বিশেষ প্রতিবেদকঃ নৌকায় সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে বার বার লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে এপার থেকে কোন নৌকা নাফ নদে নামতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থা। ফলে গত দু’দিন ধরে কোন রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা নদী পার হয়নি। তাই বলে থেমে নেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আগমন। নৌকা না পেয়ে বড় প্লাস্টিক কনটেনারে (ড্রাম) ভর করে নাফ নদী পার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। এভাবে পারহয়ে বাংলাদেশে কূলে ভাসমান মিয়ানমারের এগার নাগরিককে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। বুধবার দুপুরে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের সংলগ্ন জেটি ঘাটের পূর্ব থেকে তাদের উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসা হয়। উদ্ধাার হওয়ারা মিয়ানমার বুচিদং (বুথিদং) এলাকার বলি পাড়া, পুমালি, টাইম্ম্যাখালীসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোস্টগার্ডের শাহপরীর দ্বীপ স্টেশন কমান্ডার লে. জাফর ইমাম সজিব বলেন, বুধবার দুপুরে শাহপরীর দ্বীপের সংলগ্ন জেটি ঘাটে টহলকালীন সময় প্রায় দু’কিলোমিটার পূর্বে নাফনদী সাঁতরিয়ে কিছু লোক বাংলাদেশ জলসীমা পার হতে দেখা যায়। এসময় টহলদল অভিযান চালিয়ে ভাসমান অবস্থায় খালি প্লাস্টিক কনটেনারে ভরকরা মিয়ানমারের ১১ নাগরিককে উদ্ধার করে। এর মধ্য ৫ জন নাফ নদী পাড়ি দিয়ে শাহপরীর দ্বীপের কাছা কাছি পৌছলেও অপর ৬ জন ক্লান্ত হয়ে কনটেনারে ভরদিয়ে নাফনদীতে ভাসছিলেন। উদ্ধার রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন কোস্ট গার্ডের এ কর্মকর্তা।
উদ্ধার হওয়াদের মাঝে ফয়েজ উল্লাহ ও ইমাম হোসেন জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদেরকে এক মাসের চেয়ে বেশি সময় গ্রামে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ঘর থেকে কোথাও বের হতে দিচ্ছিলনা। এতে খাবার সংকটে পড়ে যায় গ্রামের লোকজন। খেতে না পেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই সুযোগ পেয়ে তারা মঙ্গলবার রাতে নাফনদীর ওপারের তীরে চলে আসে। শুনেছিলাম তীরে আসলে নৌকা পাওয়া যাবে। কিন্তু অনেক অপেক্ষার পরও কোন নৌকা না পাওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে প্লাস্টিক কনটেনারে ভর করে নাদী সাঁতারে মনস্ত করি। ক্ষুধার জ্বালাই থাকতে না পেরে বেলা ৮টার দিকে তারা এপারের (বাংলাদেশের) উদ্দেশ্যে নদীতে নামে। সাঁতরাতে গিয়ে অনেকে মাঝখানে এসে ক্লান্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার না করলে হয়তো সলিল সমাধি হতো। তাদের দাবি, রাখাইন রাজ্যে সেনারা এখনো চরম বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে।
টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার হওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। স্বাভাবিকতা আসলে তাদের বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
টেকনাফ থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন খান বলেন, এটি উদ্বেগের বিষয়। আমরা মৃত্যুর মিছিল কমাতে চেষ্টা চালাচ্ছি আর রোহিঙ্গারা জীবন বাজি রেখে নদী সাতরাচ্ছে। পুরুষরা না হয় যেকোন ভাবে পার হলো। কিন্তু নারী বা শিশুদেরও যদি একই পদ্ধতিতে সাঁতরানো হয় তবে তা আরো ভয়াবহ হবে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)‘র তথ্য মতে, ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ক্যাম্প, আশপাশ ও সীমান্ত এলাকায় ৭ লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
প্রসঙ্গত, রবিবার দিবাগত রাতে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের ঘোলারচর এলাকার রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবিতে তৎক্ষনাত ৮ জনকে জীবিত ও দু’জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাত ১২টার পর থেকে সোমবার ও মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আরো ২৭ নারী-শিশু ও বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের স্থানীয়দের সহযোগিতায় দাফন করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।