পাহাড়, সাগর, নদী বিধৌত প্রকৃতির অভয়ারণ্য পর্যটন নগরী ইনানী এখন পর্যটক শূণ্য। ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালের ৬৬ দিনে কাংঙ্খিত পর্যটক না আসায় হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউস গুলোতে কর্মচারী ছাঁটাই থামছে না। এ অবস্থায় পর্যটন নির্ভর হাজারো ক্ষুদে ব্যবসায়ীর দিন যাচ্ছে অভাব অনটনে। কবে নাগাদ এহেন জাতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে আবারো পর্যটন ব্যবসায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে তা নিয়ে প্রহর গুনছে সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার কলাতলী হয়ে টমটম, অটোরিক্সা, সিএনজি, জীপ-মাইক্রো যোগে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পথে মাত্র আধা ঘন্টার রাস্তা এ সাগর কন্যা ইনানী। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে এখানে পর্যটকদের চাহিদা মতো বিলাসবহুল অবকাশ যাপনের সুযোগ না থাকলেও বিস্তুৃর্ণ সাগর, পাহাড়, নদীসহ এলোমেলো ভাবে বয়ে যাওয়া খালের শাখা প্রশাখার বাস্তবচিত্রের জন্য ইনানী পর্যটন পিপাসুদের মনকাড়া বীচ হিসেবে দেশবিদেশে আলোচিত হলেও ৬৬ দিনের লাগাতার অবরোধ হরতালে বিধ্বস্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন ইনানী ঘুরে দেখা যায় সী-বীচ এলাকা জনশূন্য খাঁ খাঁ করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানতে চাওয়া হলে উঠে আসে তাদের নিত্যদিনের জীবন জীবিকার হাতাশার চিত্র। এসময় বীচের মৌসুমী ব্যবসায়ী আলি আজগর (৩৮) জানায়, ধারদেনা করে ঝিনুকের বিভিন্ন মালামালের ফসরা সাজিয়ে বসেছিলাম অনেক আসা করে। কিন্তু পর্যটক না আসায় গুড়ে বালি হয়েছে। বীচের প্রসাধনী বিক্রেতা শামশুল আলম জানান, বেচা বিক্রি হোক আর না হোক প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। বর্তমানে দেনার ভার মাথায় নিয়ে পর্যটকের আশায় প্রহর গুনছি। বীচে পর্যটকের ছবি ধারণ করে বিক্রিরত ক্যামরাম্যান আবু ইউসুফ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পর্যটক না আসার কারণে আয় রোজগার হচ্ছে না। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। এভাবে অনেকেই হতাশার কথা বললেন।
বীচের প্রবেশ মুখে অবস্থিত লাভেলা রিসোর্টের ম্যানেজার মোঃ হোছন জানায়, এ হোটেলে ২৫ জন কর্মচারী আছে। তাদের বেতনভাতা দিতে না পারার কারণে ১২ জন কর্মচারী ইতিপূর্বে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে আরো কয়েকদিন চললে বাদ বাকী কর্মচারীও ছাঁটাই করতে হবে। প্যাভেল স্টোনের ম্যানেজার মাঈন উদ্দিন জানায়, লাগাতার অবরোধ হরতালের কারণে তাদের লাখ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। যা এক মৌসুম পর্যটক আসলেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। বীচে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক আলা উদ্দিন জানায়, পর্যটক না আসার কারণে তাদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্বপালন করতে হচ্ছে না। তবে মাঝে মধ্যে বীচ এলাকায় পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে।
ইনানী বহুমুখী ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ছৈয়দ হোছন জানান, ২ মাস ধরে ইনানী পর্যটক শূণ্য হয়ে পড়ার কারণে প্রতিটি ব্যবসায়ী মারাত্মক ভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে তাদের পরিবার পরিজনের উপর। সে আরো জানায়, পর্যটন নির্ভর হাজারো ক্ষুদে ব্যবসায়ীর দিন যাচ্ছে অভাব অনটনে। ইনানী বীচ ইজারাদার মৌলভী মনজুর জানান, পর্যটক না আসার কারণে তার নিলাম ডাকের সম্পূর্ণ টাকা গচ্ছা গেছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।