আট দিন ধরে ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইবেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।
তিনি বলেছেন, “আমরা অস্বস্তিকর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। আমার স্বামীকে ফিরে পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আবেদন জানাব শিগগিরই।”
সালাউদ্দিনের খোঁজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
২০১২ সালে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তার হস্তাক্ষেপ চেয়েছিলেন। ইলিয়াস রহস্যের মীমাংসা গত তিন বছরেও হয়নি।
বিএনপিপন্থি শিক্ষক নেতা অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দারের নেতৃত্বে ইউনিভার্সিটি টিচারর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার সালাহ উদ্দিনের গুলশানের বাসায় গিয়ে হাসিনা আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
হাসিনা আহমেদ এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, “স্বামী নিখোঁজের পর থেকে আমার ঘরে কোনো রান্না-বান্না হয় না। পাশের বাসার ভাবিরা রান্না করে খাবার পাঠায়। বাচ্চারা কীভাবে আছে, কী খায় কিছুই বলতে পারি না।”
সালাহ উদ্দিনকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার স্বামী যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তাহলে আদালতে হাজির করে তার বিচার করুন।”
গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেছেন হাসিনা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেনি। তার কোনো খোঁজও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে আগামী ৮ এপ্রিল হাই কোর্টে আবার শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে।
হাসিনা আহমেদ বলেন, “আমার স্বামীকে ফিরে পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছি না। এই আট দিনের মধ্যে গতকাল (সোমবার) সিটি এসবির একজন সাব ইন্সপেক্টর আমার সঙ্গে দেখা করেছে মাত্র।”
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার স্ত্রী হাসিনাও সংসদ সদস্য ছিলেন।
তাদের দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সৈয়দ ইব্রাহিম আহমেদ কানাডায় ও বড় মেয়ে পারমিজ আহমেদ ইকরা মালয়েশিয়াতে লেখাপড়া করেন। ছোট ছেলে সৈয়দ ইউসুফ আহমেদ ও ছোট মেয়ে ফারিবা আহমেদ রাইদা দেশেই থাকেন।
স্বামীর সন্ধানে সুশীল সমাজসহ দেশবাসীকে পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান হাসিনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ হায়দার বলেন, “আমি এ ঘটনায় স্তম্ভিত। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আট দিন যাবত একজন মানুষের খোঁজ পাওয়া যাবে না, কোনো সভ্য দেশে তা হতে পারে? আমরা সরকারকে বলব, তাকে দ্রুত খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা নিন।”
অন্যদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি টিচারর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তারা হাসিনা আহমেদকে সান্ত্বনা দেন এবং পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।