২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা নিয়ে শঙ্কায় ইসি

কক্সবাজার সময় ডেস্কঃ জনবল সংকটের কারণে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সুষ্ঠুভাবে ভোটার তালিকা প্রকাশ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্স অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদও চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পের মেয়াদ আর নতুন করে বাড়াচ্ছে না। অবশ্য পরিস্থিতি উত্তরণে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এক হাজার ৬১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে. এম. নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ প্রকল্পের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইসি সূত্র জানায়, এতদিন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্স অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ প্রকল্পের আওতায় ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ স্ট্মার্টকার্ড প্রকল্পের কাজ চলেছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ইসির আগ্রহ থাকলেও বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে ইসির এনআইডি উইংয়ের (জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনু বিভাগ) স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা প্রণয়ন কঠিন হয়ে পড়বে। এমনকি স্ট্মার্টকার্ড বিতরণের কাজও বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ জানান, প্রকল্পটি কমিশন সভায় প্রাথমিকভাবে অনুমোদন হয়েছে। এটি এখন সরকারের সংশ্নিষ্ট বিভাগ হয়ে একনেক সভায় (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) যাবে। কমিশন আশা করছে, দ্রুততম সময়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা যাবে।

বৈঠকে এনআইডির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম উত্থাপিত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ কোটির বেশি ভোটারের তথ্যসংবলিত তথ্যভান্ডার রক্ষণাবেক্ষণ, তথ্য হালনাগাদ, পরিমার্জন ও ছবিসহ নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুতিতে বিশ্বব্যাংক সহযোগিতা করছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ২৫ লাখ নতুন ভোটারের তথ্য হালনাগাদের কাজ চলছে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এসব কার্যক্রম শেষ করতে হবে। যদিও আগামী ৩১ ডিসেম্বর আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না করার অভিমত দিয়েছে। এ অবস্থায় আইডিইএ প্রকল্পে দক্ষ জনবলের অনুপস্থিতিতে এনআইডির স্বল্প জনবল দিয়ে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে হালনাগাদ করে শেষ ভোটার তালিকা প্রকাশ করাসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হবে। সমস্যা থেকে উত্তরণে আইডিইএ প্রকল্পের দক্ষ জনবলকে সম্পৃক্ত করে একটি খসড়া প্রকল্পের ডিপিসি প্রস্তুত করা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদানে টেকসই অবকাঠামো উম্নয়ন প্রকল্প’। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে নির্বাচন কমিশন। মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় মোট এক হাজার ৬১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যোগ্য সব নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ, ডাটাবেজ হালনাগাদ করা, নিবন্ধিত এবং নিবন্ধনযোগ্য নাগরিকদের ১০ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ নিয়ে ডাটাবেজ শক্তিশালী করাসহ অনেক উদ্দেশ্যর কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের জনবল দেখানো হয়েছে দুই হাজার ২৪ জন। তবে অধিকাংশ খরচই দেখানো হয়েছে স্ট্মার্টকার্ড ছাপানোর কাজে মেশিনসহ অন্য সরঞ্জাম কেনার খাতে।
আইডিইএ প্রকল্পের কাজে ধীরগতি :ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে প্রকল্পটিতে শুরু থেকেই ছিল মন্থর গতি। পরিচয়পত্র তৈরির জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২০১১ সালে ইসির চুক্তি হয়। তবে কার্যত প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের দিকে। প্রথমে প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। পরে ইসির আগ্রহে বিশ্বব্যাংক এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায়।

এ প্রকল্পের অধীনে স্ট্মার্টকার্ডের জন্য ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিসের (ওটি) সঙ্গে ইসির ৮১৬ কোটি টাকার (১০২ কোটি ডলার) চুক্তি হয় ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে দেশের নয় কোটি স্ট্মার্টকার্ড পারসোনালাইজেশন করে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তাতে ব্যর্থ হয়। পরে ওটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। অথচ জুন পর্যন্ত তারা উপজেলা পর্যায়ে মাত্র এক কোটি ৯৮ লাখ (১২ দশমিক ২০ শতাংশ) কার্ড পৌঁছাতে পেরেছে।

 

ইসি সূত্র জানাচ্ছে, ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওটি ফাঁকা (্ব্নাঙ্ক) কার্ড সরবরাহ করে। ঢাকায় আনার পর তাতে ব্যক্তির প্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত করে পারসোনালাইজেশন করা কার্ড উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো ছিল ইসির দায়িত্ব। গত জুন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের হাতে আমদানি করা ্ব্নাঙ্ক কার্ড আছে ছয় কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার। কার্ড দরকার আরও প্রায় দুই কোটি ৩৬ লাখ। এ পর্যন্ত স্ট্মার্টকার্ড হাতে পেয়েছেন মাত্র দুই লাখ ৫৭ হাজার ভোটার।
এনআইডি উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসির তথ্যভান্ডারে ১০ কোটি ১৭ লাখের বেশি ভোটারের তথ্য আছে। এখন ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের কার্ড দেওয়া হচ্ছে। যারা ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারির পর ভোটার হয়েছেন, তাদের এখনই স্ট্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। তারা আপাতত কাগজে লেখা লেমিনেটেড পরিচয়পত্র পাবেন।
এর আগে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী সমকালকে জানিয়েছিলেন, সব নাগরিকের হাতে স্ট্মার্টকার্ড তুলে দিতে ইসির সামনে নতুন প্রকল্পের কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় জীবনে নাগরিকের পরিচয়পত্র এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে হলেও এই কাজ শেষ করতে হবে। ফ্রান্সের ওটির সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা আমাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জাতীয় তথ্যভান্ডারে প্রবেশের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের প্রস্তাব কমিশনের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

গত বছরের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্ট্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন। পরদিন ৩ অক্টোবর থেকে রাজধানী ঢাকা ও বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর মধ্যে কার্ড বিতরণ শুরু হয়। ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় বিতরণ কার্যক্রম চলে। রাজধানীর বাইরে গত ১৬ মার্চ চট্টগ্রাম ও গত ২ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীতে কার্ড বিতরণ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে অন্য বিভাগীয় শহরে এবং জেলা, উপজেলা/পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্ড বিতরণের পরিকল্পনা ছিল ইসির।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।