এম. জাহেদ চৌধুরীঃ মাসুদ রেজা সাথে আরো পাঁচ বন্ধু নিয়ে বেড়াতে এসেছেন কক্সবাজারে। এখানে এসে কয়েকদিন বিভিন্ন জায়গা ঘোরার পর তারা খবর পান মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের। খবর পেয়ে তারা ঘুরতে আসেন কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে। এসে দেখেন উদ্যানের ভেতর ইকো ট্রি এডভেঞ্চারের।
এ সময় প্রতিবেদকের সাথে দেখা হয় মাসুদ রেজাসহ তার পাঁচ বন্ধুর। তারা প্রতিবেদককে বলেন, চারিদিকে সবুজের সমারোহ। সাথে ইকো এডভেঞ্চারের নানা বিষয়। সত্যি মনোমুগ্ধকর। এখানে না এলে বুঝতেই পারতাম না এই চকরিয়ায় লুকিয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ দৃশ্য। আমরা আগে যদি জানতাম তবে রাতযাপনের ব্যবস্থা করে আসতাম।
পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক লাগোয়া চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে দেশের প্রথম ইকো এডভেঞ্চার করা হয়েছে। মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে ইকো ট্যুরিজমে পর্যটকদের জন্য ট্রি-এডভেঞ্চার ঝুলন্ত, ক্যাম্পিং ও হেমক নির্মাণ করা হয়েছে। নীরবে নিরাপত্তায় বন্যপ্রাণী দেখার পাশাপাশি ইকো এডভেঞ্চারের নানা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এখানে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ৩৯৬ হেক্টর বনভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ইকো ট্যুরিজম। এটি ইতোমধ্যে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এখানে এডভেঞ্চার করতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন মেছোবাঘ, হাতির পাল, বানর, উল্টোলেজ বানর, বনবিড়াল, খাটাশ, বনমোরগ, শুশুক, ইগল, সবুজ ঠোঁট ফিঙে, চিল, শ্যামাসহ দেড় শতাধিক প্রজাতির পাখি, গুইসাপ, হ্যাজা সাপসহ নানা প্রজাতির সাপ ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী। পর্যটক-দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী রাখা হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে পর্যটক-দর্শকদের নীরবতা পালন করতে হবে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ট্রি এডভেঞ্চারটি চালু হয়। গর্জন গাছের মধ্যভাগে রোপওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। কেন্দ্রের প্রবেশ ফি মাথাপিছু ১০ টাকা। আর ট্রি এডভেঞ্চারের ধাপসমূহ শেষ করতে জনপ্রতি ৫০ টাকা। রাতে ক্যাম্প করলে তাঁবুপ্রতি ভাড়া দিতে হয় ৩৫০ টাকা। এখানে তাঁবু আছে ১২টি। ২৪ জন গাইড তাদের তদারকি করেন। পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করা ফিতে চলে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীদের বেতন-ভাতা। প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ট্রি এডভেঞ্চারটি চালু করে বেসরকারি সংস্থা ইউএসএআইডি’র নেকম-ক্রেল প্রকল্প। এটি পরিচালনা করছেন কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন মেদাকচ্ছপিয়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি)। মেদাকচ্ছপিয়ার জাতীয় উদ্যানের কিছুটা অংশ নিয়ে এই এডভেঞ্চারটি গড়ে তোলা হয়েছে।
এখানে একদিকে বনের ভেতর বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ অন্যদিকে রোমাঞ্চকর ইকো এডভেঞ্চারে নিজেদের মাতিয়ে রাখতে পারবেন প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণকারীরা। যা বাংলাদেশে প্রথম। ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) এর ক্রেল দেশি-বিদেশি পর্যটক আর দর্শনার্থীদের জন্য প্রথম এই ইকো এডভেঞ্চার ব্যবস্থাপনা করেছে।
ইকো গাইড হামিদুল ইসলাম জানান, এখানে নিয়মিত পর্যটকরা আসেন। তারা নীরবে-নিভৃতে উদ্যানের বিভিন্ন গাছ-গাছালি, পশু-পাখির সাথে মিতালীতে মেতে উঠেন। আবার অনেকে রাত্রিযাপন করেন। পাশাপাশি তাঁবু ঘেরে বারবিকিউসহ নানা ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে ঘন বনে রাতের সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন। আমারা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিই।
নেকমের সাইট অফিসার মো. আবদুল কাইয়ুম জানান, মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের অভয়ারণ্যে এ ইকো এডভেঞ্চার। এখানে এডভেঞ্চার করতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীরা বিভিন্ন পশু-পাখিসহ নানা ধরনের ইভেন্ট দেখে আনন্দ উপভোগ করছেন। তবে বন্যপ্রাণীদের স্বার্থে কিছু শর্ত পালন করতে হয় দর্শনার্থীদের।
বিশাল বনাঞ্চলে যেসব এডভেঞ্চার রয়েছে এরমধ্যে ট্রি এডভেঞ্চার, সাইক্লিং, হ্রদে বোটিং, ফিশিং, টি হাউস, ইকো হাউস, তাঁবু জলসা, হেমগ, গাছে ঝোলা, ট্রেল হাইকিং, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার অন্যতম।
বিট অফিসার সৈয়দ আবু জাকারিয়া জানান, রাতে বা দিনে গাছের মাছায় উঁচুস্থানে নিরাপদে বন্যপ্রাণি দেখা, রাতে গাছে রাত্রি যাপন, ঝুলে ঝুলে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যাওয়া, গাছের দোলনায় গা দুলিয়ে দেওয়াসহ প্রকৃতির কোলে বিশ্রাম নেয়ার অনন্য সুযোগ রয়েছে। পর্যটক-দর্শনাথীদের জন্য রয়েছে ইকো ট্যু’র গাইড এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এটি দেশের বৃহৎ মাদার গর্জন বাগান। উঁচু-নিচু পাহাড়, সমতল এলাকা নিয়ে ৩৯৫.৯৩ হেক্টর বনভূমিতে মাদারট্রি গর্জন ছাড়াও ডুমুর, বহেড়া, অর্জুন, বাঁশঝাড়, বেত, বাদাম, ছাতিমসহ নানা প্রকারের গাছ রয়েছে। যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।
মেদাকচ্ছপিয়া অত্যন্ত ঘন বন। এখানে বিরল প্রজাতির শুশুক পাখি, বিরল প্রজাতির উল্টো লেজ বানর রয়েছে। রয়েছে হাতির প্রজনন স্থান। নীরবে হাঁটা আর উঁচু স্থানে অবস্থান করে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণি দেখার সুযোগ এখানে রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।