নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের একমাত্র অস্থায়ী বাস স্টেশনের কর্তৃত্ব নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামুর দুই পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। শনিবার সকাল থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের জারুলিয়াছড়ি স্টিল ব্রিজ থেকে এক পক্ষ অপর পক্ষকে নিজেদের সড়ক দাবী করে ছাড় দিচ্ছেনা। এতে করে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। যে কোন সময় পরিবহণ শ্রমিকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংখা করছেন স্থানীয়রা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, কক্সবাজার অটো রিক্সা, টেম্পু, সিএনজি, মাহিন্দ্রা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি: নং- ১৪৯১) নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে তাদের অধীনে পরিবহন চলাচল করে আসছিল দীর্ঘকাল ধরে। সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়িতে ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম সিএনজি, অটো রিক্সা, টেম্পু, ফোর স্টার, থ্রি হুইলার মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ (রেজি: নং- বি-২০৪৪) নামে আরও একটি শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: লাভ করে। ১মে থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ শ্রমিক ইউনিয়নটি নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের বাস স্টেশনের কর্তৃত্ব নেয়। এর পর থেকে শুরু হয় পার্শ্ববর্তী দুই উপজেলার দুটি শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনা।
জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ যাবত রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির দুটি শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় উভয় পক্ষের শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠকে বসে পুলিশ। বৈঠকে আগামীকাল (৪মে) পর্যন্ত রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির দুইটি শ্রমিক ইউনিয়ন নিজ নিজ স্টেশন এলাকায় কোন ধরনের স্টেশন ফি গ্রহণ না করার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু এরই মধ্যে শনিবার সকাল থেকে পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই রামু পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে তাদের যানচলাচল জারুলিয়াছড়ি স্টিল ব্রিজ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। ফলে নাইক্ষ্যংছড়ি ও বৃহত্তর কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার যাত্রী চরম দূর্ভোগে পড়ে। তবে নাইক্ষ্যংছড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যাত্রীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবী করেন। এ সড়কের নিয়মিত যাত্রী মো: সেলিম, মোস্তাক আহাম্মদ, শহিদ এ প্রতিবেদককে জানান, এমনিতেই দীর্ঘদিন যাবত পরিবহণ শ্রমিকদের কাছে যাত্রীরা জিম্মী হয়ে আছে। তারমধ্যে দুই শ্রমিক ইউনিয়নের কর্তৃত্ব আদায় নিয়ে আমাদের মত সাধারণ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পাশাপাশি গাড়ি পরিবর্তনের কারনে তাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রামু শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: ছৈয়দ ও সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের শ্রমিক ইউনিয়ন ১৯৯১ সাল থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে যাত্রী সেবা দিচ্ছে। বর্তমানে এ সমিতির প্রায় নয় শতাধিক শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে তারা। এসব শ্রমিকদের ভিন্ন কোন সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করার কথা নয়। এসময় তারা নাইক্ষ্যংছড়ি পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন কর্তৃক তাদের সদস্যদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও মারধরের অভিযোগ করেন।
অপরদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদু রহমান ও প্রচার সম্পাদক মো: আলী আক্তার জানান, শ্রম আইনের আওতাধীন শ্রম অধিদপ্তর থেকে চালক গভ: রেজি: বি-২০৪৪ এবং মালিক সমিতি রেজি: নং- ২২৩০ এর অধীনে থাকা ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম অটো রিক্সা, অটো টেম্পু ফোর স্ট্রোক ও সিএনজি চালক মালিক ঐক্য পরিষদ’ এর শাখা গ্রহণ করে তারা বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া এ সমিতি সমাজ সেবা অধিদপ্তর রেজিভুক্ত। কিন্তু রামু পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে তাদের উপজেলায় শাখা বানিয়ে দীর্ঘকাল পর্যন্ত চাঁদাবাজি করেছে। আর বৈধ অনুমতির কাগজপত্র নিয়েই তারা সংগঠনের মাধ্যমে যাত্রী সেবা দিচ্ছেন বলে দাবী করেন।
এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএসএম শাহেদুল ইসলাম ও থানা অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল খায়ের পৃথক ভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উভয় পক্ষকে সোমবার পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কর্তৃত্ব নিয়ে যে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান তারা।
রামু থানা অফিসার ইনচার্জ সাইকুল আহামেদ ভূইয়া জানান, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির দুটি শ্রমিক ইউনিয়ন নিজেদের এলাকায় যানবাহন চালাচ্ছে। এ নিয়ে আইন শৃঙ্খলা অবনতিকর কোন পরিবেশ এখনো তৈরী হয়নি। এরপরও পুলিশ টহল অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।