২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক চোরা চালানের গডফাদার ফরিদ ফের সক্রিয়   ●  কক্সবাজার সমবায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে কবির, আফসেল ও রাশেলকে প্রতিনিধি মনোনয়ন।

বিদগ্ধ মুহাদ্দিস মাওলানা ছৈয়দ আকবর রহ. এর জীবন ও অবদান

হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর
মাওলানা ছৈয়দ আকবর রহ. কেবল একটি নাম বা একজন ব্যক্তি মাত্র নন ; ঈমানদীপ্ত একটি চেতনা, দ্বীনি আকাশের একটি নক্ষত্র, ইলমী বাগিচার একটি প্রস্ফুটিত ফুল। যিনি একাধারে একজন বিদগ্ধ আলিম, প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস, আদর্শ শিক্ষক, বিপ্লবী সমাজ সংস্কারক ও সফল অভিভাবক। সুন্নাতে নবভী স. এর প্রতি তিনি ছিলেন, অতীব যত্নবান; যিনি আকিবেরে দেওবন্দের বাস্তব নমুনা।  ইলমেদ্বীন আহরণ,  বিতরণ, ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের প্রচার- প্রসার ও সমাজ শুদ্ধিতে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে সারাটি জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি।
জন্মঃ
মাওলানা ছৈয়দ আকবর রহ. ১৯৪৯ইং সালে রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়নের আলী হোছাইন সিকদার পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম বদিউর রহমান, মাতা- মরহুমা আমির খাতুন। ৬ ভাই, ২ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
দ্বীনি শিক্ষা অর্জনঃ
ছোটবেলা থেকেই দ্বীনি শিক্ষা অর্জনে হযরতের প্রবল আগ্রহ ছিল। বাবা ভর্তি করিয়ে দিলেন ঐতিহ্যবাহী চাকমারকুল মাদ্রাসায়। সেখানে তিনি বিজ্ঞ ওস্তাদগণের তত্ত্বাবধানে জামাতে নাহুম পর্যন্ত পড়া-লেখা করেন। এ শিক্ষায়তনে তখনকার পরিচালক মাওলানা নুরুল হক রহ., মুহাদ্দিস মাওলানা ছৈয়দ আহমদ রহ. সহ বরেণ্য বুযুর্গানেদ্বীনের ছাত্রত্ব লাভ ও সান্নিধ্য গ্রহণে তিনি জীবনের প্রথম থেকেই পরম সৌভাগ্যের অধিকারী হন। জামাতে হাস্তুম থেকে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত দীর্ঘকাল তিনি আল-জামেয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় কৃতিত্বের সাথে পড়া-শোনা করেন। অবশ্য ১৯৭১ সালে তিনি জামেয়া আরবিয়্যাহ জিরিতে জামাতে কামেলাইন অধ্যয়ন করেন। সেই সুবাদে জিরির তৎকালীন পরিচালক প্রখ্যাত বুযুর্গ মাওলানা মুফতি নুরুল হক রহ. ও মাওলানা ওয়াহিদ রহ. এর ছাত্রত্ব লাভের সুযোগ পান। জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত বহু আধ্যাত্মিক মনীষী ও ওলামা-মশায়েখের কাছ থেকে উচ্চতর ইলমে দ্বীন হাসিল করেন। যাঁদের মধ্যে খতিবে আযম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ.,  শাইখুল আরব ওয়াল আযম আল্লামা হাজী ইউনুছ রহ., আল্লামা আমির হোছাইন (মীর সাহেব হুজুর) রহ., আল্লামা মুফতি ইব্রাহীম রহ., আল্লামা ইসহাক গাজী রহ.,  আল্লামা দানিশ রহ., আল্লামা মুফতি আবদুর রহমান রহ., স্ববিশেষ উল্লেখযোগ্য।
তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে রয়েছেন, জোয়ারিয়ানালা এমদাদুল উলূম মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুল্লাহ তাজ, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মুহাদ্দিস মাওলানা হাফেজ এমদাদুল হক, মাসিক আত্-তাওহীদের সাবেক সম্পাদক মাওলানা হাফেজ আনোয়ার সাহেব রহ., চকরিয়া ইমাম বোখারী মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আবদুর রহিম বোখারী রহ.,  চাকমারকুল মাদ্রসার সাবেক মুহাদ্দিস মাওলানা আইয়ুব আনছারী রহ., পটিয়ার মীর সাহেব হুজুরের ছেলে মাওলানা হাফেজ কাসেম রহ., রাজারকুল আজিজুল উলূম মাদ্রাসার মরহুম সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আব্দুচ্ছালাম কদিম রহ., রামু ইসলামী সম্মেলন পরিষদের সাবেক সহ-সভাপতি মাওলানা নুরুল ইসলাম রহ., রাজারকুল সিকদার পাড়ার মাওলানা ছলিম উল্লাহ মনসুরী রহ., অবসরপ্রাপ্ত  শিক্ষক মাওলানা নুরুল হক প্রমূখ।
দ্বীনি শিক্ষাদানের খেদমতঃ
প্রাতিষ্ঠানিক লেখা-পড়া সমাপ্তির পর তিনি কুত্বে জামান আল্লাম মুফতি আজিজুল হক রহ. এর সাহেবজাদা মাওলানা হাফেজ মাহবুবুর রহমান রহ. পরিচালিত দোহাজারী আজিজুল উলূম মাদ্রাসায় দ্বীনি শিক্ষার খেদমতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা করেন। সেখানে দু’বছর শিক্ষকতার খেদমত আঞ্জাম দেওয়ার পর রুহানী মুরুব্বীগণের পরামর্শে কক্সবাজারের প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাকমারকুল দারুল উলূম মাদ্রাসায় যোগদান করেন। এই ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষায়তনে তিনি সুনামের সাথে তাফসীরে জালালাইন ও মুসলিম শরীফসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদীর দরস দান করেন। এছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম, শিক্ষা পরিচালক, ছাত্রাবাস তত্ত্বাবধায়ক, কোষাধ্যক্ষ পদেও তিনি বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। শারিরীক অসুস্থতা স্বত্ত্বেও জীবন সায়াহ্নকাল পর্যন্ত সাধ্যের অনুকূলে প্রবীণ  এ আলেমেদ্বীন দরসে হাদীসের খেদমতে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, আশির দশকের শুরুর দিকে কয়েক বছর তিনি রশিদনগর আশরাফুল উলূম মাদ্রাসায় শিক্ষকতার খেদমত আঞ্জাম দেন। পরবর্তীতে মুরুব্বীদের আগ্রহে তিনি চাকমারকুল মাদ্রাসায় প্রত্যাবর্তন করেন। এ বিষয়ে ২০/০৬/১৯৮৩ইং তারিখে হযরতের বড় ভাইতুল্য মুরুব্বী মরহুম মাষ্টার তাজুল মুলুক (মাওলানা হাফেজ আবদুল হক সাহেবসহ সাত জন হাফেজ ও আলেমের পিতা) কর্তৃক খতিবে আযম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ. সমীপে লিখিত একটি পত্রও আমার হস্তগত হয়েছে। যেখানে পত্র লেখক বেশ অনুরাগ নিয়ে মাওলানা ছৈয়দ আকবর সাহেব রহ. কে পুনরায় চাকমারকুল মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে খতিবে আযম রহ. এর সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কারণ তিনি আশাবাদী ছিলেন, মাওলানা ছৈয়দ আকবর রহ. খতিবে আযম রহ. এর একান্ত ছাত্র হিসাবে তাঁর কথা রাখবেন। হয়েছেও তাই। কর্মজীবনের অধিকাংশ  সময় তিনি এ দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্রে উৎসর্গ করেছেন। হযরতের বহু ছাত্র-শিষ্য দেশ-বিদেশে বিভিন্ন অঙ্গনে ইসলাম ও জাতির সেবায় নিবেদিত রয়েছেন। অনেকে কবরবাসীও হয়েছেন। মরহুমের ছাত্রদের মধ্যে চাকমারকুল মাদ্রাসার সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাওলানা এবাদুল্লাহ রহ., ফেনী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা হাফেজ জুনাইদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতাহারী, দৈনিক ইনকিলাবের কক্সবাজার আঞ্চলিক প্রধান শামসুল হক শারেক, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের এ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারী প্রফেসর ক্বাজী দীন মুহাম্মদ, বাংলাদেশ নেজাম ইসলাম পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব ও  কক্সবাজার জেলা আমীর মাওলানা হাফেজ ছালামতুল্লাহ, চাকমারকুল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতি কামাল হোছাইন,  রামু মাজহারুল উলূম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ হারুন, লেখক ও গবেষক মাওলানা আ.হ.ম নুরুল কবির হিলালী, চাকমারকুল দারুল উলূম মাদ্রাসার বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিকদার, শিক্ষক মাওলানা ছৈয়দ আহমদ, ধাওনখালীর মাওলানা আতাউল্লাহ, উম্মাহাতুল মুমিনীন র. বালিকা মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশন কক্সবাজার জেলা সভাপতি ও চাকমারকুল ইসলামী ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফেজ দেলোয়ার হোসাইন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
পারিবারিক জীবনঃ
পারিবারিক জীবনে তিনি একজন আদর্শ পিতা ও সফল অভিভাবক। তিনি ১৯৭৪ইংরেজীতে দক্ষিণ মিঠাছড়ি উমখালী নিবাসী মাওলানা রশিদ আহমদ রহ. এর মেয়ে, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন মাওলানা মুহাম্মদ রামুভীর প্রপৌত্রি রাজিয়া বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ চার সন্তানের জনক। বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ছৈয়দ আরমান দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে দাওরায়ে হাদীস ডিগ্রি লাভ করেন। অপর ছেলে, রামু লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহমদ ছৈয়দ ফরমান একজন সুশিক্ষিত তরুণ, মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি জনকল্যাণে লেখা-লেখি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
ইসলামী রাজনীতি ও সংগ্রামী অবদান:
মাওলানা ছৈয়দ আকবর সাহেব রহ. সরাসরি পদবীধারী না হলেও ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি সচেতন। বিশেষতঃ নিজের ওস্তাদ খতিবে আযম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ. এর মত দার্শনিক আলিম ও রাজনীতিবিদ ওলামা-মশায়েখের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি অনুপ্রাণিত। দ্বীন ও জাতির প্রয়োজনে শিক্ষক ও রুহানী মুরুব্বীগণের নির্দেশনায় ছাত্রজীবন থেকে যেকোন কর্মসূচীতে তিনি রাজপথে নেমে আসতেন। তিনি বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির চাকমারকুল ইউনিয়ন শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। শেষ জীবনে তিনি নেজামে ইসলাম পার্টি রামু উপজেলার উপদেষ্টা হিসেবে মুরুব্বীয়ানা করেন।
সমাজ শুদ্ধির খেদমতঃ
তরুণ বয়স থেকেই মাওলানা ছৈয়দ আকবর রহ. ছিলেন উদ্যমী, সাহসী ও সমাজ সংস্কারে প্রত্যয়ী।শিরক–বিদআতসহ যাবতীয় কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি নির্মূলে তিনি ছিলেন একজন নির্ভীক সিপাহসালার।আদর্শ সমাজ গড়ার লক্ষ্যে তরুণ যুবকদের সু-পথে সংগঠিত করার প্রয়াসে ১৯৮০ সালে তিনি গড়ে তুলেন পশ্চিম চাকমারকুল দারুল উলূম ইসলামী তরুণ সংস্থা নামে একটি সামাজিক সংগঠন। ০১/১১/১৯৮০ইং সনে সে সমাজ সেবামূলক সংগঠনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন লাভ করে। ১৯৮৬ইং সালে এলাকার কিছু যুবক যাত্রাগানের আয়োজনে উদ্যোগী হলে হুজুর তাদের সুন্দর নসিহতের মাধ্যমে তা থেকে বিরত রাখেন এবং তৎপরিবর্তে একটি মাহফিল আয়োজনে উদ্ধুদ্ধ করেন। এরই প্রেক্ষিতে কলঘর বাজার প্রতিষ্ঠালগ্নে ইসলামী যুবসমাজের ব্যানারে সর্বপ্রথম ইসলামী সম্মেলন আয়োজন করেন। বর্তমানে দু’দিনব্যাপী ঐতিহাসিক ইসলামী মহাসম্মেলন হুজুরের ইখলাসপূর্ণ প্রচেষ্টার সুফল। কলঘর বাজার ইসলামী সম্মেলন কমিটির ব্যানারে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসা এ ইসলামী মহাসম্মেলন ৮/১০বৎসর ধরে চাকমারকুল ইসলামী ঐক্যপরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে হুজুর এ ইসলামী মহাসম্মেলনের প্রধান অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। তিনি ছিলেন  চাকমারকুল ইসলামী ঐক্যপরিষদের প্রধান মুরুব্বী। এছাড়াও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রামু ইসলামী সম্মেলন পরিষদের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী ইসলামী সম্মেলনের সূচনা ও পরিচালনায়ও তিনি একনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। দ্বীনি ও সামাজিক অঙ্গনে হুজুরের  এরকম নিষ্ঠাপূর্ণ বহু অবদান রয়েছে। যা হুজুরের কীর্তিময় অবদান হিসেবে ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান হয়ে থাকবে।
ইন্তেকাল:
আমাদের অত্যন্ত দরদী অভিভাবক, কীর্তিমান  আলেমেদ্বীন  মাওলানা ছৈয়দ আকবর রহ. গত বছরের ২০ আগষ্ট ( বৃহস্পতিবার), বাদ মাগরিব ৬ টা ৫০ মিনিটে চাকমারকুল আলী হোসাইন সিকদার পাড়ার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়েসহ অসংখ্য ছাত্র-ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে যান।
উস্তাযুল আসাতিযা মাওলানা ছৈয়দ আকবর সাহেব হুজুর রহ. এর ইন্তেকালে জেলাজুড়ে নেমে এসেছিলো শোকের ছায়া।  হুজুরকে শেষ বারের মত একনজর দেখতে এবং নামাজে জানাযায় শরীক হতে নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন বিশিষ্ট আলেম-ওলামা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, মরহুমের ছাত্র-ভক্তসহ অসংখ্য মানুষ। ২১ আগষ্ট’২০ ইং ( জুমাবার)  সকাল সাড়ে ১০ টায় মরহুমের দীর্ঘ কর্মজীবনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র রামু চাকমারকুল জামেয়া দারুল উলুমের মাঠে  নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।  বিপুল সংখ্যক শোকার্ত তৌহিদী জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত বিশাল নামাজে জানাযায় ইমামতি করেন, মরহুমের বড় ছেলে, বিশিষ্ট আলিম মাওলানা মোহাম্মদ ছৈয়দ আরমান।
জানাযার পূর্বে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল, রামু জোয়ারিয়ানালা এমদাদুল উলুম মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা  হাফেজ আবদুল হক, মরহুমের বিশিষ্ট ছাত্র বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব ও কক্সবাজার জেলা আমীর মাওলানা হাফেজ ছালামতুল্লাহ, চাকমারকুল মাদ্রাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা মুফতি ফিরোজ আহমদ, জেলা হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইয়াছিন হাবিব, কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল হক কোম্পানী, চাকমারকুল ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার,  চাকমারকুলের সাবেক চেয়ারম্যান মুফিদুল আলম, মরহুমের ভাতিজা, ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদ, মরহুমের ছেলে ও রামু লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহমদ ছৈয়দ ফরমান, ইসলামী ছাত্রসমাজ নেতা হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর,  চাকমারকুল ইসলামী ঐক্যপরিষদের সভাপতি মাওলানা হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ পর্ব সঞ্চালনা ও সমন্বয় করেন,  চাকমারকুল মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মরহুমের একান্ত ছাত্র চাকমারকুল ইসলামী  ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফেজ দেলোয়ার হোসাইন।
 নামাজে জানাযা শেষে চাকমারকুল আলী হোসাইন সিকদার পাড়া কবরস্থানে মরহুমকে দাফন করা হয়। ৭১ বছরের জাগ্রত এ মনীষী আজ মাটির কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত। তিনি আমাদের মাঝে থেকে চিরবিদায় নিয়ে গিয়েছেন; তবে রেখে গিয়েছেন  দীর্ঘ জীবনের বহু কীর্তি ও অবদান। এরকম গুণীজনদের জীবন-কর্ম আমাদের আদর্শিকপথ চলায় প্রেরণার সঞ্চার করে। আমি ২০১৬ সালের শেষ দিকে প্রবীণ এ আলেমেদ্বীনের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহের নিমিত্তে তাঁর সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হই। তিনি আমাকে চাকমারকুল মাদ্রাসার সাবেক শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মদ শফী রহ. এর ( বোনের ঘরের) নাতী হিসেবে খুবই স্নেহ করতেন। সেই সাথে আকাবিরে দেওবন্দের হাতে গড়া সংগঠন নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইসলামী ছাত্রসমাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণেও আমাকে অধিক মুহাব্বত করতেন। এছাড়াও আমি যেহেতু হুজুরের অভিভাবকত্বে দীর্ঘকাল ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা রামু কলঘর বাজারের ঐতিহাসিক ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রতিবছর সঞ্চালনার দায়িত্ব থাকি, সে সুবাদে বরেণ্য এ আলেমেদ্বীনের সাথে সম্পর্কের সেতুবন্ধন আরও সুসংহত হয়। ফলে হুজুরের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে তিনি অতিশয় আনন্দিত হন, গভীর মমতায় কাছে ডেকে বসান, হৃদ্যতাপূর্ণ মেহমানদারী করেন এবং আমার প্রশ্নাবলীর আলোকে নিজের জীবনের নানাপর্বের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত প্রদান করেন। সেদিন হুজুরের  কাছ থেকে সরাসরি প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর জীবন-কর্ম ও অবদানের ওপর এ লেখাটি রচনা করি।
দেখতে দেখতে প্রবীণ এ মুহাদ্দিসের ইন্তেকালের এক বছর পূর্ণ হয়ে গেলো। আমরা দু’আ করি আল্লাহ তা’আলা মরহুম বিদগ্ধ এ মুহাদ্দিসকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মকাম নসীব করুন।  আর বর্তমানে জীবিত বুযুর্গ মুরুব্বীদের ছায়া আমাদের উপর উত্তরোত্তর দীর্ঘায়িত করুন। ॥ আমিন॥
লেখক:
কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
কক্সবাজার ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।