নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে এ ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
তিনটি পদে এ ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন ২০১ জন প্রার্থী। শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য মাঠে নেমেছেন সাড়ে ৯ হাজার বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য। নির্বাচনী এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছেন তারা। নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেও চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে ভোটারদের মধ্যে। আজ যেকোনো সময় পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে কোনো হুমকি নেই। ভোটারদের অনুভূতিই বলছে, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে।
টানা ১৬ দিন প্রচারণার পর গতকাল বুধবার থেকে নগরীতে ছিল না মিছিল-সমাবেশ বা মাইকিং। দিনভর ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বন্দর নগরীর মানুষ। তবে ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা ভোটার স্লিপসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের নামে প্রচারণা চালিয়েছেন।
প্রচারণা না থাকায় অনেকটাই অবসর সময় কাটিয়েছেন মেয়র প্রার্থীরা। মতবিনিময় করেছেন কর্মী-সমর্থকদের সাথে। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। সারা দিন নিজ বাসায় কাটান তিনি। গণমাধ্যম কর্মীদেরও এড়িয়ে চলেছেন। ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান পার্টি অফিস, নিজের পরিবারের সদস্য ও মিডিয়া সেলসহ নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সময় কাটান। তবে জয়ের ব্যাপারে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই আশাবাদী। সুষ্ঠু ভোট হলে নির্বাচনের ফল মেনে নিতে প্রস্তুত জানিয়ে সাখাওয়াত বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি ৬০ ভাগ নিশ্চিত। নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ধানের শীষের এই প্রার্থী।
অপর দিকে, শতভাগ বিজয় নিশ্চিত বলে মনে করেন নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে কোনো সংশয় নেই। নির্বিঘেœ প্রচার চালিয়েছেন সব প্রার্থী। তবে একই দলের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় কিছু কিছু ওয়ার্ডে সঙ্ঘাত হতে পারে বলে জানান আইভীর নির্বাচনী ও মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক জহিরুল ইসলাম জহির।
নির্বাচন নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় নেই। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মইনুল হক বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো হুমকি নেই। অনিয়মের কোনো অভিযোগ নেই প্রার্থীদের। নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটারদের অভিব্যক্তি হচ্ছে- উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হবে।
বিএনপির স্থানীয় নেতা তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত আছি। প্রত্যেক কেন্দ্রে ৫০ সদস্যের কমিটি আছে। সিটির তিন থানায় তিনজন সিনিয়র নেতা সমন্বয় করছেন। তিনি বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড আমি নিজেই সমন্বয় করছি। আমার অধীনে দায়িত্বে রয়েছেন ৫০ জন। একইভাবে বন্দরে এ টি এম কামাল এবং সদরে গিয়াসউদ্দিন দায়িত্বে আছেন। এর আগের সিটি নির্বাচন বর্জন করা এই মেয়র প্রার্থী আরো বলেন, এই কমিটির কর্মীদের কাজ ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং ভোট দেয়ার পর নির্বিঘেœ বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা দেয়া।
এ দিকে স্থানীয় মানুষ ও ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের সাথে আলাপে জানা গেছে, সুষ্ঠু ভোট হবে কি না তা নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। ফলে তারা কেউ আগাম মুখ খুলতে নারাজ। তবে ভোটাররা নীরব থাকায় পাল্টে যেতে পারে পুরো ভোটের হিসাব-নিকাশ।
এ ছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নৌকা সমর্থিত একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় কিছুটা শঙ্কা কাজ করছে ভোটারদের মধ্যে। এর মধ্যে ৪, ৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সহিংসতার আশঙ্কার কথা জানা গেছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ছোট নজরুল সাবেক পৌরমেয়র নুর হোসেনের সমর্থক। একইভাবে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে শামীম ওসমানের সমর্থিত প্রার্থী মতিউর রহমান মতি। এসব ওয়ার্ডের বিষয়ে আইভীর পক্ষ থেকে পুলিশকে অভিযোগ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন নৌকার প্রার্থীর মিডিয়া সমন্বয়ক।
২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল না’গঞ্জ সিটিতে প্রথম নির্বাচন হয়। নবগঠিত এই সিটিতে নির্দলীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে বিজয়ী হন আইভী। এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে আগের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে নাকি নতুন মেয়র পাবেন না’গঞ্জবাসী, সে অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্থানীয়রা। সুষ্ঠু ভোট এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের মন পরিবর্তন না হলে নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে জানান ভোটাররা।
ভোটার ও ভোটকক্ষ : তিনিটি থানা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠিত। মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ জন এবং নারী ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জে ১০টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার এক লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৭ জন। সদর থানার ৮ ওয়ার্ডে ভোটার এক লাখ ৭৫ হাজার ৬১২ এবং বন্দর থানার ৯ ওয়ার্ডে ভোটার এক লাখ ১৩ হাজার ৩২২ জন। নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১৭৪টি, ভোট কক্ষ ১ হাজার ৩০৪টি। এর মধ্যে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র ৪টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ ১২৬টি। এই নির্বাচনে সবগুলো ভোটকেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেয়র পদ নিয়ে আগ্রহী ভোটাররা : প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ ভোটার মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে ভোট দেবেন। তবে ভোটারদের প্রধান আকর্ষণ মেয়র পদ ঘিরেই। নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর উপজেলা নিয়ে এই নির্বাচনী আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে মোট ২০১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে পাঁচজন লড়ছেন মেয়র পদে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রার্থী কামাল প্রধান ও কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে (ধানের শীষ) সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। বাকি প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী আন্দোলনের মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা), ইসলামী ঐক্যজোটের এজহারুল হক (মিনার)। এ ছাড়া নির্বাচনে ২৭ ওয়ার্ডের ২৭টি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ১৫৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ৯টি পদে ৩৮ জন প্রার্থী হয়েছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।