আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার হবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা যোগান দেয়া হবে। আর উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৫৭ হাজার কোটি টাকা।
তবে এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে উল্লেখ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সব মিলিয়ে এডিপির আকার ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা হবে।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের মূল এডিপির বরাদ্দ চলতি এডিপির চেয়ে সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা বেশি হচ্ছে। আর সার্বিক এডিপির আকার বাড়বে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
আগামী রোববার (১৫ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এ এডিপি’র বরাদ্দের অনুমোদন দেয়া হতে পারে। রাজধানীর আগাওগাওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘আগামী অর্থবছর চলমান প্রকল্পগুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। যাতে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বৃদ্ধি পায়। এ কারণে মোট এডিপির আকার বড় হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। চলতি অর্থবছর ১০ মাসে বিভিন্ন প্রকল্পে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। সুতরাং আগামী অর্থবছরে এডিপির বাস্তবায়ন বাড়বে।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উল্লেখযোগ্য মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৫৫২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, মেট্রোরেল প্রকল্পে ৩৪২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা,পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে ৭৬০৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৬৭৭৯ কোটি ৪ লাখ টাকা, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড বিদ্যুৎ প্রকল্পে ২২২০ কোটি টাকা।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মায়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে ১৫৬১ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে পরিবহন খাতে। এ খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হবে ৪১ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হবে বিদ্যুৎ খাতে, ১৮ হাজার ৮৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ শিক্ষা ও ধর্ম খাতে, ১৬ হাজার ৬৭৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে, ১৪ হাজার ৯৪৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে, ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে ৯০টি নতুন প্রকল্পসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৩১১টি। এর মধ্যে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ১৯৫টি (বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৭৯টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১২টি এবং জেডিসিএফ অর্থায়িত প্রকল্প রয়েছে ৪টি)।
৯০টি নতুন প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৭৭টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১২টি এবং জেডিসিএফ একটি। আগামী অর্থবছরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) বাস্তবায়নের জন্য ৩৬টি প্রকল্প যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া এডিপিতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশাল এডিপি নেয়া হলেও বাস্তবায়ন সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রতিবছর বিশাল এডিপি নেয়া হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন শতভাগ করা সম্ভব হয় না।
চলতি অর্থবছরে ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এডিপির ৫২ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৬২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৫০ শতাংশ। টাকার অঙ্কে ৪৭ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।