নিজস্ব প্রতিবেদক: চকরিয়ায় বৃদ্ধ নির্যাতনের ঘটনায় মুলহুতারা গা ঢাকা দিলেও সহযোগী সেলিম, ডালিম ও খোকনসহ অন্যান্যরা প্রকাশ্যে হুমকী দিয়ে যাচ্ছেন নির্যাতিত নুরুল আলম পরিবার ও এলাকাবাসীদের। চকরিয়ার ঢেমুশিয়ায় বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। সকলেই আতংকিত। কখন কি হচ্ছে কেউ বুজে উঠতে পারছেনা। পুরো ঢেমুশিয়ায় পোশাকধারী কিংবা সাদা পোশাকধারী আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের বিচরণ রয়েছে রাত-দিন। প্রশাসনের এ ধরণের তৎপরতাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে এলাকাবাসী। এদিকে ঢেমুশিয়ায় এক বৃদ্ধকে বিবস্ত্র করে দা-বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনর ঘটনার আগুনে জ¦লছিল ঢেমুশিয়াবাসী। সেই আগুন নেভার আগেই আরেক নতুন আগুনের সুত্রপাত ঘটাল ওই দা-বাহিনী। আবার আগুন জ¦লে উঠতেই পেট্্েরাল ঢেলে দিয়ে পুরো ঢেমুশিয়ায় এ আগুন ছড়িয়ে দিল সেলিম বাহিনী, শহিদ বাহিনী, ডালিম বাহিনী ও খোকন বাহিনী। আবারও অস্ত্রের ঝনঝনানীতে কাঁপছে ঢেমুশিয়া। গত ২৪ মে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে চকরিয়ার ঢেমুশিয়ায় এক বৃদ্ধকে বিবস্ত্র করে অমানবিক নির্যাতন এবং তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ানোর পর মামলা হয়। ভিডিও দেখে ২ জুন রাতে ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। অপরাধীদের ধরতে মরিয়া হয়ে মাঠে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের এ অভিযানকে তোয়াক্কা না করে তারা ঘটিয়েছে আরও একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ৩ জুন সকাল ৮টার দিকে কোনাখালী এলাকার জনৈক ব্যাবসী ব্যবসার উদ্দেশ্যে বদরখালী বাজারে যাচ্ছিল। প্রতিমধ্যে ওই এলাকার ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ার হায়দারাবাপেরটেক নামক স্থানে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডাকাতি করে তার সর্বস্ব ছনিয়ে নেওয়ার সময় এলাকাবাসী সালাহ উদ্দিন নামের এক ডাকাতকে আটক করে। ঘটনায় উপস্থিত ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর ও সাবেক ইউপি সদস্য ছাবের আহমদ স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানানোর পর চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার পরিষদে আনার সময় তেচ্ছাপাড়ার ছবিরার দোকানের সামনে পৌঁছলে সেলিম বাহিনী, ডালিম বাহিনী, শহিদ বাহিনী ও খোকন বাহিনী ভারী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বন্দুক, কিরিচসহ নানা রকম অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাত সালাহ উদ্দিনকে ছিনিয়ে নেয়। জাহাঙ্গীর ও ছাবের মেম্বার একটু প্রতিবাদ করলে তাদেরকে ডাকাতদল জানে মারার হুমকী দিয়ে চলে যায়। এখন সবসময় প্রাণ ভয়ে দিনাতিপাত করছেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। এদিকে নির্যাতিত বৃদ্ধ নুরুল আলমের নির্যাতনের ঘটনায় তার পুত্র আশরাফ হোছাইন বাদি হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ্য করে চকরিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এরই মাঝে ভিডিও দেখে ৩ আসামীকে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ। অপরাপরদের ধরতে অভিযার অব্যাহত রেখেছে। মামলার বাদি আশরাফ জানিয়েছেন, মামলা দায়েরের পর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার ঘটনাস্থলে গেছেন এবং দফায় দফায় অভিযান চালাচ্ছে। এপর্যন্ত এজাহার নামীয় কোন আসামী আটক করা সম্ভব না হলেও ভিডিওতে উপস্থিত থাকাদের ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাদির দাবি ঘটনায় জড়িতরা সংঘবদ্ধ অপরাধি চক্র। চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা রুজু করার পর থেকে পুলিশ দফায় দফায় অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সকলকে ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এদিকে এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়- চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়টি এখন অপরাধীদের স্বর্গ রাজ্যে পরিনত হয়েছে। এমন কোন দিন নেই ঘটনা ছাড়া। কোন না কনো ঘটনা ঘটছেই। এলাকাবাসী জানান, বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামী দুধর্ষ সন্ত্রাসী আনছুর নেতৃত্বে দা-বাহিনী, সেলিম বাহিনী, ডালিম বাহিনী, শহিদ বাহিনী ও খোকন বাহিনী নামের বেশ কয়েকটি বাহিনী রয়েছে। তার মাঝে সকল বাহিনী নিয়ে এমইউপি সদস্য আরজ খাতুর নেতৃত্বে ঢেমুশিয়া ইউনিয়নে গঠন করা হয় একটি সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। যাদের কাজ ডাকাতি, দখলবাজি, ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসাবে কাজ করা, কাউকে তোয়াক্কা না করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে ইনকাম করাই তাদের কাজ। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, উক্ত বাহিনীর কারণে এলাকাবাসী চলাচলে সবসময় আতংকে থাকে। কারণ আনছুর, সেলিম, ডালিম, শহিদ ও খোকনকে চাঁদা না দিলেই শান্তিতে কেউ থাকতে পারেনা। লবণ মাঠ, মাছের ঘেরসহ প্রত্যেকটি ব্যবসায় তাদের চাঁদা দিয়েই করতে হয়। পুরো চকরিয়ার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও গুটি কয়েক সন্ত্রাসীর অস্ত্র বাজিতে মগের মুল্লুকে পরিনত হয়েছে ঢেমুশিয়া। এদিকে বাহিনী প্রধান এমইউপি সদস্য আরজ খাতুন সম্পর্কে এলাবাসীর তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আরজ খাতুন চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার। বিগত সময়ে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে সে দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা কারাগারের মহিলা ওয়ার্ডে কারাভোগ করেছে। কারাগারেই এক সন্তানের জন্ম হয়েছিল। ঢেমুশিয়া ইউনিয়নে তার একটি দস্যু বাহিনী রয়েছে। এই বাহিনীর প্রধান আরজ খাতুন নিজেই। দস্যু আরজ বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় কাউকে পরোয়া করেনা। বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ এমন কোন অপকর্ম নাই যা সংগঠিত করছে না। এলাকার সবাই কোনঠাসা এ বাহিনীর কাছে। আরজ খাতুন বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বহু মামলা চলমান রয়েছে। গত কদিন আগে বৃদ্ধ নুরুল আলমকে নির্যাতনের ঘটনায় দস্যুরাণী আরজ খাতুন বাহিনীর অপকর্ম উঠে আসে। যুবলীগ নেতা আনছুর প্রকাশ্যে বৃদ্ধ নুরুল আলমের পরনের বস্ত্র হরণ করেছে। যুবলীগ নেতা আনছুর আরজ খাতুনের সেকেন্ড ইন্ড কমান্ড। ওই বাহিনীতে ৩য় সারিতে রয়েছে সেলিম, শহিদ, ডালিম ও থোকন। বৃদ্ধ নুরুল আলমের বস্ত্র হরণের ঘটনায় চকরিয়া থানায় মামলা হয়েছে। মামলার পর থেকে দস্যুরাণী আরজ খাতুন ও তার বাহিনীর সেকেন্ড কমান্ডার যুবলীগ নেতা আনছুর হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। পুলিশ তাদের নাগাল পাচ্ছেনা। এরপরও অভিযান থেমে নেই। তবে সেলিম, শহিদ, ডালিম ও খোকন পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করে রাস্তায় এসে নির্যাতিত নুরুল আলম এর পরিবারে এবং সাধারণ মানুষদের হুমকী দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আনছুর, সেলিম, ডালিম, শহিদ ও খোকন হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্রসহ বেস কয়েকটি মামলার পলাতক আসামী। অপরদিকে ২০১৯ সালের ০১ আগষ্ট চাঁদার দাবীতে ঢেমুশিয়া নতুন বাজারে জনতার উপর নির্বিঘ্নে গুলি চাল্য়া সেলিম, খোকন, ডালিম ও শহিদসহ তাদের বাহিনীর লোকজন। এতে বাজারে আসা অনেকে গুরুতর আহত হয়েছিল। এ বিষেয়ে তাদের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়। উল্লেখিত মামলার ওই আসামীরা পলাতক রয়েছে। ঢেমুশিয়ার সত্তরোর্ধ প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আলমের ওপর এমন বর্বর ঘটনাটি সংঘটিত হয় গত ২৪ মে উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছাপাড়া সংলগ্ন সড়কের পাশে বিলের মধ্যে। এদিকে প্রবীণের ওপর বর্বর এই নির্যাতনের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়ার পর কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের নির্দেশে চকরিয়া থানা পুলিশ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে মাঠে নেমেছে। জানা গেছে, বর্বর নির্যাতনের শিকার প্রবীণ ব্যক্তির নাম মো. নুরুল আলম (৭২)। তিনি উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ার মৃত আলী মিয়ার ছেলে এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ সদস্য।
এছাড়াও ঘটনায় জড়িত যুবলীগ নেতার নাম আনছুর আলম (৩৫)। সে একই ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এবং মৃত মনির উল্লাহর ছেলে। ইন্দনদাতা আরজ খাতুন আড়ালে থাকলেও প্রকাশ্যে শহিদ, ডালিম, খোকন, সেলিমসহ ওই গ্রোপের অনেক ছিল। যা ভিডিওটা দেখলেই বুঝাযায়। এলাকাবাসী বলছেন উপস্থিত সকলেই ওই বাহিনীর সদস্য। এদিকে ইতিমধ্যে ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসী আনছুরকে ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতিপদ এবং বদি আলমকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিরপদসহ আজীবন বহিস্কার করা হয়েছে। এদিকে তাদের বহিস্কারের বিষয়টি মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আনচারুল হক এবং ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান মুজিব নিশ্চিত করেছেন।
এখন প্রশ্ন উঠেছে ওই গ্যাং লিডার আরজ খাতুন ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কিন্তু কি ভাবে সম্ভব একজন জনপ্রতিধিনিধি ও রাজনৈতিক নেত্রির দ্বারা এ ধরণের জগন্য কাজ করা। এখন সকলের একটাই প্রশ্ন- ওই আরজ খাতুনকে বহিস্কার না করে এখনও পর্যন্ত একটি সুশৃংখল পার্টির গুরুত্বপুর্ন পদে রাখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত। এলাকাবাসী দাবী তুলেছেন আরজ হাতুনকে বহিস্কার করে ঢেমুশিয়া মহিলা আওয়ামী লীগকে কলংকমুক্ত করা হউক।
অভিযোগের বাদী আশরাফ হোছাইন অভিযোগ করেন, ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য (মেম্বার) আরেজ খাতুন ও প্রভাবশালী বদিউল আলমের ইন্ধনে তার বাবা নুরুল আলমকে প্রকাশ্যে ইজিবাইক টমটম থেকে জোর করে নামিয়ে বিলের মধ্যে নিয়ে বিবস্ত্র করাসহ শারিরিকভাবে বেধড়ক মারধর করা হয়।
আশরাফ হোছাইন আরো অভিযোগ করেন, চার নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আনছুর রহমান একজন দুর্র্ধষ ডাকাত। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্রসহ সন্ত্রাসি কার্যকলাপের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। আর ঘটনার অন্যতম ইন্ধনদাতা ইউপি সদস্য আরেজ খাতুন ও স্থানীয় বদিউল আলম। তাদের ইন্ধনেই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা আনছুর রহমান এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এদিকে এলাকার আপামর জনতা সন্ত্রাসী গ্রুপের লিডার আরজ খাতুন, সন্ত্রাসী আনছুর, বদিউল আলম, সেলিম, ডালিম, খোকনসহ অপরাপর আসামীদের আইনের আওতায় এনে তাদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্রগুলি উদ্ধার করে এলাকায় শান্তি বিরাজের ব্যবস্থা করে দিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একজন বাবার বয়সী ব্যক্তিকে বিবস্ত্র করাসহ শারিরিক মারধরের বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আশা করছি, সহসাই অপরাপরদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।