বঙ্গোপসাগরে দীর্ঘ দেড় মাস ধরে ভাসমান থাকার পর অবশেষে ১১৬ জন মালয়েশিয়াগামী টেকনাফ উপকূলে ফিরে এসেছে। থাইল্যান্ডে ধরপাকড় বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে দালাল ও ট্রলার মাঝি-মাল্লারা অপর ট্রলার নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। দালাল ও মাঝি-মাল্লারা থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের নাগরিক। পরে ১১৬ জন যাত্রীরা নিজেই ট্রলারটি নিয়ে সেন্টমার্টিন উপকূলের দিকে আসার সময় মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড তাদের আটক করে এবং বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে টেকনাফ কোষ্টগার্ড কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। ফিরে আসা সকলে বাংলাদেশী নাগরিক। উদ্ধার হওয়া এসব যাত্রীদের মধ্যে কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ, ব্রাম্মনবাড়িয়া, নারায়নগঞ্জ, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, পাবনা, যশোর ও ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা। ফিরে আসা যাত্রীদের “আইওএম” নামক একটি এনজিও সংস্থার চিকিৎসক টিম চিকিৎসা প্রদান করেছে।
ফিরে আসা সিরাজগঞ্জ জেলার রতনকান্দি উপজেলার একডালা এলাকার মোঃ রিপন জানান, মোঃ জাকির নামে এক বন্ধু টেকনাফ ভ্রমনের কথা বলে নিয়ে আসে। টেকনাফে পৌঁছলে ওই বন্ধু তাকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। দালালরা তাকের জোর পূর্বক একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে রাতেই সাগরে অপেক্ষামান ট্রলারে নিয়ে যায়। সে আরো জানায়, যেখানে ট্রলারটি অবস্থান করছিল সেখানে ১৪ টি ট্রলার রয়েছে। মাঝি-মাল্লারা সকলে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের নাগরিক। ট্রলারে মোট ১৬৪ জন যাত্রী ছিল। তম্মধ্যে ৩০ জনকে একটি ছোট বোটে করে আলাদাভাবে উঠিয়ে দেয়। থাইল্যান্ডে ধরপাকড় বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের ১৮ মহিলা যাত্রী, দালাল ও নাবিকরা অপর একটি ট্রলারে উঠে আমাদের ট্রলারটি ভাসিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে আমি নিজে এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় ট্রলারটি সেন্টমার্টিনের দিকে আসলে কোস্টগার্ড আটক করে।
নরসিংদী জেলার মুরাদনগরের হোসেন মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর (৩২) জানান, সে সহ আরও ২১ জন ৪৫ দিন যাবৎ ট্রলারে রয়েছে। চট্টগ্রামের ইউসুফ নামক এক দালালের হাত ধরে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে টেকনাফের সাবরাং থেকে ট্রলারে উঠেছিল। সে জানায়, সকালের খাদ্য হিসেবে চিড়া ও গুড় এবং রাতের বেলা ঔষধ মিশানো ভাত খেতে দিত। যা খেলে বমি আসতো। তাছাড়া লবন পানি পান করতে হতো।
কক্সবাজার জেলার উখিয়ার উপজেলার নতুন বাজারের আবদুল হাফিজের ছেলে নুরুল হাকিম (৫৩) জানায়, পানি চাওয়া হলে এবং বেশী নড়াচড়া করলে শারিরীক নির্যাতন করতো ট্রলারে থাকা দালালরা। টেকনাফের খতিজা ও শওকত নামক দালালের হাত ধরে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ট্রলারে উঠেছিল।
মাদারীপুর জেলার মোঃ গাউজ বেপারীর ছেলে মোঃ মাসুম জানায়, ৪৫ দিন সাগরে ভাসতে থাকি। টেকনাফের নবী হোছন ও বাবুল নামক দুইজন দালাল সার্বক্ষনিক ট্রলারে অবস্থান করে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালাতো। বিশেষ করে টেকনাফে ৩ মানবপাচারকারী বন্দুক যুদ্ধে নিহতের খবরে নির্যাতন বেশী করা হয়েছে।
এদিকে আরও কয়েকজন যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কেউ স্ব-ইচ্ছায় মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে আসলেও অনেককে জোর পূর্বক ট্রলারে উঠিয়ে দিয়েছে। ফিরে আসা যাত্রীদের মধ্যে কক্সবাজার সৈকতের ৪ ফটোগ্রাফার রয়েছে। তারা টেকনাফে ভ্রমন আসলে টেকনাফের সাবরাং জীপ স্টেশন থেকে সন্ধ্যায় ৪/৫ জন লোক একটি সিএনজিতে করে ট্রলারে উঠিয়ে দেয়। এসময় তাদের কাছ থেকে দূটি ক্যামরা ও ৪টি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এরা হচ্ছে কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার আবুল কালামের ছেলে মোঃ রফিক (১৯), আবদুল মজিদের ছেলে আবুল কাশেম (২০), নুর মোহাম্মদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২২) ও মোহাম্মদ হোছনের ছেলে মোঃ হাসেম (২১)। তারা সকলে জনি নামক একটি স্টুডিও’র তত্বাবধানে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতো।
“আইওএম” সংস্থার ডাঃ সৌমেন জানান, যাত্রীদের মধ্যে আশংকাজনক কেউ নেই। তবে খাদ্য জনিত অভাবে দূর্বল রয়েছে।
টেকনাফ কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার কাজী ফরিদুজ্জমানা জানান, আটককৃত মালয়েশিয়াগামীদের থানায় হস্তান্তর করে প্রকৃত দালালদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার আতাউর রহমান জানান, উদ্ধার হওয়া মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদে এখনো তাদের কাছে হস্তান্তর করেনি কোষ্টগার্ড। যাত্রীদের হস্তান্তর করা হলে আতœীয় স্বজনদের কাছে তুলে দিয়ে চিহ্নিত দালালদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।