন্দ্রে পদ পেয়েছেন, এমন অনেক সাংবাদিকের বিষয়েও প্রশ্ন করেন তিনি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, বর্ধিত সভায় আমরা নেতাদের সব কথা শুনেছি। তাদের মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগ কাজ করে যাবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের গুরুত্ব দেয়া হয় না- এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের সবসময় গুরুত্ব দেয়া হয়, ভবিষ্যতেও হবে। সাধারণ সভার বিষয়ে তিনি বলেন, দুই মাস অন্তর সাধারণ সভা হওয়ার কথা। এটা আমরা নিয়মিত করি। এ পর্যন্ত ৮টি সাধারণ সভা হয়েছে। বিবাহিতদের পদ থেকে সরানো হবে বলেও জানান তিনি। বৈষম্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন বলেন, ছাত্রলীগ অনেক বড় একটি পরিবার। এই পরিবারের কোনো সদস্যের যদি অন্য কারও ওপরে অভিযোগ থাকে তাহলে সে অবশ্যই তা বলবে। এই বলাটাই ছাত্রলীগের সৌন্দর্য। তারা বলবে, পরামর্শ দেবে আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
সূত্র- যুগান্তর
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।