২৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

দেরি হলে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ হারাবে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার সময় ডেস্কঃ নিজ জন্মভূমিতে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের নেত্রী ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দেওয়া আশ্বাসের দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব কফি আনান কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কয়েকজন সাবেক জনপ্রতিনিধি এমনটাই মনে করেন।

এর মধ্যে কেউ বাংলাদেশে আগে এসেছেন, অনেকেই আবার এবার পরিবার-পরিজন নিয়ে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এখনও রাখাইনে প্রতিবেশী-আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, অপেক্ষায় আছেন ফিরে যাওয়ার।

আলাপকালে এসব জনপ্রতিনিধি বলেছেন, রোহিঙ্গারা বেশি কিছু চায় না। রাখাইনে সবারই নিজস্ব জায়গা জমি আছে। কারও কারও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আছে। কিন্তু দেশটিতে কোনো নাগরিক অধিকার না থাকায় নির্বিচারে তাদের ওপর জুলুম চালানো হচ্ছে।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের বোঝার (আন্ডারস্ট্যান্ডিং পাওয়ার) ক্ষমতা খুবই সীমিত বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মংডু থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক সাবেক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নাগরিকদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ওরকমভাবে নেই। তারা শুধু আত্মকেন্দ্রিকতা ছাড়া কিছু বোঝে না। নিজেদের ভালোমন্দ বোঝে না। তারা অতোটা সচেতন নয়।

‘পঞ্চাশ-ষাট দশকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ও সচেতনতা সৃষ্টিতে যারা কাজ করেছেন তাদের ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তাদের চিন্তাটা এখনও আরাকান কেন্দ্রিক রয়ে গেছে। বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে একদম ধারণা নেই।’

রাখাইনে নির্যাতনের বর্ণনা করে তিনি বলেন, কেউ অসুখ হলে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয় না। কেউ ওষুধ কিনলে তা নষ্ট করে ফেলে মগরা। রোহিঙ্গাদের গৃহপালিত গরু-মহিষ বিক্রি করারও কোনো অধিকার নেই। কাগজপত্র থাকলেও নেই সম্পত্তির অধিকার।

আর কারও ছেলে কিংবা মেয়ে সুন্দর ও সুঠাম দেহের অধিকারী হলে ধরে নিয়ে যায় দেশটির সেনাবাহিনী। পরে আর তাদের খোঁজ থাকে না। তবে ভাগ্য ভালো হলে ২০-৩০ বছর পরও বুড়ো বয়সে ফিরে আসার মতো ঘটনাও দুয়েকটা আছে।

রোহিঙ্গাদের অধিকার ফেরতে স্বোচ্চার এই নেতা বলেন, সু চি চান রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে। আরাকানে শান্তি চান তিনি। শান্তির জন্য যিনি নোবেল পেয়েছেন অথচ তার আশপাশের লোকজনের কারণে কিছুই করতে পারছেন না তিনি। মিয়ানমারের পুরো ক্যাবিনেট রোহিঙ্গা বিরোধী। তবে আমাদের বিশ্বাস সু চি এ জন্য অনুতপ্ত।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা আলাদা কোনো রাজ্য চায় না। তারা শুধু নাগরিক অধিকার ফেরত চায়। কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন চায়।

‘কারণ এখনও রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে উদগ্রীব। কিন্তু দুই তিন-বছর দেরি হয়ে গেলে তারা ফেরত যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ক্যাম্পে থাকতে থাকতে এখানকার পরিবেশ ও প্রতিবেশে মিশে যাবে। মন-মানসিকতাও ঘুরে যাবে।’

রোহিঙ্গাদের জন্য সেফ জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি বলেন, সেফ জোন দরকার কী? তাদের নাগরিকত্ব ফেরত দিলেই তো হয়। তবে সেফ জোন হলেও তা জাতিসংঘের মাধ্যমে হতে হবে। শান্তিরক্ষী নিয়োগ দিতে হবে।

প্রায় ৩৫ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে যোগ করে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে একই কথা জানালেন মিরাজ নামে বুথিডং এলাকার তুলাতুলির একটি ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি (মেম্বার)। যিনি পাঁচ সন্তান-সন্তুতি নিয়ে কোরবানি ঈদের পাঁচদিন পর বাংলাদেশে এসেছেন।

তার ভাষ্য, ‘মনত খুব বেশি কষ্ট পাই নিজর দেশ ছাইজ্যি। এনে ন ছারি। আঁরারে ন মারিবার নিশ্চয়তা দিলেই চলে যাইয়্যুম, এডে ন থাকিয়াম। (মনে খুব বেশি কষ্ট পেয়ে নিজের দেশ ছেড়েছি।এমনিতে ছাড়িনি, মানুষের অধিকার পেলেই চলে যাবো।’

নাগরিক অধিকার ফেরত পেলে সব রোহিঙ্গাই রাখাইনে চলে যাবে বলে জানান কুতুপালং নতুন ক্যাম্পের এ ব্লকে আশ্রয় নেওয়া মিরাজ উল্লাহ।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সহিংস দমন-নিপীড়ন শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে ছুটে আসছেন রোহিঙ্গারা। বুধবারও প্রায় আড়াইশ পরিবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এরপর তাদের বায়োম্যাট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করার পর ত্রাণ ও তাবুর সরঞ্জামাদি দিয়ে নির্দিষ্ট ক্যাম্পে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।

তবে এখনও কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে লাখো রোহিঙ্গা শিশু।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।