২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

বিএনপির আন্দোলন থামাতে ৩ সিটি নির্বাচন নতুন ফাঁদ

বিএনপির আন্দোলন থামাতে ৩ সিটি নির্বাচন নতুন ফাঁদ

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান লাগাতার অবরোধ ও খণ্ডকালীন হরতাল কর্মসূচি থামাতে ঢাকার দুটিসহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। আর এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিএনপির জন্য নতুন ফাঁদ হিসেবে দেখছেন অনেকে। বিশেষ করে ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও না নেওয়া উভয় সিদ্ধান্তে বিএনপির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে বলে মনে করছেন এ সব রাজনীতি বিশ্লেষক।

চলতি বছরের জানুয়ারির শুরু থেকে চলমান ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধের মধ্যে হঠাৎ করেই সরকারের পক্ষ থেকে বিভক্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা আসে। এরই অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন আগামী ২৮ এপ্রিল এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষণা করেছে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন অরাজনৈতিক হলেও ইতোমধ্যে সরকারি দলের পক্ষ থেকে ঢাকার দুটি ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে প্রাথমিক সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগে হাইকমান্ড।

অন্যদিকে লাগাতর আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অধিকাংশ শীর্ষ নেতাই রয়েছেন পলাতক ও কারাগারে। এরই মধ্যে মোটামুটি বিএনপিকে বাইরে রেখে তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সেরে নিতে চায় সরকার— এমনটি মনে করছেন অনেকে। আবার এই সিটি নির্বাচনকে বিএনপির আন্দোলন দমাতে সরকারের নতুন কৌশল হিসেবেও মনে করছেন তারা। দলটির প্রধানের পক্ষ থেকে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনো আনু্ষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে মোটামুটি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপির অংশগ্রণের বিষয়টি আলোচনায় চলে এসেছে। আর বিএনপিকে এ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে চলমান আন্দোলন বন্ধ বা স্থগিত করেই আসতে হবে— এমনটি মনে করছেন সবাই। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সরকারের পক্ষ থেকে যে কোনো অজুহাতে নির্বাচন আবারও স্থগিত করা হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আর এতে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে দ্য রিপোর্টের সঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের কথা হয়।

তিনি বলেন, ‘দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতে সিটি করপোরেশনের মতো একটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে— এটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পাশাপাশি এমন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আদৌ থাকবে কিনা বা একতরফা আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কিনা— সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তারপরও সিটি করপোরেশনের মতো অরাজনৈতিক নির্বাচনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করাটা কোনো দলের জন্যই ঠিক হবে না। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা ভিন্ন। আইনে এ সব নির্বাচনকে অরাজনৈতিক বলা হলেও বাস্তবে রাজনৈতিকভাবেই এ সব নির্বাচন হয়ে থাকে।’

বদিউল আলম বলেন, ‘আমি মনে করি, সিটি করপোরেশন নির্বাচন কোনো জাতীয় নির্বাচন নয়। তাই রাজনৈতিকভাবে এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে অরাজনৈতিকভাবে অংশ নেওয়াটা বিএনপির জন্য ভাল হবে। আর যদি তারা এই নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে কিন্তু নির্বাচন আটকে থাকবে না, বরং এমন সিদ্ধান্ত বিএনপির জন্য ভুল হবে। আবার রাজনৈতিকভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপির জন্য ভুল হবে। তখন তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ করতে হবে। এতে নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেলে তাদের জন্য ভাল কিছু হবে না।’

নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির আন্দোলন বন্ধ রাখতে হবে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এটা বিএনপির সিদ্ধান্ত। তারা কীভাবে এটাতে অংশ নেবে। আর আন্দোলন যদি জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোলবোমা হয়ে থাকে তবে তা এমনিতেই বন্ধ করা উচিত। সেজন্য কোনো উপলক্ষ প্রয়োজন নেই।’

একই প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘রাজনৈতিক হোক আর অরাজনৈতিক হোক সকল নির্বাচনে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। যাতে কোনোভাবে নির্বাচন পক্ষপাতদুষ্ট না হয় সেদিকে তাদের নজর রাখা উচিত। সিটি করপোরেশন তিনটির নির্বাচন যে মুহূর্তে ঘোষণা করা হয়েছে, সে মুহূর্তে দেশের সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে কিনা— সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এখন বিষয় হচ্ছে বিএনপি এমন নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা। আসলে এটা কোনো রাজনৈতিক বা জাতীয় নির্বাচন নয়। এখানে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রার্থীরা অংশ নিতে পারে। বিএনপি যদি এই নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে সেটা হবে তাদের রাজনৈতিক ভুল। আবার নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হলে তাদের ক্ষতি হবে কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশে কোনো সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা হচ্ছে না। এখানে প্রধান দুটি দল একে অপরকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। এতে উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় জনগণের মতামতের প্রতিফলন না হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় না। আর আমাদের দেশের প্রধান দুটি দলের কর্মকাণ্ডে জনগণের সমর্থন কতটা রয়েছে সেটাই ভাবার বিষয়।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা বিএনপির কোনো রাজনৈতিক ভুল হবে না। আর এমন নির্বাচনে অংশ নিলে চলমান আন্দোলন স্থগিত হওয়ারও কিছু নেই। কারণ ভোটগ্রহণ হবে মাত্র তিনটি জেলায়। আর আন্দোলন তো চলছে সারাদেশে। এমনকি ভোটগ্রহণের দিনও এ সব এলাকায় আন্দোলন শিথিল করার কিছু নেই। কারণ এমন নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক নির্বাচন নয়। এখানে দল থেকে একজনকে সমর্থন করা হয় মাত্র।’

রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘সরকার যদি তিন সিটি করপোরেশনকে বিএনপির জন্য ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে সে ফাঁদে তারাই পা দেবে। ধারণা করা হচ্ছে বিএনপিকে আন্দোলন থেকে সরাতে সরকারের এটা একটি নতুন চাল। কিন্তু তাতে লাভ হবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি এখনো আনু্ষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ম্যাডাম সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবেন। আমি যতটুকু জেনেছি, বিএনপির যেসব শীর্ষ নেতা রাজবন্দী হিসেবে আছেন তাদের মধ্য থেকেই এ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা। আবার মাঠের অনেক নেতাকর্মীও হয় জেলে না হয় কারাগারে রয়েছেন। প্রথমত, এ নির্বাচনে যেসব রাজবন্দী প্রার্থী হবেন তাদের মুক্তির ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, যারা হুলিয়া নিয়ে পলাতক রয়েছেন তাদেরও নির্বাচনে ক্যাম্পেনিংয়ের সুযোগ দিতে হবে; আর তখনই কেবল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘এতকিছুর পরও একটি কথা থেকে যায়, সেটা হলো দেশের অধিকাংশ সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সরকার বিএনপির নির্বাচিত মেয়রদের বহিষ্কার করে তাদের মনোনীত ক্যাডারদের মেয়র পদে বসিয়ে রেখেছে। এতে ভবিষ্যতে ঢাকা বা চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হলে তাদের সঙ্গেও এমনটি করা হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়। সে হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া প্রায় একই কথা।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী আরও বলেন, ‘যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং তাতে যদি সরকার কোনো অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন স্থগিতও করে দেয়, তাহলে বিএনপির কোনো ক্ষতি নেই। বিএনপির আন্দোলন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দাবিতে নয়। সিটি নির্বাচন হলো কী হলো না, এ নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথা নেই। আর সিটি নির্বাচন দিলেই যে বিএনপিকে আন্দোলন থেকে সরে আসতে হবে— এমনটিও ভাবা ঠিক হবে না।’

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।