কক্সবাজার সময় ডেস্কঃ বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের নাগরিকত্ব কী হবে, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ বিষয়ে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদেশে জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্মসূত্রে বাংলাদেশি বলা যাবে না। আর সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি সরকারের রোহিঙ্গাবিষয়ক নীতির ওপর নির্ভর করছে।
কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন শেখ আব্দুস সালাম জানান, ‘অন্তঃসত্ত্বা রোহিঙ্গা নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। গত ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১০ জন নারী সন্তান জন্ম দিয়েছেন।’
বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের নাগরিকত্ব কী হবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিবাসন ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, ‘বাবা-মা রোহিঙ্গা হওয়ায় এদেশে জন্ম নেওয়া তাদের শিশুরাও স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা বা মিয়ানমারের নাগরিক বলে বিবেচিত হবে। তারা এদেশে জন্ম নেওয়ার সুবাধে জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হবে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতি একটু অন্যরকম। তারা এখানে অস্থায়ীভাবে রয়েছে।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আটকেপড়া বিহারিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আগ-পর্যন্ত তাদের বিহারি হিসেবেই আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই, এই শিশুরা রোহিঙ্গা হিসেবেই তালিকাভুক্ত হবে।’
আসিফ মুনীর বলেন, ‘যদি কোনও কারণে তাদের এই দেশে থেকে যেতেই হয়, তাহলে সেটা অনেক পরের বিষয়। এছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে যদি কখনও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তাহলে এসব শিশুর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আবার যেসব শিশু বাবা-মা ছাড়া আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে এসেছে, তাদের কে গ্রহণ করবে, এসব বিষয়ও আলোচনায় থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত মনে হয়, এই শিশুদের রোহিঙ্গা বা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেই দেখা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত দিক-নির্দেশনা দেওয়া উচিত। এখন যেমন প্রাপ্ত বয়স্কদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে, সেভাবে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া শিশুদেরও নিবন্ধন করা হবে কিনা, সে বিষয়ে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
যেসব শিশু বাংলাদেশে জন্ম নিচ্ছে, তাদের তালিকা তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আসিফ মুনীর বলেন, ‘নাগরিকত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সেই তালিকা যেন বাংলাদেশের কাছে থাকে। এসব শিশুর জন্ম তারিখ, ব্লাড গ্রুপ চেক করে রাখাসহ প্রয়োজনে তথ্য থাকা উচিত।’
এদিকে, এদেশে জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত হবে কিনা, সে বিষয়টি সরকারের নির্দেশনার ওপর নির্ভরশীল বলে জানান উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গা আসা শুরু হলেও চলতি বছরে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তারও আগে থেকে মিয়ানমারের অনেক নাগরিক আমাদের এখানে ছিল এবং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পও ছিল। তাদের ভেতরে অনেকেই চলে গেছে আর সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজারের মতো এখনও রয়েছে। তারা সবাই রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা। গত বছর সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গাদের যেসব শিশুর জন্ম বাংলাদেশে হয়েছে, তাদের জন্ম নিবন্ধন হবে। সে প্রক্রিয়া শুরুও করেছিলাম আমরা।’
উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তখন একটি ক্রাইটেরিয়া ছিল যে, জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেটে একটি সিল থাকবে, সেখানে লেখা থাকবে তারা মিয়ানমারের নাগরিক। ওই জন্ম নিবন্ধনের কাজটাও চলছিল কেবল রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গাদের জন্য। কিন্তু এই রেজিস্ট্রার্ডদের বাইরেও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা ছিল, যাদের বিষয়ে সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত ছিল না। এবার এই রোহিঙ্গা আসার পর থেকে কক্সবাজারের পুরো জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়াটাই বন্ধ রয়েছে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছি আগে। এরপর সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই কাজ হবে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও ইনস্ট্রাকশন নেই।’
রোহিঙ্গা শিশুরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবে কিনা, জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিশুদের নাগরিকত্বের বিষয়ে এ মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়। এটি পুরোপুরি সরকারের পলিসির ওপর নির্ভর করছে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।