কক্সবাজারের পেকুয়ায় ছাত্রদলের এক কর্মীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী দুই শিক্ষক ও এক প্রদর্শককে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। গতকাল রোববার সকালে উপজেলার শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কলেজের অফিস এবং ছাত্রাবাসের দুটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
হামলায় আহত শিক্ষকেরা হলেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আলম, মোহাম্মদ বশির ও রসায়ন বিভাগের প্রদর্শক এনামুল হক। তাঁদের শিক্ষকদের উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। লাঠির আঘাতে শিক্ষক আলমের হাত ভেঙে গেছে। বাকি দুজন মাথায় আঘাত পেয়েছেন।
এদিকে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় নয় শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওবাইদুর রহমান।
কলেজ সূত্র জানায়, ৩ নভেম্বর থেকে কলেজে এইচএসসির নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বাংলা পরীক্ষায় মোহাম্মদ মিনার হোসেন নামের এক ছাত্রের কাছে নকল পাওয়ায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষাতেও নকলের বিরুদ্ধে কঠোর হন শিক্ষকেরা। এর জের ধরে গতকাল সকাল নয়টায় ছাত্রদল কর্মী সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে পরীক্ষার থেকে বহিষ্কৃত মিনার হোসেনসহ ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। পরে হোস্টেল ও অফিস কক্ষ ভাঙচুর চালায় উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা। গতকাল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
আহত শিক্ষক মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে কাউকেই চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করতে দেওয়া হবে না। এ কারণে পরীক্ষায় কাউকে অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এর জের ধরে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা ছাত্রদল করে কি না জানি না। তবে সবাই এই কলেজের শিক্ষার্থী।’
ছাত্রদল কর্মী সালাহউদ্দিন হামলায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, ‘শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের জের ধরে পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত চাপাচাপি করা হচ্ছিল। এ ছাড়া কলেজের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ফেল করানো হতো। এবারও অনেক শিক্ষক তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের (যারা তাঁদের কাছে প্রাইভেট পড়ে) রোল নম্বর নিয়ে রেখেছেন, যাতে পাস করিয়ে দিতে পারেন। এ নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে।’
জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি কামরান জাদিদ বলেন, ‘সালাহউদ্দিন ছাত্রদলের কর্মী হলেও কোনো কমিটিতে নেই। তবে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক। তাকে বহিষ্কারের কোনো ‘অপশন’ (সুযোগ) থাকলে অবশ্যই বহিষ্কার করা হবে।’
ঘটনার পরপর অধ্যক্ষ মো. ওবাইদুর রহমান তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ না দেওয়ায় সালাহউদ্দিন, মিনার হোসেন, রেজাউল, জয়সহ ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নয়জন শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অধ্যক্ষ বলেন, হামলায় জড়িত শিক্ষার্থীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে কলেজে শিক্ষকেরা কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনজুর কাদের মজুমদার গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন , কলেজ কর্তৃপক্ষ এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।