নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন-নাসিক নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে ফল গণনা শুরু হয়েছে। ১৭৪টি কেন্দের মধ্যে এ পর্যন্ত ৮৮টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফল পাওয়া গেছে। এতে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভি পেয়েছেন ৮৮ হাজার ২৮৯ ভোট এবং ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান পেয়েছেন ৬২ হাজার ৯০৩ ভোট।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়। ভোট গ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৪টায়।
নাসিক নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১১ সালের নির্বাচনে এ সিটিতে প্রায় ৬৯.৯২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। এ পর্যন্ত যে খবর পাচ্ছি, তাতে টার্ন আউট খুব ভালো।
তিনি বলেন, কমিশন থেকে নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ
করতে হয়নি। সর্বোপরি নির্বাচনের পরিবেশে ইসি খুবই সন্তুষ্ট।
এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
অন্য দিকে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ফল মেনে নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
এ ছাড়াও নাসিকে মেয়র পদে আরো পাঁচজন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন কোদাল প্রতীকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির
মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি এজহারুল হক, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী
আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি মাছুম বিল্লাহ, ছাতা প্রতীকে এলডিপির কামাল প্রধান এবং হাত ঘড়ি প্রতীকে কল্যাণ
পার্টির রাশেদ ফেরদৌস।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের নয়টি পদে ৩৮ জন এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ২৭টি পদে ১৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, নাসিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ছিলেন ১৬টি
সংস্থার ৩১৮ জন দেশি ও একটি বিদেশি সংস্থার দুইজন পর্যবেক্ষক। এছাড়া ছিলেন এক হাজার ১৪২ জন গণমাধ্যমকর্মী।
এদের মধ্যে ৬৮৩ জন টেলিভিশন, ৩২৬ জন প্রিন্ট মিডিয়া এবং ১১৩ জন অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মী রয়েছেন।
রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, নির্দিষ্ট সময়ে নগরীর প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে কোনো
ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এই সিটি কর্পোরেশন এলাকার সব ক’টি কেন্দ্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভোটাররা
আনন্দঘন পরিবেশে ভোট দিয়েছে।
এ নির্বাচনে মোট ভোটার চার লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৮ জন। ১৭৪ ভোট কেন্দ্রের এক হাজার ৩০৪টি ভোট কক্ষে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট হাজার সদস্য এ নির্বাচনে নিয়োগ নিয়োজিত ছিলেন।
মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে যথাযথভাবে পালন করা হয় সেজন্য প্রতি ওয়ার্ডে অচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত
মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ২৭ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ভোটগ্রহণের দিন
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিটি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সাথে অরো নয়জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত
রয়েছে। নির্বাচনী অপরাধের তাৎক্ষণিক সংক্ষিপ্ত বিচারের (সামারি ট্রায়াল) জন্য ১৪ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
নিয়োজিত রয়েছেন।
নির্বাচনে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২২ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নামানো হয়। ভোট গ্রহণের পূর্ববর্তী দুইদিন,
ভোটের দিন ও ভোট পরবর্তী একদিনসহ মোট চার দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন থাকবে।
সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ২২ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত রয়েছে। নির্বাচনী
এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন, আনসার, র্যাব, কোস্ট গার্ড ও বিজিবির মোবাইল ও
স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়। সব মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ২৩ ডিসেম্বের পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে।
নির্বাচনে ১৭৪ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, এক হাজার ৩০৪ সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও দুই হাজার ৬০৮ জন পোলিং
কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।