যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছেই। এর মধ্যে অরেগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ডে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে এক বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়। তবে কারা ওই গুলি চালিয়েছে, তা তাত্ক্ষণিক নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
এ ছাড়া স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার দুপুরে (বাংলাদেশ সময় শনিবার মধ্যরাতে) চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভের জন্য নিউ ইয়র্কের ইউনিয়ন স্কয়ার পার্কে জড়ো হতে শুরু করে ট্রাম্পবিরোধীরা। সেখান থেকে তাদের ম্যানহাটানে ট্রাম্প টাওয়ার অভিমুখে যাত্রার কথা রয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগোতেও বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে।
চলমান এই বিক্ষোভের মধ্যে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী অঙ্গীকার থেকে পিছু হটেছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘হেলথ কেয়ার বিল’ (ওবামাকেয়ার নামেও পরিচিত) বাতিল করার ঘোষণা দিলেও এখন বলছেন, সেটি বাতিল নয়, বরং পরিমার্জন করবেন। সেই সঙ্গে হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল কেলেঙ্কারির তদন্তেও গুরুত্ব না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এদিকে আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ট্রাম্প। এ জন্য গঠিত ক্ষমতা হস্তান্তর দলে (ট্রানজিশন টিম) ট্রাম্পের তিন সন্তানসহ পরিবারের চার সদস্যকে রাখা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে ট্রাম্পবিরোধী হাজার হাজার মানুষ। ‘ট্রাম্প আমাদের প্রেসিডেন্ট না’—এ স্লোগান নিয়ে গত শুক্রবার রাতেও বিক্ষোভ করেছে তারা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শুক্রবার রাতে মিয়ামি, আটলান্টা, ফিলাডেলফিয়া, নিউ ইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো, পোর্টল্যান্ড ও অরেগনে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৫০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমগুলো।
তবে বিক্ষোভকারীদের নিয়ে মন্তব্যের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ‘এই বিক্ষোভ অনুচিত এবং বিক্ষোভকারীরা ভাড়াটে।’ তবে এর কয়েক ঘণ্টা পর অন্য এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর যারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে, তারা দেশের প্রতি ভালোসাবা ও আবেগ থেকেই এমনটি করছে। আমাদের এই বিষয়টিকে ভালোবাসতে হবে। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই এবং গর্বিত হতে চাই।’
নির্বাচনী প্রচারণার সময় বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর মধ্যে ছিল প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হেলথকেয়ার বিল বাতিলের প্রতিশ্রুতি। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি খতিয়ে দেখতে তিনি একজন আইনজীবী নিয়োগ করবেন। কিন্তু ভোটে জেতার পরপরই এই দুই প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস টেলিভিশন চ্যানেলের ‘সিক্সটি মিনিটস’ নামের একটি অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। সাক্ষাৎকারটি আজ রবিবার প্রচারিত হওয়ার কথা। সেখানে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ওবামাকেয়ার’ বিলের বেশ কয়েকটি অংশ তাঁর ভালো লেগেছে। এ কারণে বিলটি বড়জোর সংশোধন করা হতে পারে। বাতিল হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। অথচ এই ট্রাম্পই নির্বাচনী প্রচারণায় ‘ওবামাকেয়ার’কে ‘বিপর্যয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
এদিকে হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি তদন্তে আইনজীবী নিয়োগ করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা এমন কোনো বিষয় নয় যে আমি এটার পেছনে অনেক সময় দেব। কারণ আমি জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, চাকরি ও সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে চাই।’
আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসে বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে ট্রানজিশন টিম গঠন শুরু হয়েছে। এই টিমের ১৬ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন ট্রাম্প পরিবারের চার সদস্য। এঁরা হলেন ট্রাম্পের মেয়ে ইভাংকা, দুই ছেলে এরিক ও ডোনাল্ড জুনিয়র এবং জামাতা জেয়ারড কুশনার। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি ও গার্ডিয়ান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।