২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

নির্বাচনে যাওয়া প্রশ্নে বিএনপিতে দুই মত

 


আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে বিএনপিতে দুই ধরনের মত রয়েছে। দলের একটি অংশ কিছু ‘ছাড়’ পাওয়ার শর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান রেখেও নির্বাচনে যেতে রাজি। এই অংশটি কোনোভাবেই নির্বাচন বর্জনের পক্ষে নয়। আর অন্য অংশটি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে রেখে কিছুতেই নির্বাচনে যেতে রাজি নয়। তাদের আশঙ্কা, শেখ হাসিনা ওই সরকারের প্রধান থাকলে যেকোনও পরিস্থিতিতেই নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়া হবে। বিএনপিকে সেই ফাঁদে ফেলার জন্য বিএনপিরই একটি অংশকে সরকার নির্বাচনের পক্ষে মাঠে নামিয়েছে বলেও অভিযোগ ওই অংশের।
বিএনপির একটি অংশ বলছে, নির্বাচনকালীন সরকারে ন্যূনতম কিছু ছাড় পেলেই নির্বাচনে যাওয়া উচিত বিএনপির। এমনকি, অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘ছাড়’ পাওয়া গেলে দরকষাকষির এক পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে প্রধান রেখেও নির্বাচনে যেতে সমস্যা দেখছে না দলের এ অংশটি।
দলের অন্য অংশটি বলছে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন মরতারের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে রেখে নির্বাচনে অংশ নিলে ফলাফল পাল্টে দিয়ে বিএনপিকে পরাজিত করা হবে। তাদের বসানো হবে বিরোধী দলে। তাদের মতে, পরবর্তী নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার জন্যই বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার কৌশল সরকার করছে। আর ওই কৌশলের অংশ হিসেবেই বিএনপি যেন নির্বাচনে যায়, তা নিশ্চিত করতে বিএনপিরই একটি অংশকে মাঠে নামিয়েছে সরকার।
এদিকে, নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে আগ্রহী অংশটির যুক্তি— বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনি জোয়ারে শেষ পর্যন্ত বিএনপিই জয়ী হবে। তা না হলেও বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি টিকে থাকবে। কিন্তু আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। কারণ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী পর পর দু’বার নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে।
সূত্র বলছে, এই অংশটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব উত্থাপনের পক্ষে। এই প্রস্তাবনা তৈরির কাজও চলছে। তারা বলছেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। কিন্তু ‘নির্বাচনে যাব না’— এ কথা তারা কখনই বলছে না। বরং নির্বাচনে ‘না যাওয়ার’ কথা যারা বলছেন, তাদেরও সমালোচনা করছেন তারা। তাদের অভিযোগ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়াকে সমর্থনযোগ্য করার জন্যই এসব বলা হচ্ছে। এমনকি, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে তারাই সরকারের ‘চর’ হিসেবে কাজ করছেন কিনা, এমন সংশয় ও আলোচনা আছে দলের এই অংশের নেতাদের মধ্যে।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, আগামী নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়া প্রশ্নে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতাদের দেওয়া বক্তৃতা-বিবৃতিতে মতদ্বৈততা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শুরু থেকেই বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। শুক্রবার (১০ মার্চ) ঢাকা রিপোটার্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভাতেও তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও শেখ হাসিনা অধীনে নির্বাচনে যাব না।’ অনেকের মতে, তার এ ধরনের বক্তৃতা সমঝোতার পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে।
অন্যদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ সিনিয়র নেতারা সরকারের ওপরে চাপ অব্যাহত রাখলেও সমঝোতার পথ উন্মুক্ত রাখার পক্ষে। আর এজন্য তারা বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচন হবে না। কিন্তু সরাসরি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বলে উল্লেখ করছেন না তারা। নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে শুক্রবারই (১০ মার্চ) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এই দু’নেতা বলেন, সহায়ক সরকারের প্রস্তাবও শিগগিরই দেওয়া হবে। বিএনপির মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য সরকার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের স্থায়ী কমিটির অন্য এক নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও খালেদা জিয়াকে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাব বা যাব না, এটি বলার সময় এখনও আসেনি। কারণ বিষয়টি নির্বাচনের সময় বা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। এখন এটুকুই বলতে পারি, নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের দাবি আদায় করেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়া প্রশ্নে বিএনপিতে মতবিরোধ নয়, রয়েছে সমন্বয়হীনতা। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে সমন্বয় করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নেতারা বক্তৃতায় যাই বলেন না কেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।’ তিনিও বলছেন, সরকারকে চাপে ফেলার জন্য হয়তো বিএনপি নেতারা এখন একেকজন একেক ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। নির্বাচনের চূড়ান্ত সময় ঘনিয়ে এলে সমন্বয় করেই সব বক্তব্য দেওয়া হবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএনপির নির্বাচনে যেতে অনাগ্রহী অংশটির প্রভাবেই বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু ওই নির্বাচন বর্জন নিয়ে এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে দলে। তাতে দলের একাংশ বলছে, ওই নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি এতটা বিপর্যয়ের মুখে না-ও পড়তে পারত। দলের আরেক অংশের মত, মাঠের পরিস্থিতিতে বিএনপিকে পরাজিত করা কঠিন ছিল। আর নির্বাচনে পরাজিত হলেও সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে টিকে থাকত বিএনপি। এখনকার মতো কোণঠাসা অবস্থায় পড়তে হতো না।
সূত্র জানায়, সরকারের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। ওই নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগেও বিএনপির নেতারা বিশ্বাস করেছেন যে, সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না। ‘সরকার নির্বাচন করতে পারবে না’— এমন বার্তা দিয়ে বিএনপির নেতাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিল বলে আলোচনা চলছে দলে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।