২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

নিরাপদ সড়ক-মহাসড়ক নিশ্চিত হবে কবে?

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলেও সড়ক-মহাসড়কগুলো একই সঙ্গে রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় নিত্য ঘটছে মর্মন্তুদ ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার ক্রম স্ফীত হওয়ার পাশাপাশি আহতের সংখ্যাও বাড়ছে। এক একটি পরিবারে নেমে আসছে গাঢ় অন্ধকার। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখ মানবকণ্ঠসহ সহযোগী দৈনিকগুলোর প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন স্থানে চার পর্যটকসহ ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যাও প্রায় সমান। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা এবং স্বেচ্ছাচারিতার উৎকট প্রতিযোগিতা চলছে আর এর বিপরীতে অন্ধকারের ছায়া ক্রম বিস্তৃত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির নিরসন কি দুরূহ?
সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো অচিহ্নিত নয়। এ বিষয়ে এ যাবৎ আলোচনা-পর্যালোচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, উচ্চারণসর্বস্ব অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি কোনো কিছুই কম হয়নি। কিন্তু তারপরও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে সড়ক নৈরাজ্যের নিরসন ঘটানো যাচ্ছে না। গাড়িচালকদের স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি মুখ্যত দুর্ঘটনার কারণ। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা আইনের তোয়াক্কা তো করেনই না উপরন্তু আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে তারা মানুষকে জিম্মি করে ধর্মঘট ডেকে জীবনযাত্রা অচল করে দেন। সরকারের দায়িত্বশীল কাউকে কাউকেও তাদের পক্ষে কথা বলতে দেখা গেছে অতীতে। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অন্যায় আবদারের বিষয়গুলোও বিস্ময়কর। আমাদের স্মরণে আছে, বিনা পরীক্ষায় চালকদের লাইসেন্স প্রদানের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রয়াসও অতীতে চালানো হয়েছিল।

বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত-প্রচারিত খবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে এক-তৃতীয়াংশের বেশি চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই কিংবা তারা ভুয়া লাইসেন্সধারী। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা এমনটি জানেন না তাও নয়। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, এত বড় অপরাধের নেই কোনো দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার। এমন পরিস্থিতি যেখানে বিদ্যমান সেখানে নিরাপদ সড়ক-মহাসড়ক নিশ্চিতকরণের বিষয়টি তো আরো পরে।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার ক্রম স্ফীত হচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে কিন্তু তা কদাচিৎ এবং প্রতিকারের বিষয়টিও নিশ্চিত। আমাদের দেশে অত্যধিক সড়ক দুর্ঘটনার আরো একটি কারণ হলো-দুর্বল আইন এবং যাও আইন আছে এর যথাযথ প্রয়োগ না থাকা। মানুষ ক্রমাগত গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে আহত-নিহত হতেই থাকবে আর এর কোনো দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার হবে না, নিরাপদ সড়ক-মহাসড়ক নিশ্চিত করা যাবে না তা তো হতে পারে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতার চিত্রও ক্রম পুষ্ট হচ্ছে অনাকাঙ্খিত-অপ্রত্যাশিতভাবে। বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন হচ্ছে-সড়ক-মহাসড়ক কি মৃত্যুফাঁদ হয়েই থাকবে? আর কত প্রাণ গেলে, আর কত মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে? একদিকে জীবন যাচ্ছে এবং এক একটি পরিবারে নেমে আসছে গাঢ় অন্ধকার অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্রও হচ্ছে ক্রম স্ফীত। বাইরে বেরলে নিরাপদে ঘরে ফেরার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে আর মর্মন্তুদ ঘটনার জন্য দায়ীরা আস্ফালন করতেই থাকবে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
কেন সড়ক দুর্ঘটনা অপ্রতিরোধ্য থাকবে? সড়ক-মহাসড়ক এমনকি বাড়ির সামনের রাস্তায় বেরিয়েও আবার সুস্থভাবে ফেরা যাবে কিনা, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর সেই অনিশ্চয়তার চূড়ান্ত পরিণতি কখন কাকে বরণ করতে হবে কেউ জানে না। রাস্তায় জীবন যাবে, গণমাধ্যমে সংবাদ হবে, স্বজনহারাদের ক্রন্দন চলতেই থাকবে? আর এ জীবনহানির মতোই সমান্তরাল চলবে পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে চালকদের বেপরোয়াপনা আর ঘাতকদের বিচার না করার মতো ঘটনা? না তা হতে পারে না। দুর্নীতিমুক্ত বিআরটিএ এবং দুর্নীতিমুক্ত আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে চলমান আইনেও সড়ক দুর্ঘটনার রাশ টানা সম্ভব। দোষী বা অপরাধীদের পক্ষালম্বন যারা করবেন তারা যে বা যারাই হোন তাদের বিরুদ্ধেও সরকারকে কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত মামলাগুলোয় আইনের যে ফাঁক থাকে তা বন্ধে প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের নিষ্ট হতে হবে। সড়ক নৈরাজ্যের অবসান ঘটাতে সরকার দ্রুত সব রকম ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে-এটিই প্রত্যাশিত।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।