বিশেষ প্রতিবেদক
কলেরা ঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কলেরা রোগের ভ্যাকসিন (টিকা) খাওয়ানো কার্যক্রমের প্রথম রাউন্ড সম্পন্ন হয়েছে। ৬ লাখ ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীকে প্রথম রাইন্ডে এ টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আওতায় এসেছে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্টী মিলে প্রায় ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫১৪ জন। গত ১০ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত উখিয়ায় ১৫০ ও টেকনাফে ৬০টি মিলে ২১০টি কেন্দ্রে এ টিকা খাওয়ানো হয়। প্রথম রাউন্ডে ১ থেকে সব বয়সী মানুষকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ কর্মসূচীর ২য় রাউন্ড। এতে শুধু ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের টিকার আওতায় আনা হবে। এ রাউন্ডের টার্গেট ২ লাখ ৫০ হাজার।
মঙ্গলবার কক্সবাজারের সিভিল সার্জন কার্যালয় হল রুমে সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা আগমন অব্যাহত রয়েছে। তাই প্রথম রাউন্ডের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ হলেও রোহিঙ্গা ঢুকে পড়া সেসব পয়েন্ট এলাকায় ভ্রাম্যমান কয়েকটি কেন্দ্র টিকা খাওয়ানোর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
সিভিল সার্জন জানান, দূর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়া ও এক সাথে হঠাৎ বেশি সংখ্যক মানুষের অবস্থানের ফলে কলেরার ঝুঁকি দেখা দেয়। এটি পানি বাহিত রোগ হওয়ায় দ্রুত ছড়ায়। সেই দৃষ্টিকোন থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে কলেরার ঝুঁকির সম্ভাবনা শতভাগ। তাই এখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ও আশপাশের স্থানীয় জনগোষ্টীকে কলেরার টিকা খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে মতে প্রথম রাউন্ড সম্পন্ন হয়েছে। নতুন আসা টিকাহীন কেউ পূর্বের স্রোতে মিশে গেলে লক্ষটাই ভেস্তে যাবে। তাই সীমান্তে যারা পার হয়ে নতুন আসবে তাদের টিকার আওতায় নেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ থেকে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ রোগ ইতোমধ্যে বিদায় হয়েছে, তার সিংহভাগ আবার ফিরে আসতে পারে মিয়ানমার থেকে আসা বাস্তুুহারাদের মাধ্যমে। এটি বড় শঙ্কার বিষয়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ রোগগুলো আমরা কখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেব না। সে প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। একটি জায়গায় একসাথে ঘনবসতিতে কয়েক লাখ মানুষ থাকলে যে পরিস্থিতি হয় সে তুলনায় আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। যে পরিমান ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগি আসে তা স্বাভাবিকের পর্যায়ে পড়ে। তবে তা যেন কোন ভাবেই না বাড়ে সেদিকেই আমাদের নজর রয়েছে। এ লক্ষ্যেই উখিয়া-টেকনাফে অর্ধ শতাধিক মেডিকেল টীম কাজ করছে। যেখানে প্রায় একশজন ডাক্তার, শতাধিক সহকারি মেডিকেল অফিসার ও জিও-এনজিও মিলে কয়েক হাজার স্বাস্থ্যকর্মী মাঠে কাজ করছে। বাড়তি লোক আসায় বাড়তি জনবল দিয়ে তাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সিভিল সার্জন।
তিনি আরো জানান, শিশুদের সংক্রামক রোগ ছড়ানোর আশঙ্কায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টিকাদান কর্মসূচি নিয়মিত করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতোমধ্যেই ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত আশ্রিতদের হাম-রুবেলা, পোলিও এবং ভিটামিন-এ টিকা খাওয়ানো হয়েছে। উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পে থাকা সব আশ্রিতরাই এ টিকা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ডা. রনজন বড়–য়া রাজন, ডা. জামশেদুল হক, জেলা স্বাস্থ্য তত্বাবধায়ক সিরাজুল ইসলাম সবুজ, সিএসও সহায়ক ওসমান গনিসহ পদস্থ কর্মকতাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।