নীতিশ বড়ুয়া,(রামু): মায়ানমার সরকারের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভুতি জানাতে রামুর বৌদ্ধরা আজ বৃহষ্পতিবার ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারনা পূর্ণিমায় বাকঁখালী নদীতে ভাসাবেনা কল্পজাহাজ, আকাশে উড়াবেনা ফানুস। প্রবারনা উৎসবের অর্থ নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ত্রাণ হিসেবে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারে অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় উপজেলার সকল বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষগণ উপস্থিত থেকে গুরুত্বপুর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন। এর আগে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত সভায় উপজেলার সকল বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সম্পাদকগন, বিভিন্ন বৌদ্ধ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরী সভায়ও এ সিদ্ধান্ত নেয় বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ।
রামু উপজেলার কেন্দ্রীয় সীমা বিহারে অনুষ্ঠিত রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদের সভাপতি প্রবীর কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের উপাধ্যক্ষ শীলপ্রিয় থের, রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ কে শ্রী জ্যোতিসেন থের।
রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, তপন বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা রমেশ বড়ুয়া, অলক বড়ুয়া, রাজেন্দ্র বড়ুয়া, দেবপ্রসাদ বড়ুয়া, পরিমল বড়ুয়া, অমিত বড়ুয়া, সজল বড়ুয়া, কমলেশ বড়ুয়া, সুমন বড়ুয়া, পুলক বড়ুয়া, সঞ্জয় বড়ুয়া, স্বপন বড়ুয়া, রাজমোহন বড়ুয়া, সাংবাদিক নীতিশ বড়ুয়া, অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া, চম্পক বড়ুয়া জুয়েল, সুরজিত বড়ুয়া, রজত বড়ুয়া রিকু, অমুল্য বড়ুয়া, বাবুল বড়ুয়া, হেমন্দ্র বড়ুয়া, বিপুল বড়ুয়া আব্বু, সিপন বড়ুয়া, খোকন বড়ুয়া, বিপক বড়ুয়া বিটু, সিপন বড়ুয়া, টিটু বড়ুয়া, সুদর্শন বড়ুয়া, প্রমথোষ বড়ুয়া, মনোরঞ্জন বড়ুয়া, সুনিল বড়ুয়া, রবিন্দ্র বড়ুয়া, প্রভাত বড়ুয়া, বাবু বড়ুয়া, শিপলু বড়ুয়া, বিধু বড়ুয়া, বাবুল বড়ুয়া, ক্ষেমশ বড়ুয়া প্রমুখ বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দুষ্কৃতিকারীরা সহিংসতা চালিয়ে রামুর বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে ছিলো। ওই সময় বাংলাদেশ সরকার ও দেশ-বিদেশের মানুষ রামুর অসহায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। সহানুভুতি জানিয়েছিলো জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। ধর্মের উপর আঘাত আনায় সে সময়ও রামুর বৌদ্ধরা সকল প্রকার উৎসব বর্জন করেছিলো। পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর সে দেশের সরকার অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে নারী-শিশুদের হত্যা, খুন করছে তার জন্য রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি অমানবিক নির্যাতন বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে আর্ন্তজাতিক বিশ্বকে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয় সভায়। মায়ানমারে যে সহিংসতা হচ্ছে তা বুদ্ধ ধর্মের পরিপন্থি। বুদ্ধ ধর্মে হিংসা, বিদ্বেষ, অন্যায়, অত্যাচার, হত্যা, নির্যাতন সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। মায়ানমারের সামরিক জান্তা যা করছে ধর্মমতে তার ফল তাদেরকে ভোগ করতেই হবে। রামু বৌদ্ধরা মনে করে ২০১২ সালের রামু সহিংসতা আর বর্তমানে মায়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন এক ও অভিন্ন। আমরা সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে। তাই রোহিঙ্গাদের প্রতি সমানুভুতি জানাতে এবছর প্রবারনা পূর্ণিমায় জাহাজ ভাসানো ও ফানুস উড়ানো উৎসব সহ সকল প্রকার উৎসব বর্জন করা হয়েছে। সে সাথে উৎসবের অর্থ রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। প্রবারনা পূর্ণিমার পরপরই একুশে পদক প্রাপ্ত উপ-সংঘরাজ, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র নেতৃত্বে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।