নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীতে চাঁদা না পেয়ে তিন শতাধিক উৎপাদনকৃত রাবার গাছ কেটে ও ফ্যক্টরীতে আগুন দিয়ে অর্ধকোটি টাকার সম্পদ হানি করেছে সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাইশারী ইউনিয়নের ছাগলখাইয়া এলাকায় বান্দরবান জেলা দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবি এড. মুহাম্মদ আবুল কালামের মালিকানাধীন সানজিদা রাবার প্লানটেশনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল ও আশ পাশের এলাকায় তাৎক্ষনি অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন দুই জন রাবার শ্রমিককে আটক করেছে বাইশারী তদন্ত কেন্দ্র পুলিশ।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাইশারী ইউনিয়নের দূর্গম ছাগলখাইয়া খালের তীর ঘেষা সানজিদা রাবার প্লানটেশনের দক্ষিণ-পূর্বাংশে প্রায় তিন শতাধিক রাবার গাছ কর্তনকৃত অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছে। এসব গাছ গুলো উৎপাদন হওয়ায় রাবার কষ মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে। ১-২শ গজ দূরে বাগানের মধ্যস্থানে স্থাপিত রাবার ফ্যক্টরীটি আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের লেলিহান শিখায় ফ্যক্টরীর আশপাশের সবুজ গাছগুলিও পুড়ে গেছে। ফ্যক্টরীতে রক্ষিত রাবার শীট, মেশিন, তৈলসহ আনুসাঙ্গিক অনেক জিনিসপত্র পুড়ে কয়লা হয়ে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে ঘটনার সময় আশ পাশের রাবার বাগানের পাহারাদাররা নিরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল।
কথা হলে বাগানের ম্যনেজার জালাল আহামদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ১৫-২০ জনের সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রথমে বাগানের দক্ষিনপার্শ্বে উৎপাদন হওয়া অন্তত ৩শ গাছ কেটে ফেলে। পরবর্তী বাগানের ফ্যক্টরীতে আগুন দিয়ে ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করেছে। এর আগে গত কয়েক মাস পূর্ব থেকে তাঁর মালিক এড. মুহাম্মদ আবুল কালামের কাছ থেকে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাঁদা দাবী করে আসছিল। সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দেওয়ায় গত ২৮ মে একই ভাবে ৩৪টি গাছ কেটে দিয়েছিল। এঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় চাদাঁবাজির একটি মামলাও লিপিবদ্ধ হয়।
বাগানের পাহারাদার বাছের আলী, আবদুল খালেক জানান- এসব সন্ত্রাসীরা পর পর তিন বার এ বাগানে হামলা করেছে। গত কয়েকদিন পূর্বেও বাগানে এসে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে গিয়েছিল। সন্ত্রাসী দলটি সংঘবদ্ধ ও সশস্ত্র হওয়ায় তাদের কাছে অসহায় থাকেন পাহারাদার।
এ ব্যাপারে বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ইনচার্জ এসআই আনিসুর রহমান জানান, সন্ত্রাসীরা সানজিদা রাবার বাগানে উৎপাদনকৃত রাবার গাছ কেটে ও আগুন দিয়ে ব্যপক ক্ষতি করেছে। খবর পেয়ে তিনি তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দীর্ঘসময় অভিযান চালিয়েছেন। ঘটনার সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে মো: হাসেম ও নুরুল আজিম নামে দুই রাবার শ্রমিককে আটক করা হয়। এছাড়াও প্রকৃত সন্ত্রাসীদের খুজে বের করার আপ্রান চেষ্টা চলাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
সানজিদা রাবার প্লানটেশনের মালিক এড.মুহাম্মদ আবুল কালাম বলেন- চাদাঁর জন্য এভাবে বার বার সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় তাঁর বাগানের সাথে জড়িত সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে। এভাবে হামলার ঘটনায় প্রশাসন কর্তৃক প্রতিরোধ মূলক কোন ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বৃহৎ রাবার শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। ইতিমধ্যেই অনেকে এ শিল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
সূত্র মতে, দুষ্ট চক্রের কালো ছায়ার হুমকির মুখে পড়েছে রাবার শিল্প নগরী হিসেবে পরিচিত বাইশারী। বার বার রাবার বাগানে ডাকাতি, গাছ কর্তন ও আগুন দেওয়ার কারনে বিলীন হতে বসেছে জাতীয় অর্থনীতে বিশেষ অবদান রাখা বাইশারীর ১৫ হাজার একরের রাবার শিল্প। এ কারনে রাবার শিল্পে ক্রমাগত লোকসান হচ্ছে। তবে চোর-ডাকাত চক্রের হাত থেকে বড় এই অর্থকরী খাতকে বাঁচানোর কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না আপাতদৃষ্টিতে। ফলে ক্রমেই নীরবে ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে এ শিল্প।
একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি হলেও প্রকৃত সন্ত্রাসীরা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রাবার বাগান শ্রমিক জানান, বাইশারী ও আশ পাশের এলাকায় রাবার বাগানে যত ডাকাতি, হামলার ঘটনা ঘটে প্রত্যেকটিতে জনৈক শাহিনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে অদৃশ্য শক্তির বলে সে বার বার পার পেয়ে যায়।
সচেতন মহল মনে করেন বাইশারীর বিস্তৃত রাবার শিল্প রক্ষা করার জন্য অনতিবিলম্বে সেনা-বিজিবি অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত ডাকাত দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও রাবার শিল্প এলাকায় স্থায়ী ভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যম্প স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন রাবার মালিকরা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।