সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, কক্সবাজারে ‘মোরা’ দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাস্তাঘাটের দুরবস্থা দেখে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে বলেছেন, ‘তোমাকে আগামীতে আর মনোনয়ন দেব না।’ তবে আবদুর রহমান বদি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেছেন, ‘এ ধরনের কথা যোগাযোগমন্ত্রী বলেননি। কিছু সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে লিখে মজা পায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘উনি (ওবায়দুল কাদের) যতদিন এমপি থাকবেন, আমিও ততদিন থাকব। যখন সংসদ ভেঙে যাবে, তখন প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন, কাকে নমিনেশন দেবেন।’
আবদুর রহমান বদি আরও অনেক প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত চার বছর ধরে রাস্তা মেরামত করা হয় না। সেই রাস্তার মেইটেনেন্স কি এমপি বদি করবেন, না যোগাযোগমন্ত্রী করবেন? ওই রাস্তার মালিক এমপি বদি, নাকি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়? আমি যদি রাস্তার মালিক হয়ে থাকি, তাহলে মন্ত্রী যা বলেছেন, তা সত্য। আর যদি রাস্তার মালিক না হয়ে থাকি, তাহলে মন্ত্রী কিছু বলেননি।’
তার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে এমপি বদি বলেন, ‘আমি সাজাপ্রাপ্ত হলে কিভাবে সংসদে যাই? সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে প্রশ্ন করলে আমার উত্তরটা পেয়ে যাবেন।’
এমপি বদির সাক্ষাৎকারটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো:
যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, আগামীতে আপনাকে আর মনোয়ন দেবেন না।
সেটা কি আপনি শুনেছেন?
না শুনি নাই, পড়েছি। লেখা দেখেছি।
লেখা দেখে থাকলে সেটা দেখে আপনিও যা ইচ্ছা, তাই লিখুন।
তাহলে ঘটনাটি কী?
কোনও ঘটনাই নেই, কোনও ঘটনাই ঘটেনি।
আপনি ও ওবায়দুল কাদের সাহেব তো একসঙ্গে ছিলেন।
ইয়েস, আমরা দুজন তো একসঙ্গেই…
উনি রাস্তাঘাটের খারাপ অবস্থা দেখে বলেছেন, ‘তোমাকে আর মনোনয়ন দেব না।’
ভেরিগুড। আমার রাস্তা, নাকি সড়ক ও জনপদের রাস্তা? গত চার বছর ধরে ভেড়িবাঁধ মেরামত হয় না। এটা সড়ক ও জনপথের রাস্তা। মেরামতের দায়িত্ব যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। এটা আমার না।
ওবায়দুল কাদের সাহেব তাহলে এ রকম কথা বললেনন কেন?
এ সব কথা আমাকে তিনি বলেননি। আমি কিছু জানিও না। আমার এন্ট্রি যারা আছেন, তারাই এসব বলেন। আমাকে কেউ এ বিষয়ে প্রশ্নও করেননি। আমি শুনিও নাই। আমি তো জনপ্রতিনিধি। আমার এলাকার জনগণের কথাই শুনতে হবে।
যে রাস্তা দিয়ে আপনারা যাচ্ছিলেন, সেই রাস্তা ভাঙাচোরা ছিল, তখন যোগাযোগমন্ত্রী এই কথা বলেছিলেন কিনা?
রাস্তা খারাপ! রাস্তা তো উনার, আমার না। রাস্তা যদি খারাপ হয়, তাহলে দোষটা কার? কার রাস্তার দোষ কার ঘাড়ে এসে পড়বে? যে রাস্তা দিয়ে তিনি গেছেন, সেটা যোগাযোগমন্ত্রীর কিনা, নাকি এমপি বদির? সেই রাস্তার মেইটেনেন্স কি এমপি বদি করবেন, নাকি যোগাযোগমন্ত্রী করবেন? ওই রাস্তার মালিক এমপি বদি, নাকি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়? আমি যদি রাস্তার মালিক হয়ে থাকি, তাহলে মন্ত্রী যা বলেছেন, তা সত্য। আর যদি রাস্তার মালিক না হয়ে থাকি, তাহলে মন্ত্রী কিছু বলেননি। আমার এন্ট্রি সাংবাদিকরা মিথ্যা লিখে দিয়েছেন। তারা মিথ্যা প্রকাশ করছেন।
আপনাকে নমিনেশন দেওয়া হবে না…
এখন কাউকে নমিনেশন দিচ্ছে না। সামনের নির্বাচনের নমিনেশন দেওয়ার কথা। এখনও সময় আসেনি। আমি যতদিন এমপি আছি, যোগাযোগমন্ত্রীও ততদিন এমপি আছেন। মন্ত্রিত্ব চলে যেতে পারে, তবে তিনি এমপি থাকবেন। উনি যতদিন এমপি থাকবেন, আমিও ততদিন থাকব। ঠিক কিনা বলেন? যখন সংসদ ভেঙে যাবে, তখন প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন, কাকে নমিনেশন দেবেন। আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটা আছে না? তারা এসব লেখাচ্ছে। তারা নমিনেশন চায়। তারা একটু মজা নেওয়ার জন্য লিখছে। আমিও মজা নিচ্ছি। আমিও বলছি তোরা লেখ।
তাহলে আপনার মূল কথা কী?
রাস্তাটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। পত্রিকায় মন্ত্রীর বক্তব্য দিয়ে যা ছাপা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা। আমার প্রতিপক্ষ আমাকে হেয় করার জন্য, না বুঝে, না শুনে এই কথাটুকু বলেছে। যা আদৌ সত্য না। সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে প্রয়োজন হলে মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
মামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রী আপনার ওপর ক্ষুব্ধ?
আমার মামলার সঙ্গে মন্ত্রীর ক্ষুব্ধ থাকার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা মতো অনেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামিই আছেন, তারাও সংসদে যান। আমি সাজাপ্রাপ্ত হলে কিভাবে সংসদে যাই? সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে প্রশ্ন করলে আমার উত্তরটা পেয়ে যাবেন।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।