নগদ ১ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. তাজুল ইসলামকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পিআইও মো. তাজুল ইসলামের সরকারি বাসভবনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এই বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করে দুদকের একটি অভিযানিক দল।
দুদক দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে দুদকের একটি দল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাজুল ইসলামের অফিসে অভিযান চালায়।
এ সময় অফিসে তার কাছে ঘুষের ৫৫ হাজার টাকাসহ তাকে আটক করে। পরবর্তীকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে পিআইও তাজুল ইসলামের সরকারি বাসভবনে অভিযান শুরু করে। ওই বাসভবনে একাই থাকতেন তাজুল ইসলাম।
অভিযানিক দলটি পিআইও তাজুল ইসলামের ঘরের বিছানার নিচে, ৪টি ট্রাভেল ব্যাগসহ বাসার বিভিন্ন স্থানে একে একে বিপুল পরিমাণ টাকার সন্ধান পায়। বাসায় বিপুল পরিমাণ টাকা দেখে হতবাক হয়ে পড়ে দুদকের অভিযানিক দলটি।
বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের পর পার্বতীপুর অগ্রণী ব্যাংক থেকে আনা হয় টাকা গণনার মেশিন। রাত ৮টা পর্যন্ত সেই মেশিন দিয়ে গোনা হয় বিপুল পরিমাণ টাকা।
রাত ৮টায় দুদকের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান নিশ্চিত করেন মোট ১ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয় পিআইও তাজুল ইসলামের অফিস ও বাসা থেকে।
দুদকের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান জানান, গত চার বছরে পার্বতীপুর উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা সরিয়েছেন পিআইও তাজুল ইসলাম। তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে এই টাকার পাহাড় জমিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ১০৬ নম্বরে অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযানটি পরিচালিত হয়।
এ সময় দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এনডিসি মো. দবির উদ্দীন, পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহনাজ মিথুন মুন্নী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু তাহের মোহাম্মদ সামছুজ্জামান, দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক জিন্নাতুল ইসলাম, সহকারী পরিদর্শক মো. ওবায়দুর রহমান, আবদুল আজিজ ও পার্বতীপুর থানা পুলিশ উপস্থিত ছিলেন।
আটক মো. তাজুল ইসলাম ২০১৬ সালের ১ জুলাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুর উপজেলায় যোগদান করেন। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের নাজিরা খলিলগঞ্জ গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুর রাজ্জাক।
পার্বতীপুরের একজন চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপজেলার টিআর, কাবিখা, সোলার ক্রয়, গৃহনির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প হতে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করতেন তিনি।
দুর্নীতি দমন কমিশন দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু হেনা মো. আশিকুর রহমান জানান, দিনাজপুরে ২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন আইনে মোট ২৪টি মামলা দায়ের হয়। এ সব মামলায় গ্রেফতার করা হয় সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মোট ২৯ জনকে। গ্রেফতারকৃত ২৯ জনের মধ্যে ২৪ জনই ছিল সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
তিনি জানান, সরাসরি ঘুষ নেয়ার অপরাধে এবার দুদকের ফাঁদে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে মামলা হয় ৭টি। ঘুষ নেয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে গত ২৮ জুলাই জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের নাম উল্লেখযোগ্য।
যুগান্তর
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।