রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে সমাহিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
এর আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ শনিবার (১১ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর বনানী মসজিদ প্রাঙ্গণে সাহারা খাতুনের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বেলা পৌনে ১২টার দিকে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজায় প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে শ্রদ্ধা জানানো হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এছাড়া আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম তাঁর মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
তারও আগে আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাইতুশ শরফ জামে মসজিদে সাহারা খাতুনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল শুক্রবার (১০ জুলাই) দিবাগত রাতে ইউএস-বাংলার বিশেষ ফ্লাইট বিএস২১৪-এ তাঁর ঢাকায় পৌঁছায় সাহারা খাতুনের মরদেহ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাহারা খাতুন। তাঁর মৃত্যুতে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশিষ্টজনরা।
শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে দলের পরীক্ষিত একজন নেতা ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন নিবেদিত রাজনীতিবিদকে হারাল।’ রাষ্ট্রপ্রধান মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর শোকবার্তায় বলেন, ‘সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন দক্ষ নারী নেত্রী এবং সৎ জননেতাকে হারাল। আমি হারালাম এক পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে।’ প্রধানমন্ত্রী মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গত ২ জুন বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় সাহারা খাতুনকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৬ জুলাই সোমবার তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান সাহারা খাতুন।
সাহারা খাতুন দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। হাতে গোনা যে অল্পসংখ্যক নারী নেত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন, সাহারা খাতুন তাঁদের অন্যতম। একেবারে মাঠ পর্যায় থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই নারী আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে জায়গা করে নেন।
১৯৪৩ সালের ১ মার্চ ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী সাহারা খাতুন ১৯৯১ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ঢাকা-৫ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেবার পরাজিত হলেও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হন সাহারা খাতুন। এরপর আরো দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হন তিনি।
আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাহারা খাতুন আলোচিত এক-এগারোর রাজনৈতিক পরিস্থিতির সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। আওয়ামী লীগের সেই দুর্দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে দলে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
তাঁর মৃত্যুতে আরো শোক জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।