হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমার থেকে প্রাণ ভয়ে বাঁচতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ পৌঁছাতে গিয়ে- ত্রাণবাহী ট্রাক (চট্টমেট্রো ট ১১-০৫৮৫) উল্টে গিয়ে ৯ শ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১২ শ্রমিক। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটায় বিজিবির চাকঢালা বিওপি সংলগ্ন বড়ছড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপির ছালামিপাড়ার মো.হানিফের ছেলে আবদুল্লাহ (১৮), নূর আহমদের ছেলে ছুরুত আলম (৩৫), বদিউল আলমের ছেলে ছৈয়দুল আমিন (২৬), বাগানঘোনার মৃত আবুল কালামের ছেলে জলিল আহমদ (৪০), ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৬), ঘিলাতলীর গোলাম হোসেনের ছেলে মামুনুল হাকিম (১৭), ঠান্ডাঝিরির মোক্তার আহমদের ছেলে আবদুল মাবুদ (৪০), সোলাইমানের ছেলে সুলতান আহমদ (৫৪) ও বড়ুয়া পাড়ার অন্তু বড়ুয়ার ছেলে সুদর্শন বড়ুয়া (৪৫)। এদের মধ্যে ঘটনাস্থলে ছয় জন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর তিন জন প্রাণ হারান। আহত ১২ জনের মধ্যে ঠান্ডাঝিরির মো.সেলিমের ছেলে আজিজুর রহমানের (৩৫) অবস্থা অশঙ্কাজনক। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বাকিরা নাইক্ষ্যংছড়ি সদর হামসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহত এবং আহতরা সবাই স্থানীয়ভাবে শ্রমিকের কাজ করেন। ঘটনার পর পরই ট্রাকের চালকের খোঁজ নেই।
সরেজমিনে গেলে প্রত্যক্ষদর্শী অলি বকশিমাঠ পাড়াকেন্দ্রের পাড়াকর্মী তসলিমা আক্তার বলেন, ‘রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণবাহী দুটি ট্রাক সকালে সীমান্তের বড় শনখোলার রোহিঙ্গা শিবিরের দিকে যাচ্ছিল। তন্মধ্যে একটি ট্রাক বড়ছড়া কালভার্ট পার হলেও অপর ট্রাকটি কালভার্টের পশ্চিমঅংশ ধসে ধান ক্ষেতে উল্টে গেলে ট্রাকের ওপরে থাকা অন্তত ২৫জন শ্রমিক গাড়ি ও ত্রাণচাপা পড়েন। এসময় ঘটনাস্থলেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান চাকঢালা বিওপির সুবেদার অসিত কুমার নন্দী। তিনি বিওপির অন্যান্য সদস্যদেরকে নিয়ে উদ্ধারকাজ চালান। যথাসময়ে তাঁর কার্যক্রম পরিচালিত না হলে প্রাণহানি আরও বৃদ্ধি পেত।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম তৌহিদ কবির ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ত্রাণবাহী ট্রাক উল্টে গিয়ে ঘটনাস্থলেই ছয়জন প্রাণ হারান। হাসপাতালে নেওয়ার পর বাকি তিনজনের মৃত্যু হয়। এ পরিস্থিতিতে উপজেলায় শোকের মাতম চলছে। নিহতের স্বজনদের আহাজারীতে নাইক্ষ্যংছড়ির আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম সরওয়ার কামাল বলেন, ‘দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি উদ্ধারে সেনাবাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি কক্সবাজার থেকে আসা রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণগুলো প্রশাসনিক হেফাজতে রাখা হয়েছে।’
এদিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল মো.আনোয়ারুল আযীম, জেলা প্রশাসক (ডিসি) দিলীপ কুমার বণিক, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো.কামাল উদ্দিনসহ পদস্থ কর্মকর্তারা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।