২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

বিদেশ থেকে ইয়াবা ব্যবসায় অর্থায়ন!

কক্সবাজারসময় ডেস্কঃ বাংলাদেশে ইয়াবা ব্যবসার অর্থায়ন হচ্ছে বিদেশ থেকে। ব্যবহার হচ্ছে নৌপথ। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান গভীর সমুদ্রে হস্তান্তরের পর তা চলে আসছে বাংলাদেশি এজেন্টদের কাছে। সেখান থেকে মাছধরার ট্রলারে উপকূলীয় অঞ্চলে আনা হচ্ছে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে নৌপথে ইয়াবার ওই চালান পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়।

পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ইয়াবার চালান আনতে ক্রমাগত রুট পরিবর্তন করছে চোরাকারবারিরা। একটি চক্র বিদেশ থেকে ইয়াবা চোরাচালানে বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিচ্ছে। এর মূলহোতাকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

মঙ্গলবার ভোরে আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অভিযান চালিয়ে প্রায় আট লাখ পিস ইয়াবাসহ তিন চোরাকারবারিকে আটক করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। উদ্ধার হওয়া ইয়াবার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে বরগুনা থেকে আসা সপ্তবর্ণা নামের একটি লঞ্চ থেকে পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার পিস ইয়াবাসহ তুহিন হোসেন (২৫) ও সবুজকে (২৬) আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুপুরে আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একই চক্রের শাহজাহানকে (৩৫) তিন লাখ ৪৯ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ওই চক্রে আট থেকে ১০ জনের একটি গ্রুপ ইয়াবা চালানে জড়িত, যারা প্রায় দেড় বছর ধরে এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তারা নিয়মিত ইয়াবার চালান আনতে রুট পরিবর্তন করে। গভীর সমুদ্রে মিয়ানমার-বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় ইয়াবাগুলো হস্তান্তর করে মিয়ানমারের নাগরিকরা। এরপর যন্ত্রচালিত মাছধরার ট্রলারে করে সেগুলো নিয়ে আসা হয় পাথরঘাটা-পটুয়াখালী-পিরোজপুরসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায়।

সেখান থেকে চালানটি একাধিক ভাগে ভাগ করে নৌপথে কিংবা সড়কপথে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। একাধিক ভাগে চালান নিয়ে আসার কারণ, একভাগ ধরা পড়লেও অন্যটি যেন সুরক্ষিত থাকে।

ইয়াবার ওই বড় চালান ঢাকায় আনার জন্য দুটি ট্রলার ভাড়াও করে চক্রটি। ভুট্টা কিংবা তরমুজের আড়ালে চালানটি বহন করার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় একভাগ লঞ্চে করে এবং অন্যভাগ সড়কপথে আনা হচ্ছিল।

র‌্যাবের ঊর্দ্ধতন ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, চালানটি ঢাকার একটি অভিযাত এলাকার একজনের ভাড়া বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে ইয়াবাগুলো বিভিন্ন স্থানে বন্টন করে দেয়া হতো। বাসাভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে তারা অভিজাত এলাকা বাছাই করতো এবং প্রতি চালানের পর তারা বাসা পরিবর্তন করতো। তবে তদন্তের স্বার্থে সেই এলাকা এবং বাসার মালিকের পরিচয় প্রকাশ করা হলো না।

ইয়াবার চালানের বড় একটি অর্থ বিদেশ থেকে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, ধৃতদের কাছ থেকে ইয়াবা ব্যবসায় বিদেশ থেকে অর্থায়নের তথ্য আমরা পেয়েছি। চক্রের মূলহোতাকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

চক্রটি গত এক বছরে নৌপথে ৫-৬ টি চালান ঢাকায় এনেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। প্রতি চালানে ৫-৭ লাখ ইয়াবা ছিল বলেও জানান তিনি।

এত তৎপরতার মধ্যেও ইয়াবার এ বৃহৎ চালান প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদকের চালান রোধে আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছি। অন্যান্য বাহিনীও তৎপর রয়েছে। সে কারণে টেকনাফ-কক্সবাজার রুটে ইয়াবার চালান আনা একটু কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা ল্যান্ডিং স্টেশনগুলো পরিবর্তন করছে। ইয়াবা নামানোর জন্য তাদের কোনো বন্দরের প্রয়োজন হয় না, পুরো উপকূলীয় এলাকাই তাদের ল্যান্ডিং স্টেশন।

‘আমাদের বিশাল উপকূলীয় এলাকা, এটা পরিপূর্ণ সূরক্ষা দেয়া কষ্টসাধ্য। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া সমুদ্রে লাখ লাখ মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কোন ট্রলারে ইয়াবা আছে- সেটা শনাক্ত করাও কঠিন।’

গডফাদারদের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের এ অভিযানকে তালিকায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। তালিকার বাইরেও যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কম সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেক নতুন মুখ এখানে যুক্ত হচ্ছে। হাতও বদল হচ্ছে অনেক।

গত বছরের ৩ মে থেকে এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে ১৯ হাজার ৩৭৯ মাদককারবারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময়ে উদ্ধার করা হয় ৪৫০ কোটি টাকার মাদক। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আট হাজার ৫৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান এবং প্রায় ১২ কোটি টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।