১১ এপ্রিল, ২০২৫ | ২৮ চৈত্র, ১৪৩১ | ১২ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ   ●  ‘পটভূমি পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ – সরওয়ার জাহান চৌধুরী   ●  উখিয়ার বরণ্য রাজনৈতিক মৌলভী আবদুল হকের ১৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী ২০ মার্চ   ●  হাসিঘর ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সিজন-১ এর ফল প্রকাশিত

নতুন করে বেড়িবাঁধ ভাঙায় মাতারবাড়ী উপকূলে বেড়িবাঁধ বিলীন হতে চলছে

পরিকল্পনা ছাড়া নিম্মমানের কাজ আর নিজেদের আখের গোছানের প্রতিযোগিতার কারনে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম সাইটপাড়ার বেড়িবাঁধের বেহাল দশা। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা বরাদ্ধ হলেও সিংহভাগ চলে যায় ঠিকাদার আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা এবং স্থানিয় সরকার দলীয় চিহ্নিত কিছু লোকের পকেটে।
ফলে কয়েক যুগেও মাতারবাড়ী উপকূলের মানুষ একটি স্থায়ি বেড়িবাঁধ পাচ্ছেনা। এদিকে মাতারবাড়ীবাসীর বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবী দীর্ঘদিনের হলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে কাজের কোন প্রকার অগ্রগতি হয়নি। ফলে অতীতে উপকূলের লাখো মানুষ অকালেই প্রাণ হারায় সর্বনাশা বঙ্গোপসাগারের বিশাল জলরাশিতে।
প্রতি বছর বর্ষা এলেই ঘুম ভাঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। জরুরী বরাদ্ধের নামে নেয়া হয় কোটি টাকার বাজেট। জোয়ারে পানির মধ্যেই ঠিকাদার শুরু করে নিমার্ণ কাজ। পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে যেনতেনভাবেই কাজ শেষ করে চলে যায় ঠিকাদাররা। কিন্তু জনসাধারণ দুশারূপ করেন স্থানিয় চেয়ারম্যানকে। কিন্তু বর্তমানে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মাষ্টার মোঃ উল্লাহ বি.এ ব্লক দিয়ে স্থায়ি বেড়িবাঁধ নিমার্ণের দাবীতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত স্মারক লিপি দেওয়ার পর সরকারী ভাবে মাতারবাড়ী-ধলঘাট ভাঙ্গা বেঁড়িবাধ নিমার্ণের জন্য ১ কোটি ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, সরকারীভাবে ভাঙ্গা চার চেইনের জন্য বরাদ্দ গুলি হয়েছে এখন ভাঙ্গার পরিধি ১৩ চেইনের মত হয়েছে বলেও স্থানিয় লোকজন জানিয়েছেন।
অপরদিকে টাকা কম খরচের জন্য বেড়িবাঁধের আশপাশ থেকে মাটি নিয়ে তা দিয়েই চালিয়ে দেন মাটি ভরাটের কাজ। টেন্ডারে বেড়িবাঁধের আশপাশ থেকে মাটি না নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানেননা ঠিকাদাররা। নিম্মমানের কাজ করে বরাদ্ধের সিংহভাগ টাকা লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যায় সরকারের। এর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং কপাল পুড়ছে স্থানিয় জনসাধারণের।
সংস্কার কাজ করার এক বছরের মধ্যে কাজে কোনো ক্রুটি পাওয়া গেলে বিল আটকে দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানেননা পাউবোর কর্মকর্তারা। ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে বিল ছাড় করে দেন তারা। এদিকে বেড়িবাঁধ স্থায়ি করার জন্য সাগরের অংশে ম্যানগ্রোভ সৃষ্টি করাও গুরুত্বপূর্ণ বলে স্থানিয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে। সরাসরি সাগরের ঢেউ যাতে বেড়িবাঁধে আছড়ে পড়তে না পারে এজন্য বনায়নের প্রয়োজন রয়েছে। এব্যাপারে স্থানিয় বনবিভাগের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানিয়রা।
ইউনিয়নের ৭০ হাজার মানুষ আতংকের মধ্যে দিনযাপন করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিদ্যুৎ বিভাগের উদাসীনতার কারণে মাতারবাড়ির অধিকাংশ এলাকায় জোয়ার ভাটা চলছে। রোয়ানুর পরবর্তী সময়ে এখনো অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সংস্কার না করায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। চালিয়াতলী-মাতারবাড়ী সংযোগে সড়কে ২৫ লক্ষ টাকা জরুরী বরাদ্দ দেওয়া হলে নিম্মমানের সংস্কার কাজ করায় সেখানে চলছে লুটপাটও দুর্ণীতি।
বেড়িবাঁধের বাকি এক কিলোমিটার অংশও যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। তেমনটা হলে পুরো ইউনিয়ন সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে বলে জানান, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জি,এম ছমি উদ্দিন।
ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে বন্যা ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকির মধ্যে আছে ২৫টি গ্রামের অন্তত ৭০ হাজার মানুষ। সরেজমিনে দেখা যায়, মাতারবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিমে সাইরার ডেইল ও ষাইটপাড়ার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ সাগরের তীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ভাঙছে ঝাউগাছের লাগোয়া বেলাভূমি।
বেড়িবাঁধ নির্মিত না হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি আমাদের কক্সবাজারকে জানান, পশ্চিম ও উত্তর পাশের বেড়িবাঁধ এখনো খোলা। তাই জোয়ার আসলেই বসবাসরত মানুষের মধ্যে আতংক শুরু হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় দিয়েই চলছে জোয়ার ভাটা। জোয়ারের পানির কারণে মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। ঘূর্ণীঝড় কোমেন’র আঘাতের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই রোয়ানু’র আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে পুরো মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা। এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় মানুষ বসবাস করতে পারে না। জোয়ার শুরু হলেই ঘর থেকে লোকজনকে সরে যেতে হয়। সর্বত্র লবণাক্ততা বিরাজ করায় কোন ফসলও চাষ করা যাচ্ছে না। অভিলম্বে বেড়িবাধ নির্মাণ করা না হলে সমগ্র মাতারবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। আমরা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু আমাদের বাঁচার অধিকার আছে। প্রধানমন্ত্রীর উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, মাতারবাড়ী ইউনিয়নটি বঙ্গোপসাগরের মোহনায় হওয়ায় যেকোনো মুহূর্ত নতুন করে বেড়িবাঁধ ভাঙায় মাতারবাড়ী উপকূলে বেড়িবাঁধ বিলীন হতে চলছে

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।