কক্সবাজারসময় ডেস্কঃ ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এসব রোহিঙ্গা সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আর বিভিন্ন ধারার নিপীড়নের অভিযোগ তোলার প্রেক্ষিতে ওই অভিযানে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে। চলতি বছরের আগস্টে প্রকাশিত হয় জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, নির্দিষ্টদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং সন্দেহভাজনদের বিচারের মুখোমুখি করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন বা তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মুখোমুখি করতে নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানানো হয়। বুধবার ওই তদন্ত দলের প্রধানকে নিরাপত্তা পরিষদে বিবরণী প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পরিষদের নেওয়া ব্যবস্থার সমন্বয় করছে ব্রিটেন। অপরদিকে বুধবারের বিবরণী প্রকাশের বিরোধিতা করে চীন বলছে, এটা সমস্যা সমাধানের বিপরীতধর্মী পদক্ষেপ। চীনের জাতিসংঘ দূত মা জাহাক্সু পরিষদে বলেন, কোনও দেশের নির্দিষ্ট মানবাধিকার ইস্যুতে পরিষদের জড়ানো উচিত নয়।
বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেন, চীন সবসময় চেয়েছে যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে আপস করার সহযোগিতা করে। নিয়মিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদ সঠিক জায়গা নয়। তিনি বলেন, এই বিবরণী মিয়ানমার ও বাংলাদেশের আলোচনা বাধাগ্রস্ত করবে আর সমস্যা সমাধানের জন্য সুবিধাজনক হবে না। রাশিয়ার জাতিসংঘ দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বিবরণীতে সম্মতি দেওয়া নয় সদস্য দেশের বিরুদ্ধে পরিষদের সম্মতি ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে নষ্ট করার অভিযোগ করেন।
নিরাপত্তা পরিষদে বিবরণীতে দারুসম্যান বলেন, রাখাইনে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গারা ‘মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে’। জাতিসংঘ গঠিত দলের তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত হাউ ডু সুয়ান নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ থাকলে আমরা অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে চাই আর আমরা তা করতে পারবো’।
নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর ওই সেনা অভিযান শুরু করে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাবিরোধী সহিংসতার যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করছে মিয়ানমার। দেশটি বলছে তাদের সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বৈধ অভিযান চালিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিটিশ দূত কারেন পিয়ার্স বলেন, আমরা যে অপরাধের বর্ণনা শুনেছি তাতে ২০ বছর আগে রুয়ান্ডা ও স্রিব্রেনিকায় ঘটে যাওয়া অপরাধের প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েছি। ওই দুই পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ নিয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদ। বড় দেরিতে নেওয়া সেই পদক্ষেপে আক্রান্তদের রক্ষা করতে না পারা আমরা লজ্জায় ফেলে দেয়, কিন্তু তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছিলাম আমরা। পিয়ার্স বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দায়মুক্তির সত্যিকারের অবসান ঘটাতে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখবেন তারা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।