সমুদ্র বক্ষে বাংলাদেশের মূল্যবান খনিজ সম্পদ মিয়ানমার আহরণ করতে পারে। এমন সন্দেহ প্রকাশ করেছে সরকারের সর্বোচ্চ একটি সংস্থা। সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সমুদ্র সীমান্তবর্তী রাখাইন স্টেটের গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু করার পদক্ষেপ নেওয়াসহ খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে চারটি প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া চারটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সমুদ্র সীমান্তবর্তী রাখাইন স্টেটের গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনের জন্য মিয়ানমার এরই মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মূল্যবান খনিজ সম্পদ মিয়ানমার আহরণ করছে কিনা, তা বিশেষজ্ঞ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।’
‘মিয়ানমার দ্রুততার সঙ্গে রাখাইন স্টেটের গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও সমুদ্র সীমান্তবর্তী এলাকায় অবিলম্বে গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।’
‘বাংলাদেশ সমুদ্র সীমান্তবর্তী এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চলাকালে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড কর্তৃক নিরাপত্তা বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সমন্বয় করা প্রয়োজন।’
‘বর্তমানে বাংলাদেশে গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের উত্তোলিত গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস আমদানি করার বিষয়ে কূটনীতিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।’
খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া চারটি প্রস্তাবের পাশাপাশি একটি প্রতিবেদনও দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মিয়ানমারের খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিদেশী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে পিএসসি স্বাক্ষর করেছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেল এবং জাপানের মিটস্যুউ ওয়েল কোম্পানির সঙ্গে রাখাইন স্টেটের গভীর সমুদ্রে এডি-৯ এবং এডি-১১, এই দুইটিসহ তিনটি গভীর কূপ অনুসন্ধানের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো সামনের কয়েক বছরের মধ্যেই গ্যাস উত্তোলন শুরু করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমুদ্র বিরোধ সীমানা চূড়ান্ত হওয়ার পর পরই মিয়ানমার এ সব ব্লকে ত্রি-মাত্রিক জরিপ কাজ শেষ করে চুক্তি স্বাক্ষর করতে সক্ষম হয়েছে।
মিয়ানমার সরকার রাখাইন স্টেটের আরও কয়েকটি গভীর সমুদ্র ব্লক কয়েকটি আন্তর্জাতিক শীর্ষ প্রতিষ্ঠানকে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে ইউনিকল এবং কনকো ফিলিপস অন্যতম।
আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের চকপিউসহ নিকটবর্তী গভীর সমুদ্রের তিনটি ব্লক এ-১, এ-২ এবং এ-৩ থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে দক্ষিণ কোরিয়ার দায়িয়ু কোম্পানি। উত্তোলিত গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে চীনে সরবরাহ করা হচ্ছে। মিয়ানমারের খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রায় ২০টি গভীর ব্লকে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিয়ানমারে আনুমানিক সাত দশমিক আট ট্রিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, রাখাইন স্টেটের গভীর সমুদ্রে মিয়ানমার দ্রুততার সঙ্গে গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে। ওই একই জায়গার সীমানা ঘেঁষে বাংলাদেশেরও অংশ রয়েছে। বাংলাদেশের অংশেও গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুই দেশের গ্যাস ক্ষেত্রের মূল ভিত্তি একই জায়গাতে। তাই মিয়ানমার যেহেতু ওই জায়গাতে উত্তোলন শুরু করেছে, তাই বাংলাদেশেরও উচিত দ্রুততার ভিত্তিতে ওই অংশে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করা। নতুবা বাংলাদেশ মূল্যবান খনিজ সম্পদ হারাতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এরই মধ্যে উদ্বেগের বিষয়টি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।