দুই হাজার আট সালের পাঁচ জানুয়ারী। ভোর বেলা। দীর্ঘদিনের শ্রমিক আন্দোলন পরিপূর্ণতায় রূপ নিল। পুলিশ-শ্রমিক দাওয়া পাল্টা দাওয়া। আহত হল অর্ধশতাধীক শ্রমিক ও গুরতর আহত হল পুলিশ কনেষ্টেবল বাচ্চু মিয়া। উত্তেজিত উশৃঙ্খল বহিরাগত শ্রমিকদের লাগিয়ে দেওয়া আগুনে কিছু বুঝার আগেই দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগল রাবার বাগানের কোয়ার্টার গুলো। বিকালে সবাই গুরতর আহত বাচ্চু মিয়ার মৃত্যুর খবর শুনল। কিন্তু তার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন না করে তার ফায়দা তুলল স্বার্থন্বেষী একটি মহল। তাদের কুপরামর্শে ঘটনার মোড় ঘুরে গেল অন্যদিকে। মামলায় জড়ানো হল সাধারন শ্রমিক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদেরও। পুরুষ শূন্য হল বাড়ীঘর। হাজারো নিরহ শ্রমিক ও লোক সাধারণের মনে ক্ষতের সৃষ্টি করল। নিঃস্ব হল হাজারো সম্ভাবনাময় পরিবার। কুরুচিমনা রাজনৈতিক নেতাদের কারণে স্বপ্নের আধুনিক বাইশারীর মৃত্যু ঘটল। সেই দিনের ঘটনায় আজো আৎকে উঠে বাইশারীর সাধারন মানুষ।
কিন্তু সেই ক্ষত না শুকাতেই আবারো বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে রাবার বাগান মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যার ফলে আবারো বড় ধরনের দূঘটনার আশংকা করছেন সচেতন মহল।
রাবারের দর পতনে ইতিমধ্যে বাইশারীর অধিকাংশ ছোট ছোট ব্যক্তিমালিকানাধীন উৎপাদিত রাবার বাগান বন্ধ হয়ে গেছে এবং বড় বড় বাগানেও উৎপাদন কম হওয়ায় বন্ধ করার পরিকল্পনা চলছে।
বর্তমানে অধিকাংশ বড় কোম্পানীর রাবার বাগানে উৎপাদন কম হওয়ার সুযোগে কোম্পানীরা সিনিয়র শ্রমিকদের ছাটাই করছে। যার প্রভাব পড়ছে অন্যান্য শ্রমিকদের উপর। বিগত দিনেও শ্রমিকদের ছাড়াই করার কারণে দূর্ভোগে পড়তে হয়েছিল রাবার বাগান মালিকদের।
সুত্রে জানায়, কবির কোম্পানী রাবার বাগান, নাজমা খাতুন রাবার ইষ্টেট এর ৬নং ব্লক, অপরাজিতা রাবার বাগান ও পারভেজ রাবার প্লান্টার্স এ শ্রমিক ছাটাই ও অতিরিক্ত কাজ আদায় করায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অধিকাংশ বাগান ব্যবস্থাপক নিজেদেরকে বাগান মালিকদের সুনজরে আনার লক্ষ্যে এসব কর্মকান্ড করে যাচ্ছে।
এ দিকে অতিরিক্ত কাজ আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে নাজমা খাতুন রাবার ইষ্টেট রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকদের মধ্যে উত্তপ্ত কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর মৌখিক ভাবে অভিযোগও প্রদান করেন বাগান ব্যবস্থাপক।
জানা যায়, রাবারের দর পতনের কারণে বর্তমানে শ্রমিকদের বেতন প্রদান করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে রাবার বাগান মালিকদের। আবার বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখার চেষ্টা করছে। এতে বাগান ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকদের মাঝে উৎকন্ঠা বিরাজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
একাধিক রাবার বাগান শ্রমিকরা জানান, অতিতে তাদেরকে বৎসরে দুই ইউনিফর্ম প্রদান করলেও বর্তমানে ইউনিফর্ম না দেওয়ায় বাগানে কাজ করতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে এবং নির্ধারিত সময়ের পর বাগান ব্যবস্থাপকরা জোর করে বিনিময় ছাড়াই বাগানের অতিরিক্ত কাজ আদায় করার চেষ্টা করে।
তাছাড়া কবির কোম্পানীর রাবার বাগানে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত টেপার পদে চাকুরী করে আসছেন সোনা মিয়া, মোঃ কাশেম ও শাহাব উদ্দিন। এই তিনজনকে ইতিমধ্যে কোন কথা ছাড়াই ছাটাই করা হয়েছে। শ্রমিক ছাটাইয়ের বিষয়ে শ্রমিকরা বলেন, রাবারের দাম কমে যাওয়ায় বাগান মালিকরা ব্যবস্থাপকদের উস্কানিতে নিয়মিত সিনিয়র শ্রমিকদের ছাটাই করছে। বাগান ব্যবস্থাপক মোঃ জামাল শ্রমিক ছাটাইয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন।
নাজমা খাতুন রাবার ইষ্টেটের ব্যবস্থাপক আল-আমিন বলেন, রাবার গাছে আঘাতের কারণে কস কমে যাওয়ার গাছে গোবর লাগানো প্রয়োজন। শ্রমিকদেরকে গোবর লাগানোর জন্য বললে শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজন অন্যান্য শ্রমিকদের নানা রকম উস্কানীর মাধ্যমে গোবর দেওয়া বন্ধ করে দেয়। মূলত কয়েকজন উশৃঙ্খল শ্রমিকদের কারণে রাবার বাগানে সমস্যা হয়ে থাকে। তবে এ নিয়ে শ্রমিকদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে এবং তারা রাবার গাছে বর্তমানে গোবর লাগাচ্ছে।
রাবার শ্রমিক নেতা আব্দুর রশিদের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু রাবার বাগানের ব্যবস্থাপকরা শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজ আদায় এবং নিয়ম বহির্ভূত শ্রমিক ছাটাই করার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাবারের দাম কমে যাওয়ার কারণে এই মূহুর্তে শ্রমিকদের অন্যায় দাবী গ্রহনযোগ্য নয় এবং আমরা অতিতের ঘটনার পূনরাবৃত্তি চায় না এবং এসব ঘটনার মিমাংসের চেষ্টা চলছে। তবে শ্রমিক ছাটাইয়ের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলেও জানালেন শ্রমিক নেতা আব্দুর রশিদ।
ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক কোন কারণ ছাড়াই শ্রমিক ছাটাইয়ের বিষয়ে শ্রমিকদেরকে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরামর্শ দেন বলে জানান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।