মোবাইল ফোন অপারেটর এয়ারটেল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত রবির সাথে একীভূত হওয়া পর্যন্ত অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে অডিট করবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। একইসঙ্গে আরেক শীর্ষ অপারেটর বাংলালিংকেরও অডিট করতে চায় সংস্থাটি।
এ ব্যাপারে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা বাংলালিংকেরও ফ্রেশ অডিট করতে চাই। আমরা শিগগির এই দুটি অপারেটরের জন্য অডিট ফার্ম নিয়োগ করব।’
তবে কবে থেকে এই অডিট প্রক্রিয়া শুরু হবে সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানাননি।
এর আগে, ২০১১ সালে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করে বিটিআরসি। শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই বাংলালিংকের নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশ করে অডিট প্রতিষ্ঠান আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানি। তবে একই বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে গ্রামীণফোনের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে ফজল অ্যান্ড কোম্পানি। এ নিরীক্ষার ভিত্তিতে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর গ্রামীণফোনের কাছে ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
যদিও গ্রামীণফোন দেশীয় ওই ফার্মটির অডিট মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তৎকালীন গ্রামীণফোনকে দেয়া ওই চিঠির ওপর ‘স্থিতাবস্থা’ দেয় হাইকোর্ট। এ ছাড়া আরেক অডিট কোম্পানির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বরে হাইকোর্ট বিটিআরসির অডিট নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল বলে রায় দেয়। আর প্রথম থেকেই মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষার দাবি জানিয়ে আসছিল।
দীর্ঘ বিরতি দেওয়ার পর চলতি বছরে নতুন করে মোবাইল কোম্পানিগুলোর অডিট প্রক্রিয়া শুরু করে বিটিআরসি। ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন এবং রবি আজিয়াটার অডিট করার জন্য দুটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দেয় বিটিআরসি।
গ্রামীণফোনের অডিট করার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে অডিট করার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে এবং এ জন্য অতিরিক্ত কিছু লোকও নিয়োগ দিয়েছে অডিট ফার্মটি। অডিট ফার্ম মোবাইল অপারেটরের বিলিং সিস্টেমস, ট্যাক্স, সঠিক সাবস্ক্রাইবার, ভয়েস ও ইন্টারনেটসহ সংশ্লিষ্ট সার্ভিসগুলোর তথ্য সংগ্রহ করবে। তবে অমীমাংসিত কয়েকটি ইস্যুর কারণে এখনও গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয়ে যেতে পারেনি অডিট ফার্মের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, গ্রামীণফোনের অডিট করার জন্য ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে বিটিআরসি। চুক্তি অনুসারে অডিটর কোম্পানিকে ১৮০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে বলা হলেও অমীমাংসিত কিছু বিষয়ের কারণে এখনও কোনো মোবাইল অপারেটরের অডিট প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। গ্রামীণফোনের অডিটের সময় তিন দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসেই রবি আজিয়াটার অডিট করার জন্য মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি। এই প্রতিষ্ঠানটিকেও দুই দফা সময় দেওয়া হয়েছে। অডিট শেষ করার জন্য সর্বশেষ সময় দেওয়া হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক অডিটের মুখোমুখি হয়নি।
এই দুটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের অডিট করতে বিটিআরসির মোট খরচ হবে ১৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের জন্য বাজেট করা হয়েছে ৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং রবির জন্য বাজেট করা হয়েছে ৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য মোবাইল অপারেটরসহ টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোর অডিট করার জন্য আরও ২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা বিটিআরসির কাছে অবশিষ্ট থাকবে। চলতি অর্থবছরে বিটিআরসি অডিটের জন্য সব মিলে ৪০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে।
টেলিযোগাযোগ আইন এবং বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী অপারেটরদের প্রতি বছর যথা সময়ে অডিট করার কথা। তবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এ বিষয়ে এখনও কোনো বড় ধরনের সফলতা পায়নি। এ ব্যাপারে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে অপারেটরদের অডিট করা আমাদের দায়িত্ব কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে তা আমাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।