একটা নাম বাদ দিলে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য ঘোষিত ভারতীয় দল প্রত্যাশিত আমার কাছে। সত্যি বলতে, এই মুহূর্তে একদিনের ক্রিকেটে এটাই সেরা দল ভারতের। সোমবার দুপুরে ভারতীয় দল ঘোষিত হওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে এক বন্ধু ফোনে জানাল, সাংবাদিক বৈঠকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উড়ে এসেছে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদের দিকে! খবরটা পেয়ে আমি কিন্তু অবাকই হয়ে গিয়েছি। হতে পারে, ধোনির সেই আগের ফর্ম হারিয়ে গিয়েছে। চলতি আইপিএলেও দুটো-একটা ম্যাচ বাদ দিলে ‘ফিনিশার মাহি’কে দেখা যায়নি। কিন্তু তাই বলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো টুর্নামেন্টে ধোনি ছাড়া ভারতীয় দল? এর চেয়ে হাস্যকর ভাবনা আর কিছু হতেই পারে না। মনে রাখা ভাল, চার বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিজয়ী ভারতীয় দলের অধিনায়কের নাম ছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। দ্বিতীয়ত গত এক বছরে ১১টি একদিনের ম্যাচে ওর মোট রান ছিল ৩৫৭। একটা সেঞ্চুরি ছিল। স্ট্রাইক রেট ছিল ৮২.২৫। ওর মতো ক্রিকেটারের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই অমূলক।
ব্যক্তিগতভাবে আমি এখনও ধোনিকে সেরা উইকেটকিপার হিসাবে মনে করি না। ঋদ্ধিমানই সেরা কিপার। কিন্তু তাই বলে ব্যাট হাতে মাহির কঠিন সময়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করে জয় এনে দেওয়ার ঘটনাগুলোকে তো মুছে ফেলা যাবে না। বিরাটের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, এবার কিন্তু ওকে আর ছয় বা সাত নম্বরে নামিও না। ওপেনিং জুটি যদি প্রথম ২০-২৫ ওভার ভাল খেলে দিতে পারে, তাহলে ধোনির জন্য সেরা জায়গা চার নম্বর। হাতে সময় এবং ওভার, দু’টোই থাকবে। ধোনিরও সুবিধা হবে নিজেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে। কে বলতে পারেন, এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই ধোনির বিদায়ী সিরিজ হবে না! ওর মতো সফল ক্রিকেটারকে সর্বোচ্চ সম্মান জানাতে আমরা সকলেই কিন্তু দায়বদ্ধ।
তাহলে কি ধরে নিতে হবে, নির্বাচকরা ঋষভ পন্থকে দলে রাখার ঝুঁকি নিতে পারলেন না? আমিও প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক হিসাবে দল নির্বাচিত করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ঋষভকে এখনই ১৫ জনের দলে না রেখে স্ট্যান্ড বাই হিসাবে রেখে সঠিক কাজই করেছে প্রসাদের টিম। মানছি, চলতি আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে ও।
কিন্তু সেটা দিয়েই তো ইংল্যান্ডের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বিশাল মঞ্চে ওকে খেলিয়ে দেওয়া যায় না। তাতে যদি কোনও কারণে হিতে বিপরীত হয়, তখন দেখা যাবে আজকের প্রশ্নকর্তারা রাতারাতি উল্টো সুরে কথা বলছেন!
দলে কেদার যাদবকে রাখা হয়েছে। গত এক বছরে ওয়ানডেতে ওর পরিসংখ্যান কিন্তু খুব খারাপ নয়। ১১ ম্যাচে ৩২২ রান করেছিল। একটা সেঞ্চুরি ছিল। স্ট্রাইক রেট ১২৯.৮৩। তাছাড়া কে এল রাহুল চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পর ও-ই এখন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের নিয়মিত উইকেটকিপার। খুব খারাপ কিপ করছে না। তেমন প্রতিকূল অবস্থা তৈরি হলে কেদার সেই জায়গা ভরাট করে দিতে পারে। আর মাত্র ১৯ বছর বয়স ঋষভের। ওর সামনে প্রচুর সময় পড়ে রয়েছে। আমার ধারণা, পরের একদিনের সিরিজেই ও ঢুকে পড়বে ভারতীয় দলে। ভেঙে না পড়ে নিজেকে আরও তীক্ষ্ণ করে তুলুক ঋষভ।
তবে ১৫জনের দলে শিখরের নাম দেখে আমি খুশি হতে পারিনি। প্রথমত চলতি আইপিএলে আমি এখনও পর্যন্ত শিখরের যে ব্যাটিং দেখেছি সেটা খুব আশাব্যঞ্জক বলে মনে হয়নি। ওর খেলায় আগের আত্মবিশ্বাস দেখতে পাইনি। শট নির্বাচন করতে গিয়ে কেমন যেন গুটিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া যেখানে রোহিত শর্মা এবং অজিঙ্ক রাহানের মতো দুই ওপেনার রয়েছে, সেখানে স্ট্যান্ড বাই হিসাবে না রেখে সুরেশ রায়নাকেই রাখা যেতে পারত। ওর অভিজ্ঞতা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কাজেও লাগতে পারত। ঠিক যেমন দলে কুলদীপ যাদবের নাম না দেখে খারাপ লেগেছে। অশ্বিন-জাডেজা জুটির সঙ্গে ওকে রাখলে উপকারই হত। তবে পেস ব্রিগেডটা দারুণ এবার। জানি না, মহম্মদ শামি প্রায় দুই বছর পর আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফিরে কতটা ঝলসে উঠবে। আইপিএলে ওর বোলিং তেমন আহামরি লাগেনি। তবে উমেশ-ভুবনেশ্বর-বুমরা দারুণ ছন্দে রয়েছে। আমার বিশ্বাস, ইংল্যান্ডের উইকেটে এবার আগুন ঝরাবে এই পেস-ত্রয়ী।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।