চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে তার স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তার যদি জড়িত থাকে তবে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলেছেন মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।
বৃহস্পতিবার মামলার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামানের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছেও স্বীকার করেছেন মোশাররফ হোসেন।
মিতু হত্যা মামলা তদন্ত করছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের ডাকে সাড়া দিয়ে মিতুর বাবা বৃহস্পতিবার সকালে সিএমপিতে যান। মামলার আইও তাকে ৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
মোশাররফ হোসেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ইন্সপেক্টর। মেয়ে মিতু হত্যাকাণ্ডের ৭ মাস পর তিনি চট্টগ্রামে তদন্ত কর্মকর্তার মুখোমুখি হলেন।
এর আগে একই মামলায় গত ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারকেও ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে আমি বলেছি- ‘এ মামলার পলাতক আসামি মুসা এবং কালুকে ধরা হোক। খুনের মোটিভ কি, কেন তাকে খুন করল, কে এই খুনের নির্দেশদাতা এবং কে সহায়তা করেছে আমি তা জানতে চাই। তাদের বিচার চাই। যারাই হোক প্রকৃত খুনীর বিচার চাই। এ পর্যন্ত মামলার তদন্তের ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট।’
মিতুর বাবা বলেন, ‘আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি- এ মামলায় যে-ই জড়িত থাকুক না কেন তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে বলেছি। তবে বাবুল আক্তার এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আমার সন্দেহ নেই।’
বাবুল আক্তারকে কি জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একথা একমাত্র বাবুল আক্তারই বলতে পারবেন।’
গোয়েন্দা কার্যালয়ে আসার পর তিনি বলেন, ‘মিতু আমার বড় মেয়ে। এভাবে মেয়েকে হারাতে হবে তা কখনও ভাবতে পারিনি। মাকে হারিয়ে তার ছেলে আকতার মাহমুদ মাহির (৭) ও মেয়ে তাবাসসুম তাজনীন টাপুর (৫) এখনে সমস্যার মধ্যে আছে।
তিনি বলেন, টাপুর সব সময় মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। মা এখানে ওখানে গেছে বলে শান্তনা দিচ্ছি।
মেয়ে এবং নাতি-নাতনির কথা বলতেই মোশাররফ হোসেনের চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি।
নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলেন, তাদেরকে একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। দিনে আমার সঙ্গে আর রাতে বাবার (বাবুল আক্তারের) সঙ্গে থাকে। বাবুল দিনে চাকরি করেন সেজন্য তাদের আমি দেখাশোনা করি। বাবুল আক্তার মগবাজারের বাসায় থাকেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কথা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে যে-ই জড়িত থাকুক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তবে বাবুল আক্তারকে সন্দেহ করেন এমন কোনো কথা মোশারফ হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে বলেননি।’
আইও আরো বলেন, তদন্তের স্বার্থে ভবিষ্যতে মিতুর পরিবারের আরও সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। পলাতক আসামি মুসা এবং কালুর পরিবারের সঙ্গেও কথা বলব।
কামরুজ্জামান বলেন, এ মামলায় শুধু মুসা-কালুই নয়, পলাতক সব আসামিই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পাওয়া গেলে তদন্তে আরও অগ্রগতি হবে। মুসা এবং কালুকে গ্রেফতারে আমাদের বিভিন্ন টিম কাজ করছে।
মুসার পরিবারের দাবি করছে মুসাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই। মুসাকে ধরতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে মিতুকে ছুরিকাঘাত এবং গুলিকরে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। মিতু হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
একই মামলার দুজন আসামি রাশেদ ও নবী পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। দুজন আসামি আনোয়ার ও ওয়াসিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানায়, মুসার নির্দেশে এবং তদারকিতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।-যুগান্তর।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।