২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের মর্যাদা পাচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক খাত!

বাংলাদেশে পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ আগের চেয়ে এখন অনেক উন্নত হয়েছে – এমন দাবি করছেন উদ্যোক্তারা। তাদের এ দাবির সঙ্গে অনেকটা একমত হয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট। একইভাবে ইউরোপীয় ক্রেতারাও কর্মপরিবেশের উন্নতি হয়েছে বলে প্রশংসা করেছে। আবার কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে বাংলাদেশ একান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকাও। বৃহস্পতিবার প্যাসিফিক ইয়োকোহামা সেন্টারে এডিবির পরিচালনা পর্ষদের ৫০তম বার্ষিক সভার উদ্বোধনী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে বাংলাদেশ একান্তভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধিও অর্জন করেছে, যা উৎসাহব্যাঞ্জক।’

এর আগে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পোশাক খাতের সংস্কার বিষয়ক মার্কিন নেতৃত্বাধীন উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক খাত বিপজ্জনক অবস্থা থেকে এখন নিরাপদ শিল্পের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার পথে রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটির কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি জানান, ‘কারখানার নিরাপদ পরিবেশ নিয়ে শ্রমিকরা এখন কথা বলতে পারছেন। শতভাগ নিরাপত্তা উন্নয়নের লক্ষ্যে অবিরত কাজ চলছে। চার বছর আগে কাজ শুরুর পর অ্যালায়েন্সভুক্ত কোনও কারখানায় একজন শ্রমিককে দুর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়নি। রানা প্লাজা ধসের আগে এ ধরনের পরিবেশ থাকলে এত বড় ট্র্যাজেডি এড়ানো যেত।’

রাজধানীর হোটেল লেকশোরে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি প্রসঙ্গে মরিয়ার্টি বলেন, ‘২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবেই রয়ে যাবে। তবে আজ বাংলাদেশের পোশাক খাতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে। তার পেছনে অনুঘটকের ভূমিকাও এই রানা প্লাজাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘অ্যালায়েন্সের লক্ষ্যই হলো, জোটের প্রায় ৭০০ কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে এসব কারখানায় কর্মরত ১৩ লাখ শ্রমিককে নিরাপদ রাখা।’

রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে আমেরিকান ক্রেতাদের নিয়ে ২০১৩ সালে অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি নামের একটি জোট গঠিত হয়। এই জোটে গ্যাপ ও ওয়ালমার্টের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ৭০০ কারখানার নিরাপত্তা তদারকি করছে এই জোট।

জানা গেছে, নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় ২ হাজার কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। সন্তোষজনক মানের সংস্কার অগ্রগতি দেখাতে না পারায় ৬৭৬টি কারখানার মধ্যে ১৪২টিকে অ্যালায়েন্স থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য বাদ পড়ার পর আবার সংস্কার শুরু করে একটা গ্রহণযোগ্য মানে উন্নীত হওয়ায় পাঁচটি কারখানাকে জোটে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশের উন্নতি এবং এ খাতে উদ্যোক্তাদের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে ইউরোপভিত্তিক পোশাক ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড)। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অ্যাকর্ডের পরিদর্শনে থাকা ১ হাজার ৫৫০ পোশাক কারখানার ৫৬ শতাংশ ত্রুটি সংস্কার করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যেই সব পোশাক কারখানার সংস্কার কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে ক্রেতাদের এ জোটের পক্ষ থেকে।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশ কারখানায় এখন নিরাপদ কাজের পরিবেশ বিরাজ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সব কারখানাতে আগের চেয়ে কর্মপরিবেশ উন্নত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ভালো মানের পোশাক কারখানা এখন বাংলাদেশে। নিরাপদ ও কর্মপরিবেশ বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ ১০টি কারখানার সাতটিই আমাদের দেশে। শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও পরিবেশসম্মত উৎপাদনের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গ্রিন সনদ পাওয়া কারখানা এখন ৬৭টিতে পৌঁছেছে।’ তিনি জানান, এই সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে আরও ২২৭টি কারখানা।

কর্মপরিবেশ উন্নত করার বিষয়ে বিজিএমইএ-র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন ও ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ওই ঘটনার পর অ্যাকওয়ার্ড-অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার ও গার্মেন্ট খাতের উদ্যোক্তারাও উদ্যোগী হয়।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক খাতের অবস্থা ছিল খুবই ভয়াবহ। ক্রেতা এবং উন্নয়ন সহযোগীরা কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। অনেক ক্রেতা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে সরকার, উদ্যোক্তা ও শ্রমিক নেতাদের অক্লান্ত চেষ্টায় বড় দুর্ঘটনার পরও রফতানিতে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি।  তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন ও রানা প্লাজা ধসের পর নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে অ্যাকওয়ার্ড-অ্যালায়েন্স গঠিত হওয়া ছাড়াও সরকার আইন সংশোধন করেছে। রানা প্লাজা ধসের মাত্র ৭৯ দিনের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে পোশাক খাতের জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কমিটির (এনপিএ) তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ কাজের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও তদারকি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকার কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের (ডিআইএফই) মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে একটি রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন (আরসিসি) সেল গঠন করেছে।

এদিকে পোশাক খাতের বাইরে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। গত ২৭ এপ্রিল সচিবালয়ে ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস’ উপলক্ষে সংবাদ এক সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার এই তথ্য জানান।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।