আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হিসাব-নিকাশ পাকাপোক্ত করে মনোনয়ন দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কারণ বিএনপি অংশ নিলে একাদশ সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। ফলে গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন এমন অনেকেই পরবর্তী নির্বাচনে নৌকার টিকিট পাবেন না। এসব আসনে নতুনদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাবছে ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য সব নির্বাচনী এলাকার বর্তমান সাংসদ এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপর বিভিন্ন মাধ্যমে জরিপ চালাচ্ছে দলটি। আর প্রতিমাসে দুবার করে জরিপের ফলাফল যাছাই করছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। ফলে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন অনেকটাই জরিপনির্ভর হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলটির বর্তমান সাংসদদের ওপর প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিকভাবে জরিপ চালানো হচ্ছে। জরিপের কাজে আগে থেকেই মাঠে নেমেছে সরকারি দুটি সংস্থা, স্থানীয় জনপ্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের দলীয় উইংস। এই চারটি ভিন্ন ভিন্ন জরিপে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে প্রায় একই ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। জরিপের ফলগুলোকে মিলিয়ে দেখা হবে, প্রার্থীদের মধ্যে কার প্রকৃত অবস্থা কেমন। এর মধ্যে একটি জরিপের রিপোর্ট প্রতি ১৫ দিন পর পর হালনাগাদ করে জমা দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে।
সরকারি একটি সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রশাসনের দায়িত্বশীলদের দিয়ে পরিচালিত জরিপটির ফল প্রতি ১৫ দিন পর পর জমা পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। তবে এই জরিপটি চালানো হচ্ছে বর্তমান সাংসদদের ওপর। তারা এলাকায় যাচ্ছেন কিনা? তাদের জনসম্পৃক্ততা কেমন? এলাকার উন্নয়ন কাজে তাদের সক্রিয়তাকে প্রাধান্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে আমলানির্ভর জরিপটি।
অন্যদিকে সরকারি সংস্থা দুটি এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিচালিত জরিপে বর্তমান সাংসদ এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই জরিপ প্রক্রিয়ায় প্রার্থীর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সম্পদের হিসাব, প্রার্থীর আচরণ, জনসম্পৃক্ততা, শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রভৃতি বিষয় যাচাই করা হচ্ছে। এই চারটি জরিপের বাইরে এবারই প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ের উইং ‘ইয়াং বাংলা’ থেকেও একটি জরিপ চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই একাদশের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি আমরা। বিভিন্ন এলাকার সংসদ সদস্যদের খোঁজখবর নিতে সবসময়ই জরিপ চালানো হয়। তবে নির্বাচনের আগে বিষয়টি আরও জোরালো হয়। তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের এখনো দেড় বছর বাকি রয়েছে। অনেক জরিপ চলছে, আরও অনেক জরিপ হবে। এসব জরিপে প্রার্থীদের অবস্থান ওঠানামা করছে। আশা করি, সব জরিপের ফলের ভিত্তিতে যোগ্যতম প্রার্থীরাই আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন।
ইতোমধ্যে কিছু কিছু জরিপের ফল হাতে আসা শুরু হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক নূর ই আলম লিটন চৌধুরী বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বেশ কিছু জরিপের ফল আমাদের হাতে এসেছে। চলতি বাজেট অধিবেশনের জন্য জাতীয় সংসদে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন সভাপতি শেখ হাসিনা। আশা করছি, বাজেট অধিবেশনের পর বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবে এমন প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা। জরিপের ফলের স্বচ্ছতা ধরে রাখার জন্য কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। পাশাপাশি দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকেও সবাইকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, জরিপের বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। সংসদে বাজেট অধিবেশনের ফাঁকে বৃহস্পতিবার বিকালে বা সন্ধ্যায় রওনা দিয়ে শুক্র-শনিবার এলাকায় থেকে আবার রোববার ঢাকায় ফিরে আসছেন তারা। জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি রাজধানীতেও বিভিন্ন ইফতারে অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় সাংসদ ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক সাবেক সচিব রাশিদুল আলম বলেন, শুধু সাংসদদেরই নয়, আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে এবং জনসম্পৃক্তা বাড়াতে বলা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।