কক্সবাজারের মেরিনড্রাইভ সংলগ্ন দরিয়ানগর হিমছড়ির বনপাহাড়ে এখনও নেভেনি দাবানল। বন বিভাগ, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও দমকল বাহিনী দাবানল নেভাতে চালাচ্ছে লড়াই। দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা।
এখনও নির্বাপিত হয়নি এ দাবানল। গত ৮ এপ্রিল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এই আগুন লেগেছিল। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের কক্সবাজার রেঞ্জাধীন কলাতলির বনবিটের অধীনে দরিয়ানগর ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পের কাছাকাছি বন পাহাড়ে গতকাল বুধবার আগুন লাগে। সেই সময় রুটিনমাফিক টহলে বেরিয়েছিলেন বনকর্মীরা। তাঁরাই জঙ্গলের ভিতরে ধোঁয়া উড়তে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আগুন নেভানোর কাজ। কক্সবাজার থানা পুলিশ, বন বিভাগ, সেনাবাহিনী (১৭ইসিবি) ও দমকল বাহিনী বিকাল ৫টা থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
একদিকে দাবানল নেভানোর চেষ্টা, অন্যদিকে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় আশে পাশের লোকালয়ের মানুষ চরম আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মেরিনড্রাইভ সংলগ্ন অধিবাসীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক।
কক্সবাজার দমকল বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, দরিয়া নগর হিমছড়ি এলাকায় জঙ্গলের ভিতরে অন্তত বিশ থেকে ত্রিশ একর বনপাহাড় জুড়ে এই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দমকল বাহিনীর ৪টি পানির ট্যাংকার দিয়ে আগুন আয়ত্তে আনার পাশাপাশি পানি ছিটানো হচ্ছে। তবে বুধবার রাতের মধ্যেই আগুনের ভয়াবহতা কমাতে সক্ষম হবে বন বিভাগ, পুলিশ, সেনা ও দমকল বাহিনী। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই দাবানল পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।
দক্ষিণ বন বিভাগের কক্সবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস ধর জানান, অন্তত ২০/৩০ একর জঙ্গল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখনো বনাঞ্চল জ্বলছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যৌথবাহিনী চেষ্টা চালিয়ে দরিয়ানগরের উত্তরাংশের আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে। দরিয়ানগরের দক্ষিণাংশের হিমছড়ি এলাকা গুলোর আগুন বুধবার রাতের ভিতর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আনা না গেলে বড় বিপর্যয় হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল আলম, নজির আলম, ছৈয়দ আলম লেডু, নাছিরউদ্দিন, নুরুল আবছার, নুরুল হাকিম জানান, দাবানলের কারণে মানুষ ও বাড়িঘর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দ্রুত আগুন নিভানোর চেষ্টার ত্র“টি রাখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল সরকার জানিয়েছেন, কলাতলি বন বিটের অধীনস্থ কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন বনপাহাড় গুলো একটু উচু। সাগর তীরবর্তী হওয়ায় পাহাড়ের খাদে খাদে পানির জলীয়বাস্ফ জমে। শীতকালে তাতে গাছের পাতা ঝরে পড়ে অর্ধপচিত পাতার স্তর তৈরি হয়। এই স্তরের ভাঁজে ভাঁজে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। দিনের বেলা সূর্যের প্রখর তাপে মিথেন গ্যাসে আগুন ধরে যায়। এলাকাটি ছনখোলা বেষ্টিত হওয়ায় বাতাসের তোড়ে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে জঙ্গলে।
তিনি দাবী করেন, এ ধরনের আগুনের বৈশিষ্ট্য হল, প্রথম থেকেই দাউদাউ করে জ্বলে না। শুরুতে পাতার স্তরের নীচ দিয়ে আগুন ছড়াতে থাকে। তার পর গাছের কাণ্ড ধরে সেই আগুন ওপর দিকে উঠতে শুরু করে। ঘটনাস্থলের আশপাশে পানির ভালো উৎস থাকায় দাবানল নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে না।
কলাতলি বন বিট কর্মকর্তা জানান, দরিয়ানগর ও হিমছড়ি পাহাড়ী এলাকা গুলো দাবানল-প্রবণ এলাকা। হঠাৎই এখানে আগুন লাগে। তবে এমনও ধারনা করা হচ্ছে পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহকারী, ছনখোলা চাষী অথবা পর্যটকরা এ আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে। এ দাবানলে কোনও জন্তু-জানোয়ার মারা যায়নি বলে জানান তিনি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।