বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর কারণে এবার রোহিঙ্গা পারাপারে সহযোগিতায় নিয়োজিত দালালরা গা-ঢাকা দিতে শুরু করেছে। বেশ ক’জন দালাল প্রশাসনের নিকট ধরা পড়ার পর থেকে সীমান্তে এ অবস্থা বিরাজ করতে দেখা গেছে। তবে দালাল সিন্ডিকেট গা-ঢাকা দিলেও অতিগোপনে তাদের নেটওর্য়াক বন্ধ করেনি বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। গত কয়েক’দিন ধরে সীমান্তে কঠোর নজরধারী বাড়িয়েছে বিজিবি। এঅবস্থায় সীমান্তরক্ষীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতের আধাঁরে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রেখেছে রোহিঙ্গারা। বৃহস্পতিবারও উখিয়ার সীমান্ত ও টেকনাফের নাফ নদীতে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ও ট্রলার ভাসতে দেখা গেছে বলে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত লোকজন জানিয়েছেন। অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, বিজিবি যাদের পুশব্যাক করছে তারা ফের এপারে ঢুকছে। বিশেষ করে তারা মধ্য ও ভোররাতকে নিরাপদ মনে করে সীমান্ত পাড়ি দেয়।
শুক্রবার সকাল ১০টায় বিজিবি’র মহা পরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে টেকনাফ বন্দরের মালঞ্চ হলে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেওয়ার কথা রয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ। এ তৎপরতার ফলে আগের তুলনায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অনেকটা কমে আসছে। তবে গত কয়েকদিনে দেশের অভ্যন্তরে অসংখ্য রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার প্রশাসন রোহিঙ্গা পারাপারে সহযোগিতাকারী ১৩ জন দালালকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। তৎমধ্যে গত বুধবার দুই দালালকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাও প্রদান করা হয়। তারা হলেন, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ধামনখালি গ্রামের অলি আহমদের ছেলে সরওয়ার (১৯) ও একই ইউনিয়নের আব্দুর রহমান কাটা গ্রামের নুর মোহম্মদের ছেলে মৌলভী রফিক। উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, আটককৃতদের ভ্রাম্যমান আদালতে ৩দিনের সাজা ও ৫’শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও একইদিন টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের জাদিমুড়া গ্রাম থেকে আব্দুল মোনাফের ছেলে ওসমান গনি (৩২) ও টেকনাফ সদরের লম্বরিপাড়া গ্রামের আবুল শামার ছেলে শাহ আলম (২৭) কে গেফতার করা হয়।
টেকনাফ থানার ওসি আব্দুল মজিদ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ভোরে টেকনাফ উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তুষার আহম্মেদের নেতৃত্বে বিজিবি ও পুলিশের পৃথক যৌথ টাস্কফোর্স অভিযানে রোহিঙ্গা পারাপারের সহযোগিতার অভিযোগে ৭ দালালকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া এলাকার মৃত আব্দুস শুক্কুরের ছেলে মো. শফি উল্লাহ(৪২), একই এলাকার মৃত ওবাইদুর রহমানের ছেলে শামসুল আলম (৪৫), নাজির আহাম্মদ কালুর ছেলে সেকান্দর বাদশা (২৮), হ্নীলা নাইক্ষংখালী এলাকার আবুল হাসিমের ছেলে মো. আলম (৪৫), দমদমিয়া এলাকার সালামত উল্লাহর ছেলে মো. জুবাইর (২২), একই এলাকার বাঁচা মিয়ার ছেলে মো. ইদ্রিস(২৪) ও হ্নীলা মোচনী পাড়া এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে মো. জালাল উদ্দীন (৩৩)।
একইদিন দুপুরে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) তুষার আহম্মেদের নেতৃত্বে পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আটক শফি উল্লাহ, শামসুল আলম, সেকান্দর বাদশাকে ২ মাসের এবং মো. আলম, মো. জুবাইর, মো. ইদ্রিস ও মো. জালাল উদ্দীনকে এক মাস করে সাজা প্রদান করা হয়। পরে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের কক্সবাজার জেলে প্রেরণের জন্য টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানায়।
অপরদিকে ২ বর্ডার র্গাড ব্যাটলিয়ান অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জার আল জাহিদ জানান, টেকনাফ সীমান্তের নাফনদীতে রোহিঙ্গা বোঝায় ১৪টি নৌকা প্রবেশের চেষ্টা করার খবর পেয়ে বিজিবির টহল টিমকে অবহিত করা হয়। এরপর সকালের দিকে বিজিবি সদস্যরা দেশীয় জলসীমা থেকে ওই সব নৌকাগুলোকে মিয়ানমারের দিকে ফেরত পাঠানো হয় বলে জানায়। তবে সীমান্ত পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।