১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১২ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬


পরিবহন সমিতির নামে বদি শ্যালকের কোটি টাকা লুটপাট

“ধৈর্য্য ধরো, সহ্য গরো ওরে শ্রমিক ভাই,মনের মতো সভাপতি আঁরার মামুন ভাই”-  প্রকাশ্যে নৃত্যের তালে তালে চলছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের এক নারী শিল্পীর কন্ঠে শ্রমিক নেতার বন্দনা।

অশালীনতায় তথাকথিত বিনোদনের নামে  ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও চিত্রটি উখিয়া উপজেলা সিএনজি, অটো রিকশা, টেম্পু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের বার্ষিক বনভোজনের দৃশ্য।

সংগঠনটির সভাপতি  আনোয়ার সিদ্দিকী মামুন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী আরেক সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের চাচাতো ভাই তিনি।

জোরপূর্বক মাথাপিছু চাঁদা নিয়ে লোকচক্ষুর সামনে বিতর্কিত মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করে নিজের বন্দনা করানো মামুনের দাপটে অসহায়ত্ব বরণ করতে হয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের গণপরিবহন সেক্টরে নিয়োজিত প্রায় দুই হাজার শ্রমিক’কে।

আওয়ামী সরকারের সর্বশেষ চার মেয়াদের প্রথম আমল থেকেই উখিয়ায় মামুন শুরু করেন ত্রাসের রাজত্ব, ২০১২ সালে প্রথমে অনুমোদনহীন ও নামসবর্স্ব সমিতি চালু করে জিম্মি করতে থাকেন পরিবহন শ্রমিকদের।

২০১৫ সালে কথিত ঐ সমিতির সদস্য হওয়া ৪৪৮ জন সিএনজি চালকের আমানত হিসেবে রক্ষিত ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ তুলে তৎকালীন উপজেলা সিএনজি, অটো রিকশা, টেম্পু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটি।

তোপের মুখে পড়ে সে সমিতি ভেঙ্গে দেন মামুন, বছর না পেরোতেই দুলাভাই বদির ক্ষমতার দাপটে দখলে নেন তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া শ্রমিক ইউনিয়নকে।

৮ বছর ধরে সরকারিভাবে নিবন্ধিত ও বর্তমানে প্রায় ১ হাজার সদস্যের এই সংগঠনকে ব্যবহার করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন মামুন- সংরক্ষিত বনভূমি দখল করেছেন মার্কেট, দামী গাড়ি হাঁকিয়ে চলাফেরার পাশাপাশি বানিয়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি।

উপজেলার দশটি পয়েন্টে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলে নিজের অনুগতদের বানান লাইনম্যান, যেখানকার চালকদের থেকে প্রতিদিনে গড়ে ১ লক্ষ টাকা দৈনিক হিসেবে মাসে ৩০ লক্ষ চাঁদাবাজি করেন তিনি।

এছাড়াও হাইওয়ে পুলিশ সহ প্রশাসনকে আয়ত্বে রাখার কথা বলে টোকেন দিয়ে সদস্যদের কাছে জনপ্রতি ৫০০ টাকা হারে প্রতি মাসে আদায় করা আরো বাড়তি ১০ লক্ষ টাকা ঢুকতো মামুনের পকেটে।

সদস্যরা জানান, সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আদায় ছাড়াও বিচারের নামে ঘুষ নেওয়ার মতো এমন কেনো অনিয়ম নেই যা করেননি মামুন।

আলি হোসেন নামে স্থানীয় এক সিএনজি চালক জানান ” লাইন ও সমিতি পরিচালনা সহ প্রশাসন ম্যানেজের কথা বলে আমাদের রক্তঘামের অজস্র টাকায় পকেট ভরেছে রক্তচোষা মামুন এমনকি বিচার শালিসের নামে চালক ভাইদের উপর সে চালাতো পাশবিক নির্যাতন।”

সংগঠনের অর্থ সম্পাদক জুবাইদুল হক জুয়েল বলেন, ” দায়িত্বে থাকার পরও সংগঠনের কোষাগার পরিচালনায় আমার কোনো অধিকার ছিলো না, সভাপতি নিজেই সদস্যদের কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অর্থ হিসাব সহ যাবতীয় তথ্য বুঝিয়ে না দিয়ে এখন তিনি পলাতক, আমরা আমাদের পাওনা ফেরত চাই।”

জানা গেছে পার্শ্ববর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ জগতেও আছে মামুনের প্রভাব,সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আরসার অনেক নেতার সাথে তার সখ্যতার প্রকাশ্য প্রমাণ মেলে সরকার পতনের পরদিন।

জাহেদ নামে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্যানুযায়ী, আরসার ভাড়াটে শতাধিক সন্ত্রাসী এনে উখিয়া স্টেশনে অগ্নিসংযোগ-ভাঙ্গচুর সহ সহিংসতায় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মামুন এবং ছুঁড়েন কয়েক রাউন্ড গুলিও।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৬ তারিখের পর থেকে এলাকায় দেখা যায়নি মামুনকে এবং তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম হোসাইন জানিয়েছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পূর্ব-পরবর্তী সময়ে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া উখিয়া থানায় তিনটি মামলার আসামী মামুন।

সূত্র : যুগান্তর

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।