বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে অবিলম্বে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানিয়েছে নিউইয়র্কে নব গঠিত ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি আন্দোলন’ যুক্তরাষ্ট্র কমিটি। সেই সাথে গ্রেফতারকৃত সকল নেতার মুক্তি এবং আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি আন্দোলন’-এর সদস্য সচিব ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ৫ জানুয়ারী ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশের ভোটার অধিকার বঞ্চিত মানুষ। নিজেদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুণ:প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন এবং গুম ও মিথ্যা মামলায় গণ গ্রেফতার হয়েছেন। যারা গুম হয়েছেন তাদের খুজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া এবং যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার পূর্বক অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, গত ১০ মার্চ রাত আনুমানিক ১০টার সময় উত্তরার একটি বাসা থেকে সাদা পোষাকধারী আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর পরিচয়ে বিএনপি’র যুগ্ন মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদকে চোখে কাপড় বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। আজ অবধী তার কোন খোজ খবর পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী ঢাকার গুলশান ও উত্তরা থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ তা নেয়নি। তিনি একজন সাবেক সরকারী আমলা, দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। তিনি একজন আদর্শবান রাজনৈতিক নেতা, সমাজসেবক ও দায়িত্বশীল অবিভাবক। অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হয় বর্তমান সরকার আজ পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন ধরনের দায়িত্বশীল বক্তব্য পেশ করেননি। বর্তমান সরকারের আইন শৃঙ্খলাবাহিনীও তাকে খুজে বের করার জন্য কোন উল্লেখ যোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সরকার আজ অবধি সালাহউদ্দিন আহমদকে গ্রেফতারের কথা নিলর্জ্জের মত বেমালুম অস্বীকার করে চলছে এবং বিষয়টি নিয়ে তার আতংকগ্রস্ত পরিবারের সাথে নিষ্ঠুর ঠাট্টা ও মশকরা করছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে সমাবেশে বক্তাতায় বলেছেন যে, সালাহউদ্দিনকে বিএনপি চেয়ারপারর্সনের কার্যালয় থেকে ময়লার বস্তার সঙ্গে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম বলেন, একজন জাতীয় নেতা ও বিরোধী দলীয় মুখপাত্রকে নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের অমানবিক ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ নিষ্ঠুর মন্তব্যে দেশে এবং প্রবাসের নাগরিকরা গভীর উদ্বেগ ও বিষ্ময় প্রকাশ করছে। আমাদের প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যদি এ ধরনের কোন তথ্য থেকেই থাকে তাহলে তিনি সময় মত ব্যবস্থা নেননি কেন?
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চিরদিনের জন্য আকড়ে থাকার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস বিনা বিচারে জেলে রাখা হয়েছে। আমরা প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক বন্দিদেরও মুক্তি দাবী করছি।
ডা. জাহিদ বলেন, আগামী ২৮ এপ্রিল তিনটি সিটি কর্পোরশেনের নির্বাচন হতে চলেছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা একের পর এক নির্বাচন বিধি লংঘন করে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোন ধরনের আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের এসব নির্লজ্জ ভূমিকা দেখলে গত ৫ জানুয়ারী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কথা মনে পড়ে যায়। আমরা আসন্ন তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
নিজ বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘জুলুমবাজ ও স্বৈরাচারী’ সরকার আখ্যায়িত করে বলেন, জাতি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে কমিউনিটির উল্লেখ্যযোগ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে তারেক মুক্তি আন্দোলন ইউএসএ’র সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা শাহাদৎ হোসেন রাজু, সাবেক ছাত্রনেতা জীবন শফিক, ব্রুকলীন বিএনপির সভাপতি হাজী কামাল, সিনিয়র সহ সভাপতি মাস্টার মঈন উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, ফয়েজ উল্লাহ, সিদ্দিকুর রহমান, আজিজুল বারী তিতাস, মোহাম্মদ সারওয়ার উদ্দিন, আব্দুল মতিন, নাজিম আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মোর্শেদুল আলম, মোহাম্মদ জাহিদ হাসান, সোলায়মান চৌধুরী, আরিফ হোসেন মিথুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ও কেন্দ্রীয় জাসাস নেত্রী বেবী নাজনীন যোগ দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের মুক্তি আন্দোলনের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করেন। এছাড়াও কমিউনিটি লিডার আলী ইমাম, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সুরুজ্জামান, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আহমেদ, চট্টগ্রাম সমিতি ইউএসএ’র সহ সভাপতি খোকন কে চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, কক্সবাজার জেলা সমিতির অব নর্থ আমেরিকার সভাপতি সারওয়ার জামান চৌধুরী (সিপিএ) সহ প্রায় অর্ধশত প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।