২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

বঙ্গোপসাগরে মিলল ইউরেনিয়াম থোরিয়াম ক্লেসহ বিপুল খনিজ

বাংলাদেশের অগভীর ও গভীর সমুদ্রের তলদেশে অতি মূল্যবান খনিজ সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউরোনিয়াম ও থোরিয়াম।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আর অগভীর সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ ‘ক্লে’-এর সন্ধান মিলেছে। এটি সিমেন্ট তৈরির অন্যতম কাঁচামাল। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরের ১৩টি স্থানে ভারী খনিজ বালু পাওয়া গেছে। এ বালু ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইটসমৃদ্ধ। ব্লু ইকোনমি ও নীল সমুদ্রের অর্থনীতির সম্ভাবনা-সংক্রান্ত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সম্প্রতি করা একটি প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৪ সালের জুলাইয়ে ভারত এবং এর আগে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকা (টেরিটোরিয়াল সি), ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার পেয়েছে। এ বিশাল অঞ্চলে কী পরিমাণ মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ১৯টি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্লু ইকোনমি বা নীল সমুদ্রের অর্থনীতি হিসেবে খ্যাত এ খনিজ সম্পদ উত্তোলন করতে পারলে রাতারাতি ভাগ্য বদলে যাবে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের সমুদ্রের পাশেই মিয়ানমার এরই মধ্যে বড় গ্যাসক্ষেত্র পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সমুদ্র ভাগেও বড় ধরনের গ্যাসের মজুদ আছে। সরকার গত আট বছরে সাগরে তেল-গ্যাস উত্তোলনে বেশ কিছু বিদেশি কম্পানিকে ব্লক ইজারা দিলেও কাজে ধীরগতির কারণে এখন পর্যন্ত তেমন সাফল্য আসেনি।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেট্রো সেন্টারে আয়োজিত ‘ব্লু ইকোনমি সেল’ উদ্বোধন উপলক্ষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সমুদ্রে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, খনন ও আহরণ একটি বড় ধরনের কারিগরি বিষয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিজ্ঞানসম্মতভাবে এ কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। ঠিকমতো অনুসন্ধান ও জরিপ চালাতে না পারলে জাতীয় সম্পদের অনেক অপচয় হবে। ২০১৯ সালের আগেই সমুদ্র অর্থনীতিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি আনতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাগরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে একটি জরিপ জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া দেড় বছর ধরে ঝুলছে। ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেও এর সুরাহা করতে পারছে না। এ জাহাজ আনার বিষয়টি সমন্বয় করাই হবে ব্লু ইকোনমি সেলের প্রথম কাজ।

অমূল্য সম্পদের রত্নভাণ্ডার বঙ্গোপসাগরের তলদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার কিছু কিছু অংশে ইউরোনিয়াম ও থোরিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে ওই মজুদের স্থান সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সন্ধান মেলা ইউরোনিয়াম ও থোরিয়াম বাণিজ্যিকভাবে আহরণ সম্ভব কি না তা এখন খতিয়ে দেখছি আমরা। এ জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা এখন কাজ করছে বিভিন্ন স্থানে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ’

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের ১৩টি স্থানে ভারী খনিজ বালু আছে। এই বালু ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইটসমৃদ্ধ। বাংলাদেশ ও জার্মানির যৌথ জরিপে সাগরের ৮০ থেকে ১১০ মিটার গভীরতায় এই মূল্যবান সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, অগভীর সমুদ্রের তলদেশে কোবাল্ট, ভানাডিয়াম, মলিবডেনাম ও প্লাটিনামে গঠিত ম্যাঙ্গানিজ ক্রাস্ট এবং তামা, সিসা, জিংক, কিছু পরিমাণ সোনা ও রুপা দিয়ে গঠিত সালফাইডের অস্তিত্ব আছে। এসব অতি মূল্যবান সম্পদ সমুদ্রের ১৪০০ থেকে ৩৭০০ মিটার গভীরে রয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের তলদেশ শুধু অপার খনিজ সম্পদেই পূর্ণ নয়—৩০ থেকে ৮০ মিটার গভীরতায় এক ধরনের ক্লের সন্ধান পাওয়া গেছে। অগভীর সমুদ্রের এই ক্লে উত্তোলন করা গেলে বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পে বিপ্লব ঘটে যাবে। কারণ ক্লে সিমেন্ট উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল।

সম্পদ আহরণে যা করতে হবে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৫১ সালে ‘ভারতীয় ভূতত্ত্ব অধিদপ্তর’ গঠিত হয়। পাকিস্তান আমলে ভারতের আদলে একটি ভূতত্ত্ব অধিদপ্তর গঠন করা হলেও সেটি তেমন কার্যকর ছিল না। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ‘জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ (জিএসবি)’ গঠন করা হলেও গত সাড়ে চার দশকে প্রতিষ্ঠানটি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশের সমুদ্রের তলদেশের মূল্যবান সম্পদ শনাক্ত এবং উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, কারিগরি সক্ষমতা অর্জন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা জরুরি। দেশের ভূতত্ত্ববিদ, ভূপদার্থবিদ, ভূরসায়নবিদ ও যন্ত্র প্রকৌশলীদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা ও ভারতের খনিজ সমৃদ্ধ এলাকায় বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের সরেজমিন পরিদর্শনে পাঠানো উচিত। একই সঙ্গে জিএসবিকে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অর্থ দিয়ে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুরু হলো ব্লু ইকোনমি সেলের যাত্রা গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেট্রো সেন্টারে সমুদ্রসম্পদ আহরণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছে ব্লু ইকোনমি সেল। এ সেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

দেরিতে হলেও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন যাত্রা শুরু করা এ সংস্থা সাগরে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

অনুষ্ঠানে জ্বালানিসচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের সমুদ্রসীমা এখন বিশাল। সাগরে কী আছে তা এখনো আমরা ভালোভাবে জানি না। আগে মানসম্পন্ন জরিপ চালাতে হবে। সমুদ্রসম্পদ নিয়ে সামনে কাজ অনেক বাড়বে। এ সেলকে পরে বিভাগে রূপ দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ, পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. মমিন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও ব্লু ইকোনমি সেলের প্রধান প্রকৌশলী গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

প্রকৌশলী গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, সমুদ্রসম্পদ আহরণের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, পর্যটন, নৌ, মৎস্য, পরিবেশ, শিক্ষা, জ্বালানি, খনিজ সম্পদসহ বেশ কিছু মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা জড়িত। ফলে অনুসন্ধান ও উন্নয়নকাজ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা ও ধীরগতি তৈরি হয়। এটি দূর এবং সমুদ্রসম্পদ আহরণে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, পরামর্শ ও উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি তদারকি করবে ব্লু ইকোনমি সেল। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে অবহিত করে জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে সেলের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ২৫ জন জনবল নিয়ে যাত্রা শুরু করল সেলটি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন আরো লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। ’

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।