অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়া কাগিসো রাবাদার তোপে গুঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের জয়ে ফেরার স্বপ্ন। টি-টোয়েন্টির পর প্রথম ওয়ানডেতেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছে স্বাগতিকরা।
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের হার ৮ উইকেটে। বৃষ্টির কারণে ৪০ ওভারে নেমে আসা ম্যাচটি জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। এ নিয়ে টানা চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারল বাংলাদেশ।
শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পৌনে তিন ঘণ্টা পরে শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩৫ ওভার ৩ বলে ১৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ৩১ ওভার ১ বলে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
স্বাগতিকদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ইনিংসের পরই মোটামুটি ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা শেষ হয়ে যায়।
ষষ্ঠ ওভারে অধিনায়ক মাশরাফি অতিথিদের অধিনায়ক হাশিম আমলাকে আর নাসির হোসেন চতুর্দশ ওভারে অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কককে ফিরিয়ে দিলেও খেলার তার কোনো প্রভাব পড়েনি।
স্বাগতিকদের হতাশ করে দেখে শুনে খেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় জয় এনে দেন ফাফ দু প্লেসি ও রাইলি রুশো (৫৩ বলে অপরাজিত ৪৫)। অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেটে ৯৯ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে। ৬৩ রানে অপরাজিত থাকা দু প্লেসির ৭৫ বলের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও একটি ছক্কায়।
কোনো উইকেট না পেলেও অতিথিদের ভুগিয়েছেন কেবল তরুণ মুস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে রাবাদার দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুরুতেই দিক হারায় স্বাগতিকরা। চতুর্থ ওভারের শেষ তিন বলে তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই তরুণ।
দারুণ এক বলে তামিমকে বোল্ড করার পর লিটনকে ফেরান রাবাদা। শেষ বলে মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাইজুল ইসলামের পাশে দাঁড়ান এই তরুণ। ওয়ানডেতে কেবল এই দুই জনেরই অভিষেকে হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্ব আছে।
প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিন জন শূন্য রানে আউট হলেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে দ্রুত রান তুলতে থাকেন সৌম্য সরকার (২৭ বলে ২৭)। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে আউট করে নিজের চতুর্থ উইকেট নেন রাবাদা।
৪০ রানে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। ৫৩ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থানের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিলেন এই দুই জন। জেপি দুমিনির বলে তুলে মারতে গিয়ে মুশফিকের বিদায়ে ভাঙে আশা জাগানো জুটিটি।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুই অঙ্কেই পৌঁছাতে না পারা সাব্বির রহমান ব্যর্থ হয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে। ৫ রান করে ক্রিস মরিসের দারুণ এক বলে বোল্ড হয়ে যান এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান।
এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি ওয়ানডে অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব (৫১ বলে ৪৮)। ইমরান তাহিরের বলে তিনি এলবিডব্লিউ হয়ে গেলে বড় সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায় স্বাগতিকদের।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে মাশরাফি ও জুবায়ের হোসেনকে ফিরিয়ে অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন রাবাদা।
মাশরাফিকে কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসবন্দি করার পর জুবায়েরকে বোল্ড করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিদেল এডওয়ার্ডসের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে অভিষেক ছয় উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন ২০ বছর বয়সী রাবাদা। ১৬ রানে তার ৬ উইকেট ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলিং।
শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান নাসিরের দৃঢ়তায় দেড়শ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৩৬.৩ ওভারে ১৬০ (তামিম ০, সৌম্য ২৭, লিটন ০, মাহমুদউল্লাহ ০, সাকিব ৪৮, মুশফিক ২৪, সাব্বির ৫, নাসির ৩১, মাশরাফি ৪, জুবায়ের ৫, মুস্তাফিজ ০*; রাবাদা ৬/১৬, মরিস ২/৩২, দুমিনি ১/২৮, তাহির ১/৩৮)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩১.১ ওভারে ১৬৪/২ (ডি কক ৩৫, আমলা ১৪, দু প্লেসি ৬৩*, রুশো ৪৫*; নাসির ১/২৮ মাশরাফি ১/৩৬)
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।