সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি আবারো নিজ দলের ভেতরে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। এর আগে আরো দুই দফায় তিনি এই আলোচনা তুললেও কয়েকদিনের ব্যবধানে তা হারিয়ে যায়। তবে আগের দু’বারের চেয়ে এবারের আলোচনাটিকে কিছুটা ‘অর্থপূর্ণ’ বলে দাবি করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। তাদের দাবি, সরকারের প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় এসে জাপা রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে সরকার থেকে বের হতে চাচ্ছে। তবে এই চাওয়ার ফলাফল নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবের উপর।
দলের নেতাদের এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে এরশাদ গণমাধ্যমকে জানান, মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাপার সংসদীয় দলের সভায় মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কখন কীভাবে জাপা সরকার থেকে বেরিয়ে আসবে তা ঠিক করার জন্য বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন। বৃহস্পতিবার এই সাক্ষাত হওয়ার কথা ছিল, তবে প্রধানমন্ত্রীর সময় না পাওয়ায় দেখা হয়নি।
এর আগে ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত দলের পার্লামেন্টারি পাটির্র বৈঠকেও মন্ত্রিসভা থেকে দলের নেতাদের পদত্যাগ করতে বলেছিলেন এরশাদ। ওইদিনও তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন দলের পার্লামেন্টারি পাটির্র প্রধান ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। দলের নেতাদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের বিষয়টি উত্থাপন করে এরশাদ সেদিন বলেছিলেন ‘আমরা বিরোধী দল, এটা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। আমরা সত্যিকারের বিরোধী দল হতে চাই। সেজন্য আমি তোমাদেরকে বলবো (দলের মন্ত্রীদের)-তোমরা অবিলম্বে সরকার থেকে বেরিয়ে এসো।’
মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসার বিষয়ে তখন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ইত্তেফাককে বলেছিলেন, ‘মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি শুধু গণমাধ্যমে দেখছি, কিন্তু এরশাদ সাহেব আজ পর্যন্ত কখনও সরাসরি আমাদেরকে পদত্যাগ করতে বলেননি। তাছাড়া এরশাদ সাহেব নিজেও পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, কাজেই পদত্যাগ করতে হলে আগে তাকেও করতে হবে, এরপর আমরা করব।’ রাঙ্গা ও চুন্নুর এই বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে এরশাদ ইত্তেফাককে বলেছিলেন ‘হ্যাঁ, একথা সত্য যে-আমি তাদেরকে এখনও পদত্যাগ করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বলিনি। কারণ আমি নিজেও মন্ত্রী, পদত্যাগ করতে হলে আগে আমাকে করতে হবে। সময় হলে আমি পদত্যাগ করবো, তাদেরকেও পদত্যাগ করতে বলবো।’
মন্ত্রিসভা থেকে জাপার বের হওয়ার বিষয়টি যে সরকারের উপর নিভর্র করছে সেটি খোলাসা হয় ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি ইত্তেফাককে দেয়া এরশাদের বক্তব্যেও। ওইদিন এরশাদ ইত্তেফাককে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সুযোগ দিলে তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে চান। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির ভিত্তিতেই তার ‘বিশেষ দূত’ পদ ছেড়ে আসতে আসতে চান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া তিনি বিশেষ দূতের পদ ত্যাগ করতে চাচ্ছেন না, কারণ তার মতে-এতে প্রধানমন্ত্রী ‘অসম্মান’ বোধ করতে পারেন।
মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসার এবারের আলোচনা সম্পর্কে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে ইত্তেফাককে বলেন, ‘মঙ্গলবারের পার্লামেন্টারি পাটির্র বৈঠকে স্যার আমাদেরকে বলেছেন-আমিও বিশেষ দূত থেকে পদত্যাগ করবো, আপনারাও মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিন, কারণ আমি দলের নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলাম, সেখানে সবাই বলেছে-আমাদের মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসা উচিত, তৃণমূল নেতারাও এটা চান।’
প্যাডসর্বস্ব দল নিয়ে এরশাদের জোট
এদিকে, আগামীকাল রবিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন এরশাদ। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বিএনএ ও জাতীয় ইসলামী মহাজোট নিয়ে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ ঘোষণা করবেন তিনি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের বাড়িতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। তবে এই জোট গঠন নিয়ে খোদ জাপার ভেতরেই অসন্তোষ রয়েছে। দলের একাধিক নেতা ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্যাডসর্বস্ব এসব দলকে নিয়ে জোট ঘোষণার বিষয়টি রাজনীতিতে হাসির খোরাক যোগাবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।