রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (সিভিল উড) মো. এজাবুর আলমের বিরুদ্ধে (৩৫) ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। তিনি ছাত্রীদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়াসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করতেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক ছাত্রী।
সম্প্রতি ইনস্টিটিউটের সিভিল উড বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে ওই শিক্ষক কুপ্রস্তাব দিয়েছেন বলে অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মো. এজাবুর আলম এই প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক। তিনি গত দুই মাস ধরে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক মেসেঞ্জারে তার ‘এজাবুর আলম’ আইডি থেকে নানারকম সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে যেমন: আমাকে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাইয়ে দেবেন, পরীক্ষায় পাসের ব্যবস্থা করে দেবেন, হোস্টেলে রুমের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আমার মেসেঞ্জারে নানা কুরুচিপূর্ণ অশালীন কথাবার্তা বলেন। তিনি আমাকে প্রতিনিয়ত বিরক্ত করে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছেন। এছাড়া আমি তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে আমাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হেনস্তা করার জন্য রীতিমতো হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমাকে এই শিক্ষক বহুদিন ধরে নানারকম কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন। আমি বিরক্ত হয়ে গত ২৭ আগস্ট অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ করি। পরে তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। আমাকে তদন্ত কমিটি ডাকলে আমি গিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি খুলে বলি। পরে আমাকে তদন্ত কমিটি জানায়, আমি যেন পরেরবার ইনস্টিটিউটে গেলে অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে যাই। এদিকে, গত ২ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষক আমার বাবার অফিসে গিয়ে সমঝোতার জন্য প্রস্তাব দেন।
এদিকে, এজাবুর আলমের যৌন হয়রানির শিকার হয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়া ৫২তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। ভুক্তভোগী বলেন, আমি এ প্রতিষ্ঠানের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম। ২০১৮ সালে আমার প্রথম সেমিস্টার চলাকালে এই শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে ফেসবুকে যুক্ত করেন এবং মেসেঞ্জারে নানারকম কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলতেন। আমার কাছে তিনি অশ্লীল ছবি চাইতেন। নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে রাতে তার বাসায় যাওয়ার জন্য বলতেন। তার বিরক্ত সহ্য করতে না পেরে আমি অভিযোগ করবো বললে তিনি আমাকে এখানে থাকতে দেবেন না এবং উল্টো আমার সম্মান নষ্ট হবে বলে হুমকি দেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও বলেন, এক রাতে তিনি আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন জানিয়ে নিচে নামতে বলেন। পরে আমি নিচে গেলে আমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে আমি পালিয়ে চলে আসি। সেবার আমি প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে পারিনি, পরে দিয়েছিলাম। এভাবে দিনের পর দিন তিনি আমাকে হেনস্তা করতে থাকলে আমি তৃতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা না দিয়ে পরিবারের পরামর্শে চট্টগ্রাম চলে আসি। বর্তমানে আমি এখানে একটি বেসরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি হয়েছি। আমার জীবনের তিনটা বছর নষ্ট করেছে এ শিক্ষক, আমি তার উচিত বিচার চাই।
নাম প্রকাশ না করে প্রতিষ্ঠানটির ৫১তম ব্যাচের এক ছাত্র বলেন, ওই শিক্ষক আগে থেকেই মেয়েদের এরকম কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন। তার বিরুদ্ধে সেবার অধ্যক্ষকে অভিযোগ করলে তিনি দেখবেন বলে আর কিছু করেননি। আমরা তার বিচার চাই।
বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি অভিযোগ পাওয়ার পরে ৩০ আগস্ট সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করি। আমাকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
অভিযুক্ত শিক্ষক বর্তমানে প্রশিক্ষণ নিতে চট্টগ্রামে আছেন জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, তিনি ওই শিক্ষার্থীর বাবার কাছে গেছেন কী না আমি জানি না। তবে ছাত্রীর বড় বোন আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে আগে লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। এখন লিখিত অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
এদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষক এজাবুর আলমের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।