বিশেষ প্রতিবেদক:
দেশের কারাগার গুলোর কথা যখন উঠে তখন শুধু অভিযোগ আর অভিযোগই শোনা যায়। কারাগারে এই নাই, ওই নাই! কয়েদীদের সাথে করা হয় অমানবিক আচরণ। শুধুই দুর্নীতি আর দুর্নীতির খবর। কারাগার গুলোর সেই চিরাচরিত দৃশ্যের মাঝে যেন কক্সবাজার জেলা কারাগার খুবই ব্যতিক্রম। এখানে তেমন কোন অভিযোগ। যেন বদলে গেছে সবকিছু। বেড়েছে সেবার মান। বৈশি^ক করোনাকালিন সময়েও এই কারাগারে সামগ্রিক উন্নয়ন চিত্র ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ছিল খুবই সুন্দর। তাতেই খুশি কারাবন্দিরাও।
কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেলা সুপার মো. নেছার আলমের যোগ্য নেতৃত্বে এই কারাগারের মান সারাদেশে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এমনটাই জানিয়েছেন সদ্য জামিনে কারামুক্ত বেশ কয়েকজন বন্দি। তাদের ভাষ্যে, কক্সবাজার কারাগার আর আগের সেই কারাগার নেই। বেড়েছে মান, বেড়েছে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও কারাবন্দিদের জন্য সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা।
কারামুক্ত ওই বন্দিদের মতে, বর্তমান জেল সুপার মোঃ নেছার আলমের যোগ্য নেতৃত্বেই কক্সবাজার জেলা কারাগার বাংলাদেশের অন্য কারাগারগুলোর তুলনায় মানে ও ব্যবস্থাপনায় অনেক এগিয়ে। ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’- এই শ্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে কক্সবাজার জেলা কারাগারে ভেতরে বাইরে কর্মরতরা একাগ্রচিত্তে কাজ করছেন বলেও মনে করেন তারা।
একাধিক সুত্র মতে, ডেপুটি জেলার মনির হোসেনও কারাগারের স্বার্থরক্ষা করে বন্দি ও দর্শণার্থী সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
সুত্রগুলো মতে, মোঃ নেছার আলম জেল সুপার হিসেবে যোগদানের পর থেকে বিধিবিধান অনুসরণ করেই কারাগার পরিচালিত হচ্ছে। বিধিমোতাবেক প্রাপ্য সব সুবিধা বন্দিদের সমানভাবে দেয়া হচ্ছে।
সুত্রগুলো বলছে, কক্সবাজার কারাগারে টাকার বিনিময়ে কাউকে আলাদা কোন সুবিধা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। বিশেষ করে জেল সুপারের নেতৃত্বে কারাগারে শান্তি-শৃংখলা সৃষ্টি, কারা মনিটরিং, অসুস্থ বন্দিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, কারা ক্যান্টিনে ন্যায্যমূল্যের ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক তদারকি, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সর্বোপরি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পৌঁছে দিতে কাজ করছেন কারাগারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সুত্রগুলোর মতে, সততায় অবিচল থেকে মডেল কারাগারে রুপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছেন জেল সুপার মো. নেছার আলম।
বর্তমানে কারাগারে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসক নিয়োজিত আছেন। এই চিকিৎসকরা প্রতিদিন কারাবন্দি অসুস্থ রোগীদের দেখেন এবং চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। সেখান থেকে প্রকৃত অসুস্থ রোগীদের কারা হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এদিকে কক্সবাজারের কাছের উপজেলা রামুর নাপিতের চর এলাকার আমির হোসেন জানান, একমাস হাজতবাসের পর তার চাচাতো ভাই ইউপি মেম্বার আবুল ফজল গত ২০ ফেব্রুয়ারি জজ আদালত থেকে জামিন পান। জামিননামা কারাগারে পৌঁছানোর সাথে সাথেই তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, অতীতে আদালত থেকে জামিননামা কারাগারে পৌঁছলেও নানা টালবাহানায় সেই জামিননামা আটকে রাখা হতো। টাকা না দিলে সেই জামিননামা জমাই পড়ে থাকতো। এখন সেই রেওয়াজে ভিন্নতা পাওয়া গেছে। টাকা না দিয়েই আবুল ফজল মেম্বার কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন।
একই কথা জানিয়েছেন উখিয়ার মো. সরওয়ার কামাল। তিনিও একইদিন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
কারামুক্ত নুরুল হুদা ও হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তারা একটি মামলায় বেশ কিছুদিন কারান্তরীন ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে কারাগারের পরিবেশ বেশ চমৎকার।
তাদের মতে, কারাগারে প্রত্যেক বন্দিদের সমান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে কারা কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে কারামুক্ত চকরিয়ার গান্ধিপাড়ার দোস্ত মোহাম্মদ ও মাষ্টার হাফেজ আহমদ সাংবাদিকদের জানান, কারাগারে এখন উন্নতমানের খাবার দেয়া হয় বন্দিদের। কারা কর্তৃপক্ষ খুব সুন্দরভাবে কারাগারে সেবা দিচ্ছেন।
টেকনাফের নাইট্যং পাড়ার আব্দুর রহমান বলেন, আমার দেখা মতে কক্সবাজার কারাগারে কোন ইয়াবা ব্যবসায়ী বাড়তি কোন সুযোগ-সুবিধা পান। বিশেষ করে তাদের আরাম আয়েশে থাকার সুযোগ নেই বর্তমান কারাগারে। সে বিষয়ে জেল সুপার সর্বদা সজাগ রয়েছেন।
সুত্র মতে, জেল সুপার প্রতিদিন কারাগারের সব ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন এবং বন্দি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কারণে কারো অসুবিধা হচ্ছে না কিনা সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নেন। শুধু তাই নয়, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা যেন অনৈতিক কর্মকান্ড করতে না পারে সেদিকেও কারারক্ষীদের সচেতন থাকতে নির্দেশনা দেন তিনি।
জেলা কারাগারে কথা হয় রামুর ছকিনা বেগমের সাথে। তিনি এসেছেন তার কারাবন্দি স্বামীর জন্যই পিসিতে টাকা জমা দিতে। তিনি জানান, করোনার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে বন্দিদের সাথে স্বজনদের স্বাক্ষাত বন্ধ রাখা খুবই অমানবিক।
ডেপুটি জেলার এম. মনির হোসেন বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে কারাবন্দিদের প্রত্যক্ষ সেবা প্রদান করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারাগারে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা কোন কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়, এমন কার্যক্রম যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।
ডেপুটি জেলার আরও বলেন, কারাগারে চারটি নতুন পানির পাম্প বসানো হয়েছে। প্রতিটি পাম্প থেকে প্রতি ঘন্টায় ১০ হাজার লিটার পানি সরবরাহ হবে।
বর্তমানে সুপেয় পানির কোন সমস্যা নেই বলেও দাবি করেন তিনি। তার দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার কারাগারে বর্তমানে ১০টি পানির পাম্প রয়েছে। এই পাম্প গুলোর মধ্যে কোনটিতে ২ হাজার লিটার, কোটিতে ১০ হাজার লিটার পানি প্রতি ঘন্টায় পাওয়া যাচ্ছে।
জেল সুপার মোঃ নেছার আলম বলেন, কারাগার একটি স্পর্শকাতর সরকারি গুরুত্বপুর্ণ প্রতিষ্ঠান। কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে আমি কর্মরত আছি। কাঠামো ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আমার প্রচেষ্টায় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কারাগারের উন্নয়নের চিত্র পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারাগারের সেবার মান বাড়িয়েছি। কারাগারে যেন মাদক প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারেও আমরা সজাগ রয়েছি।
তিনি বলে, এখন কক্সবাজার কারাগারে অনিয়ম-দুর্নীতির কোন প্রশ্নই আসে না। যদি কারাগারের কোন সদস্য অনিয়মের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা মাত্র ৮৩০ জন। কিন্তু বর্তমানে সেখানে বন্দি রয়েছেন ৪ হাজার ৪১ জন। ধারণক্ষমতার প্রায় ৫ গুণ বেশি বন্দি নিয়ে বন্দিসেবায় নজির সৃষ্টি করা হয়েছে এই কারাগারে।
সুত্র মতে, কারাগারে বন্দি মায়ের সাথে বিনা অপরাধে জেল কাটা শিশুদের প্রতিদিন দুইবেলা তরল দুধ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে নিকটাত্মীয়দের সাথে বন্দিদের সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় বিধি মোতাবেক প্রত্যেক বন্দি মোবাইলে কথা বলছেন এই কারাগারে।
কারাগার সুত্র জানায়, কারাগারে ৩০০ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন উদ্বোধন হয়েছে। এই ভবন উদ্বোধনের পর বন্দিদের দীর্ঘদিনের শোয়ার জায়গার সমস্যা অনেকাংশে কমে গেছে। তাছাড়াও আইসিআরসি কর্তৃক কারাগারের বাইরে ২টি ও ভেতরে ২টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।