জেলা বাস্তুহারা লীগের বিরুদ্ধে জমি দখল বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না! বিগত কয়েক বছরে বিভিন্নভাবে জমি দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর আবারও প্রধানমন্ত্রীর নাম দিয়ে জমি দখল করলো আওয়ামী লীগের এই অঙ্গ-সংগঠনের বিবদমান একাংশ। কক্সবাজার শহরের ইসলামিয়া মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসা ও বাহারছড়া উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন নিরীহ পরিবারকে উচ্ছেদ করা জমি দখলে নিলেন সভাপতি হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে ওই অংশটি।
এ ব্যাপারে জেলা বাস্তুহারা লীগের একাংশের সভাপতি হারুনুর রশিদ জানিয়েছেন, বাস্তুহারা লীগের জেলা ও শহর ১১ নং ওয়ার্ডের কার্যালয় নির্মাণ করার জন্য সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের নির্দেশনায় তারা জমিটি দখলে নিয়েছেন।
এদিকে জেলার একটি বৃহৎ মহিলা মাদ্রাসা ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতরে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় করা নিয়ে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলের এই কার্যালয়টি সেখানে নির্মিত হলে ওই এলাকার মহিলাসহ দু’টি শিক্ষা বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিপুল শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবন প্রক্রিয়া চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তবে সরকারি দলের অঙ্গ-সংগঠন হওয়ায় ভয়ে কেউই মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানান, ওই এলাকাটি এক প্রকার শিক্ষা অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। জেলার নারী শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসা ও বাহারছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো দু’টি প্রতিষ্ঠান সেখানে রয়েছে। বাস্তুহারা লীগের কার্যালয়টি নির্মিত হলে সেখানে রাত-দিন সবসময় বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন অবস্থান করবেন। এর ফলে মাদ্রাসা হোস্টেলের বিপুল ছাত্রীসহ দু’টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নিতে আসা অন্তত তিন সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীর পাঠক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। সেই সাথে ওই এলাকায় বসবাস করা সাধারণ লোকজনও ভোগান্তিতে পড়বেন। এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবাসী বাধা দিতে গেলে বাস্তুহারা লীগ নেতাদের হুমকিতে তারা পিছু হটতে বাধ্য হন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাহারছড়া উচ্চ বিদ্যালয় আঙিনার পাশের ওই জমিতে গত এক সপ্তাহ ধরে স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে বাস্তুহারা লীগের লোকজন। গত তিন দিনের ব্যবধানে স্থাপনার কাজ প্রায়ই শেষ হওয়ার পথে। স্থাপনার সামনে টাঙানো হয়েছে বিশালাকার সাইনবোর্ড।
গতকাল রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায়ই দেড় গন্ডা পরিমাণ সরকারি খাস খতিয়ানের জমির উপর বাঁশ দিয়ে নির্মিত বাস্তুহারা লীগের কার্যালয় নির্মাণে ১০/১২ জন শ্রমিক কাজ করছে। কাজও প্রায়ই শেষের পথে। শুধু মাত্র চাউনির কাজটা অসম্পন্ন রয়েছে। আজকালের মধ্যে পুরো কাজ সম্পন্ন হবে বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন। সামনের সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী বাস্তুহারা লীগ কার্যালয়: কক্সবাজার জেলা ও শহর শাখা ১১ নং ওয়ার্ড।’ সেই সাথে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানাও লেখা রয়েছে। শেষ প্রান্তে বড় অক্ষরে লেখা- প্রধান পৃষ্টপোষক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছারসহ একটি চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। জমিটি দখল করতে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করা রেডক্রিসেন্ট কর্মচারী হায়দার আলীর পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। যার কারণে হায়দার আলীর মৃত্যু হলেও তার ছেলে-মেয়েরা এখন বাস্তুহারা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা জমি উদ্ধারের বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নাম দিয়ে বাস্তুহারা লীগের জমি দখল নিয়ে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। নাম প্রকাশ না করে তারা দাবী করেন, প্রধানমন্ত্রীর নাম দিয়ে জমি দখল করা এটা সম্পূর্ণ দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী। আর প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্টপোষকতা বিষয়টিও শতভাগ ভুয়া।
মুঠোফোন বন্ধ ও ঢাকায় অবস্থান করায় অভিযোগের ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল আবছারের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. আহমদ হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নামে জমি দখল করার এখতিয়ার কারও নেই। এটি গঠনতন্ত্রী বিরোধী। এ রকম হয়ে থাকলে এদের বিরুদ্ধে দলীয় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।